• তৃণমূলে যোগ দিয়ে বুঝেছি চামড়া মোটা না হলে রাজনীতি হবে না: সৌরভ
    আনন্দবাজার | ২২ জুন ২০২৫
  • প্রশ্ন: এখন তো শুধুই বড় পর্দায় অভিনয় করছেন। ওয়েব সিরিজ়ের কাজ কি একেবারে বন্ধ করে দিলেন?

    সৌরভ: হ্যাঁ। দেড় বছর হল ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করিনি।

    প্রশ্ন: এক সময় তো একচেটিয়া প্রায় সব সিরিজ়েই আপনাকে দেখা যেত। হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত নিলেন?

    সৌরভ: সেই! এক সময় বলা হত ‘সিরিজ় কিং’। আসলে যেমন সিরিজ় আমার পছন্দ, সেই ধরনের বিষয় পাচ্ছি না বা আমায় ডাকা হচ্ছে না। বুঝতে পারছি, সিরিজ়ের গল্পের ধরনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সেই পরিবর্তনের সঙ্গে হয়তো আমাকে মানাচ্ছে না কিংবা আমি মানিয়ে নিতে পারছি না। তাই বন্ধ রেখেছি সিরিজ়ে অভিনয় করা। তবে ছোটবেলা থেকে ছবিতে অভিনয় করতেই চেয়েছিলাম। সেটা হচ্ছে। তাই অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই আমার।

    প্রশ্ন: কোনও বড় প্রযোজনা সংস্থা সৌরভকে ডাকছে না?

    সৌরভ: বড় প্রযোজনা সংস্থাগুলো এখন কি আর অনেক ছবি তৈরি করছে? তবে আমি মিথ্যে বলছি না। সত্যিই বড় প্রযোজনা সংস্থা আমায় এখন ডাকছে না। হয়তো আমায় দেওয়ার মতো চরিত্র তৈরি হচ্ছে না।

    প্রশ্ন: তার মানে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ঠিক রাখতে পারছেন না? যার পোশাকি নাম ‘পিআর’।

    সৌরভ: আমার জনসংযোগ (পিআর) কোনও দিন ভাল ছিল না। ওয়েব সিরিজ়গুলো চলত তাই তখন কাজ পেতাম। আর এ ভাবেই প্রক্রিয়া চলা উচিত। একসঙ্গে হাঁটতে যাচ্ছি সকালে, বিকেলে একসঙ্গে কফি খাচ্ছি— এই সুবাদে কাজ পাওয়া কখনও উচিতই নয়। এই ভাবনাই ভুল।

    প্রশ্ন: কিন্তু যে ছবিগুলোতে অভিনয় করছেন, সেখানে আপনার অভিনীত চরিত্র নিয়ে খুব যে আলোচনা হচ্ছে তেমনও তো নয়!

    সৌরভ: হ্যাঁ, সেটা এখনও পর্যন্ত হয়নি। কিন্তু এটা ভাবার কারণ নেই যে ভবিষ্যতে হবে না। যাঁরা অভিনেতা হিসাবে সুনাম পেয়েছেন তাঁদের যে সব কাজ রমরমিয়ে চলেছে তা নয়। অনেককেই বহু বছর ধরে ‘স্ট্রাগল’ করতে হয়েছে। সেগুলোই হল তাঁদের সাফল্যের সিঁড়ি। আমার ক্ষেত্রেও হয়তো তাই। এই যে ‘মৃগয়া’ মুক্তি পাবে। হয়তো আমার অভিনীত খলচরিত্র নিয়ে আলোচনা হবে। আশা তো ছাড়তে পারি না। এই ছবিটা দেখার পর বড় প্রযোজনা সংস্থা থেকে আমায় ডাকবে হয়তো। আলোচনা হচ্ছে না ভেবে ভেঙে পড়ব তা তো হয় না।

    প্রশ্ন: ‘মৃগয়া’ ছবিতে আপনার চেহারা ভয়াল। স্ত্রী দর্শনা বণিক আপনাকে দেখে কী বলেছিলেন?

