• পথকুকুরদের নিয়মিত খাওয়াবে স্কুলগুলি, নির্দেশ রাজ্যের
    এই সময় | ২২ জুন ২০২৫
  • এই সময়: এখনও রাজ্যের বহু স্কুলে অভুক্ত অবস্থায় উপস্থিত হয় ছাত্রছাত্রীদের বড় অংশ। মিড ডে মিলের আওতায় আনা যায় না তাদের সবাইকে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের পথকুকুরদের অন্তত একবেলার খাওয়া নিশ্চিত করতে উদ্যোগী রাজ্য সরকার।

    সমগ্র শিক্ষা মিশন প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি নির্দেশিকা দিয়ে বাংলার সব জেলার শিক্ষা আধিকারিকদের জানানো হয়েছে, এ বার থেকে দুপুরের পরে স্কুল ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়মিত খাবার দিতে হবে পথকুকুরদের।

    এ কাজ পরিচালনার জন্য কাউকে দায়িত্ব দেবেন প্রধান শিক্ষক। এ ক্ষেত্রে ‘মিড ডে মিল’–এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকে নির্দিষ্ট করলেই ভালো হয়। কারণ, মিড ডে মিলের বেঁচে যাওয়া খাবারে এই ব্যবস্থা করার পক্ষপাতী সমগ্র শিক্ষা মিশন (আগে যা ‘সর্বশিক্ষা মিশন’ হিসেবে পরিচিত ছিল)।

    পাশাপাশি জেলার প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের অফিসারদেরও বলা হয়েছে, তাঁরা যেন সারমেয়দের স্টেরিলাইজ়েশন ও ভ্যাকসিনেশনের ব্যবস্থা করেন।

    অনেকেই নির্দেশিকাকে স্বাগত জানিয়েছেন। আবার অনেকে কিছু প্রশ্নও তুলেছেন। যেমন, এই ব্যবস্থা স্কুলগুলি করবে কী ভাবে? কারণ, যেখানে মিড ডে মিলের খাবার বেঁচে যায়, সেখানে না হল তা কুকুরদের দেওয়া হলে।

    কিন্তু কোথাও খাবার বাড়তি না হলে তো সরকারি তহবিলে হাত দিতে হবে! এমনিতেই মিড ডে মিলে এখন প্রাথমিকে পড়ুয়া–পিছু ৫.৪৫ টাকা এবং উচ্চ প্রাথমিকে ৮.১৭ টাকা বরাদ্দ। আর বাজারে একটা ডিমের দামই সাড়ে ছ’টাকা। তা হলে কুকুরদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা হবে কোন পথে?

    হাওড়ার তারাসুন্দরী বালিকা বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষিকা মোনালিসা মাইতির বক্তব্য, ‘আমরা এইট পর্যন্ত মিড ডে মিল দিতে পারি। অথচ ক্লাস নাইন, েটন, ইলেভেন–টুয়েলভের পড়ুয়ারাও অভুক্ত অবস্থায় স্কুল করে। মিড ডে মিলের বেঁচে যাওয়া খাবার এদের দেওয়া হলে কি আরও ভালো হয় না?’

    তাঁর সংযোজন, ‘কুকুরদের আমি খুবই ভালোবাসি। কিন্তু রোজ খাবার দেওয়া মানে দিনে দিনে ওদের সংখ্যা বাড়বে। ওরা স্কুলের কাছে ভিড় করবে। কাউকে যদি কোনও কুকুর কামড়ে দেয়, তখন তো নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।’

    তারা স্কুলের আশপাশে বর্জ্যত্যাগ করলে পরিষ্কার করবে কে, সে প্রশ্নও উঠছে। কলকাতার পার্ক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলছেন, ‘যা অবস্থা, তাতে কাকে এই দায়িত্ব দেবো জানি না!’

    এখন রাজ্যের অনেক প্রাথমিক স্কুলেই মাত্র একজন শিক্ষক। প্রায় ৫০ হাজার প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষাকর্মী নেই। এমনিতেই নিয়োগ না–হওয়ায় শিক্ষক–শিক্ষিকা অপ্রতুল। তার মধ্যে সুপ্রিম–রায়ে ২৬ হাজারের চাকরি চলে গিয়েছে।

    অভিভাবকদের সংগঠন ইউনাইটেড গার্ডিয়ান্স অ্যাসোসিয়েশন–এর রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, ‘অনেক স্কুলে মিড ডে মিল দেওয়ারই লোক নেই। তা হলে এ কাজ করবেন কে?’

    কুকুরপ্রেমীরা অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। ‘ডগ লাভার’ হিসেবে পরিচিত পরিচালক–অভিনেতা তথাগত মুখোপাধ্যায়ের মতে, এই ব্যবস্থা চালু হলে পড়ুয়ারাও সহমর্মিতার পাঠ পাবে।

    কিন্তু অন্যান্য সমস্যার সমাধান হবে কী ভাবে? তথাগতর কথায়, ‘কী ভাবে এটা কার্যকর হচ্ছে, তা সরকারের দেখা দরকার। যে পড়ুয়া–অভিভাবক–শিক্ষক–শিক্ষাকর্মীরা কুকুরপ্রেমী, তাঁদের নিয়ে টিম বানিয়ে কাজটা সুন্দর ভাবে করা যায়।’

    যদিও আইসার কলকাতার ডগ ল্যাবের বিজ্ঞানী অনিন্দিতা ভদ্রের প্রশ্ন, রবিবার বা অন্যান্য ছুটির দিনে কিংবা লম্বা ছুটির সময়ে কুকুরগুলি খাবে কোথায়? তাঁর কথায়, ‘কুকুরদের নিজের এলাকায় খাবার দিলেই ভালো।

    স্কুলে নির্দিষ্ট সময়ে খেতে দেওয়া হলে সে জন্য অল্প জায়গায় ওদের ভিড় হবে। খাবারের ভাগ নিয়ে ঝামেলাও হতে পারে। কুকুরের সংখ্যা হঠাৎ বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে স্কুল–প্রধানদের উদ্বেগ অমূলক নয়।’

    সমস্যা বা উদ্বেগ প্রসঙ্গে অবশ্য শিক্ষা দপ্তরের কোনওসদুত্তর পাওয়া যায়নি।

  • Link to this news (এই সময়)