নদিয়ায় গাড়ির ভিতর বস্তা খুলতেই বেরিয়ে এল বিরল প্রজাতির চারটি সোনালি বাঁদর! দাম কয়েক কোটি টাকা
আনন্দবাজার | ২২ জুন ২০২৫
উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে নদিয়া হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাচারের আগে উদ্ধার বিরল প্রজাতির চারটি সোনালি বাঁদর। গ্রেফতার করা হয়েছে ছয় পাচারকারীকে। শুক্রবার গভীর রাতে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থানার বিশেষ অভিযানে এই পাচার চক্রের সন্ধান মেলে। উদ্ধার হওয়া বিরল প্রজাতির সোনালি বাঁদরগুলির বাজার মূল্য প্রায় কয়েক কোটি টাকা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপন সূত্র মারফত তাদের কাছে খবর আসে, শুক্রবার রাতে বেলডাঙা সংলগ্ন ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে বিরল প্রজাতির ‘গোল্ডেন মাঙ্কি’ পাচার করা হবে। বেলডাঙা থানা এলাকার বেশ কয়েক জায়গায় জাতীয় সড়কে নাকা চেকিং শুরু হয়। সন্দেহ হওয়ায় দু’টি গাড়িকে দাঁড় করিয়ে চালকদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। তল্লাশি চলে গাড়ি দু’টিতে। গাড়ির ভিতরে বস্তা দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। বস্তা খুলতেই মেলে চারটি সোনালি বাঁদর। পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মিঠু দাস, টিটু দাস, সামিউল হোসেন বিশ্বাস, রফিকুল মণ্ডল, হাসিবুল মণ্ডল এবং বিশ্বজিৎ দাস নামে ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, এই পাচার চক্রের মূল পাণ্ডা নদিয়ার বাসিন্দা মিঠু। বাকি অভিযুক্তদের বাড়ি নদিয়ার চাপড়া এবং ভিমপুর থানা এলাকার বিভিন্ন গ্রামে। উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জ জেলার ফটাক পুকুর নামের একটি জায়গা থেকে বিরল প্রজাতির গোল্ডেন মাঙ্কিগুলি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল নদিয়া জেলার বিরহী গ্রামে। সেখান থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত হয়ে ওই প্রাণিগুলিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাচারের পরিকল্পনা ছিল ধৃতদের। এসডিপিও (বেলডাঙা) উত্তম কুমার গড়াই বলেন, ‘‘শুক্রবার গভীর রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বেলডাঙা থানার পুলিশের একটি দল ভাবতা রেলগেটের কাছে দু’টি বেসরকারি গাড়িকে আটক করে। এরপর গাড়ি দু’টিতে তল্লাশি চালাতেই সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে বিরল প্রজাতির চারটি সোনালি বাঁদর।’’
বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিরল প্রজাতির এই বাঁদর সিডিউল-১ তালিকা ভুক্ত। এই প্রাণিকে বাড়িতে বন্দি করে রাখা কিংবা চিড়িয়াখানায় রাখার অনুমতি নেই। ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ‘গোল্ডেন মাঙ্কির’ ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিম এশিয়ায় এক একটি গোল্ডেন মাঙ্কি চার থেকে পাঁচ কোটি টাকায় বিক্রি হয় বলে সূত্রের খবর। দক্ষিণ-মধ্য আফ্রিকা, উগান্ডা, কঙ্গোর ঘন জঙ্গলে এই প্রজাতির বাঁদরকে দেখতে পাওয়া যায়। অসমের মানস জঙ্গলে খুব কম সংখ্যায় রয়েছে এই বাঁদর।
পুলিশ সূত্রে খবর, আদালতের নির্দেশ এলেই উদ্ধার হওয়া বিরল প্রজাতির বাঁদরগুলিকে ‘কোয়ারেন্টাইন পিরিয়ডে’ রাখার জন্য আলিপুর চিড়িয়াখানায় পাঠানো হবে। সেখানে নির্দিষ্ট সময় কাটানোর পর তাদের অসমের মানস জাতীয় উদ্যানে ছেড়ে দেওয়া হবে।