এই সময়, কৃষ্ণনগর: পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক তাঁর বাবা এখন ইজ়রায়েলে। সে দেশের সঙ্গে ইরানের যখন সংঘর্ষ চলছে, তখন তাঁর বাবা ইজ়রায়েলের একটি হাসপাতালে ভর্তি, ভুগছেন কিডনির অসুখে।
এরই মধ্যে শনিবার তাঁর, মানে ওই কলেজছাত্রীর জীবিত অবস্থাতেই শ্রাদ্ধশান্তি হয়ে গেল নদিয়ায় তাঁর বাড়িতে। জীবিত মেয়ের শ্রাদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁর মা–কাকা–কাকিমা–জেঠা–জেঠিমারা মিলে।
মেয়ের ‘অপরাধ’ এই যে, প্রাপ্তবয়স্ক ওই ছাত্রী বাড়ির অমতে অন্য ধর্মের এক যুবককে বিয়ে করেছেন। নদিয়ার হাঁসখালি এলাকার গাজনা উত্তরপাড়ার ঘটনা। কিছু দিন আগে এ রকম ঘটনা ঘটেছিল মালদায়। সেখানে মেয়ে অন্য ধর্মের ছেলেকে বিয়ে করায় জীবিত মেয়ের শ্রাদ্ধ করেছিলেন তাঁর বাবা।
নদিয়ার কলেজছাত্রী গত মঙ্গলবার, ১৭ জুন গভীর রাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। তার পর অন্য ধর্মের ওই যুবককে তিনি বিয়ে করেন বলে বাড়ির লোকজন জেনেছেন। মেয়ের এ বিয়ে মানতে না পেরে মা-সহ পরিবারের সদস্যরা জীবিত মেয়ের শ্রাদ্ধ করে তাঁর সঙ্গে চিরতরে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন।
এ দিন বাড়িতে পুরোহিত ডেকে মাথা নেড়া করে জীবিত ভাইঝির শ্রাদ্ধ করলেন তাঁর কাকা। পড়শিদের অনেকেই অবাক ওই ঘটনায়। ওই কলেজছাত্রীর বাবা অসুস্থ হয়ে ইজ়রায়েলের হাসপাতালে ভর্তি, তাই তাঁকে এ সব কিছু জানানো হয়নি বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে।
ওই ছাত্রীর কাকা বলেন, ‘আমার ভাইঝি প্রেমে পড়ে ফেব্রুয়ারি মাসেই বাড়ি ছেড়ে ওই ছেলেটার সঙ্গে চলে গিয়েছিল। ছেলেটা অন্য ধর্মের, তার উপর বিবাহিত। কিছু দিন পর আমরা ওকে বুঝিয়েসুজিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে এনেছিলাম।
তার পর মাস তিনেক ও বাড়িতেই ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে আমার ভাইঝি আবার পালাল ওই ছেলেটার সঙ্গে। শুনেছি, ওকেই ভাইঝি বিয়ে করেছে।’
কলেজছাত্রীর কাকার সংযোজন, ‘মেয়ে আমাদের সবার খুব প্রিয় ছিল। আর আমার তো খুবই আদরের। কিন্তু এত বার আমরা সবাই মিলে বোঝানোর পরেও ও যা করল, সেটা আমরা কেউই মেনে নিতে পারছি না।
ওর মা–কাকিমা–জেঠা–জেঠিমা–আমি সবাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, ওর সঙ্গে আর কোনও সম্পর্ক আমাদের নেই। তাই, সামাজিক প্রথা মেনে পুরোহিত ডেকে নিজে নেড়া হয়ে ওর শ্রাদ্ধশান্তি করেছি।’
কিন্তু জীবিত ভাইঝির শ্রাদ্ধ করতে খারাপ লাগল না? কষ্ট হলো না? ওই তরুণীর কাকা বলছেন, ‘কষ্ট মানে? বুকে কেউ পাথর দিয়ে ধাক্কা দিলে যেমন হয়, সে রকম কষ্ট হয়েছে। তবু আমরা ঠিক করেছি, ও যদি কোনও দিন বাড়িতে ফিরেও আসতে চায়, তা হলে আমরা ওর জন্য বাড়ির দরজা খুলব না।’
ওই ছাত্রীর এক কাকিমার বক্তব্য, ‘আমাদের ভালবাসা, বিশ্বাসে ও চরম আঘাত দিয়েছে। তাই, ও যাতে আর এ বাড়িতে ফিরতে না–পারে, তার জন্য ওর শ্রাদ্ধ করা হলো।’
ছাত্রীর মা এ দিন কান্নায় ভেঙে পড়েন, তবু তিনিও মেয়ের জন্য বাড়ির দরজা চিরতরে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
স্থানীয় খাটুরা হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুভাষ দাস বলছেন, ‘ভিন ধর্মের দু’জন মানুষের বিয়ের উদাহরণ তো দেশে কম নেই। জীবিত একটা মেয়ের এই শ্রাদ্ধশান্তির অনুষ্ঠান আমি সমর্থন করতে পারছি না।’
তৃণমূলের হাঁসখালি–২ সাংগঠনিক ব্লকের সভাপতি শিশির রায় বলেন, ‘কলেজপড়ুয়া মেয়েটি অন্য ধর্মের এক যুবককে বিয়ে করেছে বলে শুনেছি। সে তো নাবালিকা নয়। তার ব্যক্তিগত মতামত, স্বাধীনতা থাকাটাই স্বাভাবিক। জীবিত মেয়ের শ্রাদ্ধশান্তির অনুষ্ঠান অস্বস্তিকর।’