বর্ষা শুরু হতে না হতেই ডেঙ্গির ‘থাবা’! মৃত্যু সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়ার
আনন্দবাজার | ২২ জুন ২০২৫
বর্ষা শুরু হতে না হতেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল সপ্তম শ্রেণির এক পড়ুয়ার। শনিবার সকালে তপসিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যায় সারণি বন্দ্যোপাধ্যায় (১৩) নামে ওই ছাত্রী। তার ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গির উল্লেখ রয়েছে।
দমদম পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের মনুজেন্দ্র দত্ত রোডের বাসিন্দা সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় ও গীতিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একমাত্র সন্তান সারণি গত সপ্তাহে জ্বরে আক্রান্ত হয়। প্রথমে স্থানীয় এক চিকিৎসক তার চিকিৎসা করেন। বিভিন্ন পরীক্ষাও করানো হয়। তবু জ্বর না কমায় অন্য এক চিকিৎসককে দেখানো হয়। তাঁরই পরামর্শে ডেঙ্গি পরীক্ষা করানো হয়। রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। চলতি সপ্তাহে সারণিকে দক্ষিণ দমদম পুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে উন্নতির বদলে ক্রমশ ওই পড়ুয়ার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সারণিকে আইসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়। এর পরে ১৯ জুন তপসিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করানো হয় বলে জানান গীতিকা। সেখানে শনিবার ভোরে সারণির মৃত্যু হয়। ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গির উল্লেখ রয়েছে।
সারণির বাবা একটি সংস্থায় কর্মরত। মা গীতিকা নিজেই পুরসভার ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজে যুক্ত। শান্ত স্বভাবের সারণির এমন পরিণতিতে পাড়ায় শোকের ছায়া নেমেছে। পরিবারের কেউই ঠিক মতো কথা বলার অবস্থায় নেই। যদিও তাঁদের অভিযোগ, দক্ষিণ দমদম পুর হাসপাতালে ঠিক মতো চিকিৎসা হয়নি সারণির। হলে তার এমন পরিণতি হত না। ওই হাসপাতাল সময় মতো অন্যত্র ‘রেফার’ করেনি বলেও অভিযোগ তাঁদের। সারণির মা জানালেন, তপসিয়ার হাসপাতাল তাঁদের জানিয়েছে, সারণিকে সেখানে নিয়ে যেতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। তার ফুসফুসে জল জমে গিয়েছিল। মৃতার এক আত্মীয় বলেন, ‘‘পুর হাসপাতাল ঠিক মতো চিকিৎসাই করেনি। ওদের পর্যাপ্ত সহযোগিতাও মেলেনি। এমন যেন আর কারও ক্ষেত্রে না ঘটে।’’ যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ দক্ষিণ দমদম পুর কর্তৃপক্ষ। পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) সঞ্জয় দাসের দাবি, ‘‘হাসপাতাল যথাসম্ভব চেষ্টা করেছে। আরও আগে সেখানে ভর্তি করালে ভাল হত। অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না, ক্রমশ অবনতি হচ্ছিল। সেই সময়ে ওর আরও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল বলে মনে হয়।’’
সারণির মা গীতিকা নিজে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজ করেন। তাই তাঁর মেয়ের এমন পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি মিতা চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, সারণির যে জ্বর হয়েছিল, সে বিষয়ে তিনি পরে জানতে পেরেছেন। শুক্রবার তিনি হাসপাতালে ওই ছাত্রীকে দেখতেও যান। মিতার দাবি, তাঁর ওয়ার্ডে অতীতেও ডেঙ্গির প্রকোপ তেমন দেখা যায়নি। এ বারেও নেই। তাই কী ভাবে, কোথা থেকে এমন হল, বোঝা যাচ্ছে না। স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকা মোটামুটি পরিষ্কার থাকলেও ওই পড়ুয়ার বাড়ির কাছে একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির ভিতরে জমা জল দেখা গিয়েছে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সারণি সম্প্রতি তার পরিবারের সঙ্গে শহরের বাইরে গিয়েছিল। তাই কোথা থেকে সংক্রমণ ঘটল, তা নিয়ে খানিকটা ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে, স্থানীয় বাসিন্দারাও বলছেন, দক্ষিণ দমদম পুর হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নত করা প্রয়োজন। দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান হরিন্দর সিংহ জানান, ডেঙ্গিতেই মৃত্যু হয়েছে সারণির। যদিও তাঁর দাবি, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে বছরের গোড়া থেকেই লাগাতার কাজ চলছে। চলতি বছরে তেমন ভাবে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা যায়নি। তাই কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাঁদের তরফে।