• মুর্শিদাবাদে উদ্ধার বিরল প্রজাতির সোনালী বাঁদর, পুলিশের জালে ছয় পাচারকারী 
    আজকাল | ২২ জুন ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক:‌ উত্তরবঙ্গ থেকে নদিয়া জেলার একটি গোপন ডেরায় বিরল প্রজাতির সোনালী বাঁদর পাচার করতে গিয়ে শুক্রবার গভীর রাতে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থানার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হল ছয় জন পাচারকারী। তাদের হেফাজত থেকে উদ্ধার হয়েছে চারটি বিরল প্রজাতির সোনালী বাঁদর। আন্তর্জাতিক বাজারে উদ্ধার হওয়া সোনালী বাঁদরগুলোর মূল্য কয়েক কোটি টাকা। 

    বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনালী বাঁদরের যে প্রজাতিটি বেলডাঙা থানার পুলিশ উদ্ধার করেছে তা ভারতবর্ষে বিরল। পৃথিবীতে বাঁদরের যে প্রজাতিগুলো সর্বপ্রথম আবির্ভূত হয়েছিল সোনালী বাঁদর তার মধ্যে অন্যতম। মূলত দক্ষিণ–মধ্য আফ্রিকা, উগান্ডা, কঙ্গো সহ আরও কয়েকটি দেশের ঘন জঙ্গলের মধ্যে এই প্রজাতির বাঁদরকে দেখতে পাওয়া যায়। ভারতের কয়েকটি জঙ্গলেও খুব কম সংখ্যায় এদের অস্তিত্ব রয়েছে। ‘‌ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচারের’‌ তালিকায় অতি বিরল এই বাঁদর লাল তালিকাভুক্ত। এর পাশাপাশি ভারত সরকারের বনদপ্তরের ‘‌শিডিউল -১’‌ তালিকায় রয়েছে সোনালী বাঁদর। 

    এসডিপিও (বেলডাঙা)‌ উত্তম কুমার গড়াই বলেন, ‘‌শুক্রবার গভীর রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বেলডাঙা থানার পুলিশের একটি দল ভাবতা রেলগেটের কাছে দু’‌টি বেসরকারি গাড়িকে আটক করে। এরপর গাড়ি দু’‌টিতে তল্লাশি চালাতেই সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে বিরল প্রজাতির চারটি সোনালী বাঁদর।’‌ বিরল প্রজাতির এই বাঁদর পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেলডাঙা থানার পুলিশ মিঠু দাস, টিটু দাস, সামিউল হোসেন বিশ্বাস, রফিকুল মণ্ডল, হাসিবুল মণ্ডল এবং বিশ্বজিৎ বাগ নামে ছ’‌জন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। 

    এসডিপিও বলেন, ‘‌প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে এই চক্রের মূল পাণ্ডা নদিয়ার রানাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মিঠু দাস। বাকি অভিযুক্তদের বাড়ি নদিয়া জেলার চাপড়া এবং ভীমপুর থানার বিভিন্ন গ্রামে।’‌ প্রাথমিক তদন্তে আরও জানা গিয়েছে উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জ জেলার ফাটাপুকুর নামে একটি জায়গা থেকে নদিয়া জেলার বিরহী গ্রামে বিরল প্রজাতির সোনালী বাঁদর পাচার করা হচ্ছিল। 

    জেলা পুলিশের আর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, বিরল প্রজাতির এই বাঁদর বনদপ্তরের শিডিউল–১ তালিকাভুক্ত হওয়ায় ভারতবর্ষের কোনও নাগরিক নিজের ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানায় বা বাড়িতে এই বাঁদর রাখতে পারেন না। পুলিশের অনুমান বিরল প্রজাতির এই বাঁদর মধ্যপ্রাচ্যের কোনও দেশ অথবা চীনে পাচার করার পরিকল্পনা ছিল। এই দেশগুলোতে বেশ কিছু লোকের বাড়িতে ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা থাকায় তারা পাচারকারীর কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে বিরল প্রজাতির প্রাণী কিনে নিজের বাড়িতে রাখেন। 

    এর পাশাপাশি পুলিশ আধিকারিকেরা আরও জানতে পেরেছেন, সোনালী বাঁদরের দেহের কিছু অঙ্গ–প্রত্যঙ্গের সঙ্গে মানুষের দেহের অঙ্গ–প্রত্যঙ্গের মিল থাকায় বেশ কিছু দেশে এই সমস্ত বিরল প্রজাতির প্রাণীকে নিয়ে গোপনে গবেষণা চালানো হচ্ছে। তাদের কারও হাতেও এই বিরল প্রজাতির প্রাণীগুলো পাচারকারীরা তুলে দিতে পারতেন বলে পুলিশের অনুমান। ধৃতদের মধ্যে এক জনের দশ দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন করে শনিবার বহরমপুর আদালতে পেশ করা হবে। ইতিমধ্যেই বিরল প্রজাতির এই বাঁদর উদ্ধারের ঘটনার খবর বনদপ্তরকে জানানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, আদালতের নির্দেশ এলেই উদ্ধার হওয়া বিরল প্রজাতির বাঁদরগুলোকে ‘‌কোয়ারেন্টাইন পিরিয়ডে’‌ রাখার জন্য আলিপুর চিড়িয়াখানায় পাঠানো হবে। এরপর সেখানে নির্দিষ্ট সময় কাটানোর পর তাদেরকে অসমের মানস জাতীয় উদ্যানে ছেড়ে দেওয়া হবে।
  • Link to this news (আজকাল)