    সৌরভ: দর্শনা সামনাসামনি আমায় এই অবস্থায় দেখেনি। যা ভয়ানক চেহারা, ও দেখলে সত্যিই ভয় পেত! বাড়িতে ঢোকার আগে সব মুছে হয়তো ঢুকতে হত।

    প্রশ্ন: কাজ নিয়ে আলোচনা না হলে খারাপ লাগে? হতাশ লাগে?

    সৌরভ: দিনের শেষে এই হতাশা অনেকের ক্ষেত্রেই কাজে দেয়।

    প্রশ্ন: হতাশা কাটানোর উপায় কী?

    সৌরভ: বাড়ি ফিরে দর্শনার সঙ্গে সবটা আলোচনা করি। খারাপ লাগা, ভাল লাগা—সব কিছু নিয়ে কথা হয়। তবে অবশ্যই রোজ নয় সেটা। কারণ, প্রতি দিন যদি হতাশা নিয়ে আলোচনা করি তা হলে নেতিবাচকতা চেপে ধরবে। দর্শনাও ওর মনের কথা খুলে বলে আমায়।

    প্রশ্ন: এর মাঝে তো নতুন ব্যবসাও খুললেন। এই ঝুঁকি নিলেন কেন?

    সৌরভ: ঝুঁকি না নিলে বড় হওয়া সম্ভব নয়। আর মধ্যবিত্ত হয়ে আমি বাঁচতে চাই না।

    প্রশ্ন: কিন্তু ব্যবসা যদি না চলে?

    সৌরভ: চেষ্টা করতে তো কোনও ক্ষতি নেই। শেষ বয়সে গিয়ে বলতে তো পারব আমি ঝুঁকি নিয়েছিলাম। চেষ্টা করতে করতেই সাফল্য আসে।

    প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে সৌরভ দাস তো প্রেমিক মানুষ নামেই পরিচিত ছিলেন। বিয়ের পরেও কি তেমনই আছেন?

    সৌরভ: আমার তো মনে হয় আছি। তবে দর্শনা সঠিক ভাবে বলতে পারবে।

    প্রশ্ন: আর কতটা সংসারী হলেন?

    সৌরভ: নিজের ঢাক নিজে পেটাব?

    প্রশ্ন: ইচ্ছা হলে পেটাতেই পারেন।

    সৌরভ: আমার মনে হয় এ ক্ষেত্রে দশে সাত পাওয়ার যোগ্য।

    প্রশ্ন: এখন কি সৌরভ সুন্দরীদের সঙ্গে ‘ফ্লার্ট’ করেন?

    সৌরভ: না, না। এখন ও সব করলে চাপ। একটা কথা আমি বিশ্বাস করি, আমার সঙ্গী এটা করলে কি ভাল লাগবে? এই প্রশ্ন নিজেকে করি। যদি সেটা আমার ভাল না লাগে তা হলে আমারও তেমন কিছু করা উচিত নয় যা স্ত্রীকে কষ্ট দেবে।

    প্রশ্ন: সম্প্রতি ইন্ডাস্ট্রিতে ‘চুক্তির বিয়ে’ নিয়ে খুব আলোচনা শুরু হয়েছে।

    সৌরভ: সত্যিই চুক্তির বিয়ে নিয়ে কোনও ধারণা নেই আমার। এখনও পর্যন্ত প্রযোজকের সঙ্গে চুক্তিতে যাইনি আমি। বিয়ের কথা তো ছেড়েই দিলাম।

    প্রশ্ন: সম্প্রতি বিবেক অগ্নিহোত্রীর ছবি ‘বেঙ্গল ফাইল’-এ অভিনয় করছেন। এমনিতে পরিচালককে নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে...

    সৌরভ: বিতর্ক দেখা আমার কাজ নয়। আর ছবির পুরো চিত্রনাট্যও আমাদের দেওয়া হয়নি। যেটুকু আমার চরিত্র সেটুকু চিত্রনাট্যই হাতে পেতাম। তাই বাকি বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

    প্রশ্ন: কিন্তু এক সময় আপনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। এখন বিবেক অগ্নিহোত্রীর ছবিতে অভিনয় করছেন। একটা বিতর্কের গন্ধ কি পাচ্ছেন না?

    সৌরভ: ২০২১ সালে তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম। তার পর তিন থেকে চার বার হয়তো আমি প্রচারে গিয়েছি— বিধানসভা, লোকসভা ভোট মিলিয়ে। সেখানে কোনও টাকাপয়সার লেনদেন ছিল না। দলে যোগ দিয়েই বুঝে গিয়েছিলাম রাজনীতি আমার দ্বারা হবে না। কিছুই বুঝি না। রাজনীতিতে থাকতে গেলে চামড়া মোটা করতে হবে। সেটা বুঝেছিলাম।

    প্রশ্ন: আর রাজনীতিতে থাকতে চান না তার মানে?

    সৌরভ: না। একেবারেই রাজনীতিতে থাকতে চাই না আমি।

    প্রশ্ন: কিন্তু বিবেক অগ্নিহোত্রীর ছবিতে যাঁরা অভিনয় করেন ধরে নেওয়া হয় বেশির ভাগ অভিনেতাই বিজেপি মতাদর্শে বিশ্বাসী। সে ক্ষেত্রে কলকাতায় কাজ পেতে তো অসুবিধাও হতে পারে?

    সৌরভ: যেটা আমার হাতে নেই সেটা নিয়ে আমি ভাবি না। ছবিতে যে চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি তা খুব লোভনীয়। তাই রাজি হয়েছি। এটা আমার কাছে পরিষ্কার। কারণ, এই ছবিতে অভিনয় করে যে খুব বেশি পারিশ্রমিক পেয়েছি তা নয়। নিজের চরিত্র ছাড়া ছবির বিষয়বস্তু সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা নেই। হতে পারে পরিচালকের বিরুদ্ধে কোনও দল আছে। হতে পারে ‘প্রোপাগান্ডা’ ছবি বলে কারও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কিন্তু সবটাই তো তাঁরা ছবির নিরিখে দেখছেন। আমার চরিত্র কোনও দলকে গালিগালাজ করছে না। আমি নিজের চরিত্র নিয়ে আত্মবিশ্বাসী।

    প্রশ্ন: ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে ডাকা হলে তা হলে আপনি যাবেন?

    সৌরভ: হ্যাঁ, নিশ্চয়ই যাব। ধরুন হিটলারের চরিত্রে আমি অভিনয় করছি। এই চরিত্রে অভিনয় করা মানে তো এটা নয় যে, আমি নাৎসিবাদী হয়ে গেলাম। সৃজনশীলতা আর রাজনীতিকে গুলিয়ে ফেললে খুব মুশকিল।

    প্রশ্ন: সম্প্রতি দর্শনার মা হওয়া নিয়ে বিপুল আলোচনা হচ্ছিল...

    সৌরভ: হ্যাঁ, দর্শনার থেকে শুনলাম। আকাশ থেকে পড়েছি। এখন এমন কোনও পরিকল্পনাই আমাদের নেই। দর্শনাকে বিয়ের আগেই বলেছিলাম আমায় বিয়ে করছিস, জীবনে কিন্তু অনেক বিতর্ক তৈরি হবে।

    প্রশ্ন: আর কি ধারাবাহিকে ফিরতে চান?

    সৌরভ: ছোট পর্দা থেকেই তো আমার অভিনয় জীবনের শুরু। ধারাবাহিক করব না, এ কথা বলতে চাই না। কিন্তু এই মুহূর্তে সে কথা ভাবছি না। কারণ, সদ্য প্রযোজনা সংস্থা খুলেছি। কী কী কাজ করব, না করব সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে। ওই দিকে মন দিতে চাই।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)