• বিপদ এড়াতে জলবন্দি অন্তঃসত্ত্বাদের ঠাঁই হলো মাদার্স-হাবে
    এই সময় | ২২ জুন ২০২৫
  • সমীর মণ্ডল, মেদিনীপুর

    শিলাবতী ও কেঠিয়ার বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায়। গড়বেতা ১, গড়বেতা ২, চন্দ্রকোণা ১, চন্দ্রকোণা ২, ঘাটাল, দাসপুর ও ডেবরা ব্লকের বহু এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।

    তাঁদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসতে না-পারলে যে কোনও মুহূর্তে বড়সড় বিপদ ঘটতে পারে! বিষয়টি ভাবিয়েছিল প্রশাসনের কর্তাদের। তারপরে তাঁরা আর দেরি করেননি।

    বুধবার রাত থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত চল্লিশ জনেরও বেশি অন্তঃসত্ত্বাকে নিয়ে আসা হয় জেলা ও ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ‘মাদার্স হাব’-এ। স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যে আট জন প্রসব করেছেন।

    মা ও সদ্যোজাত সকলেই সুস্থ। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সড়ঙ্গী বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মী, আশাকর্মী, এএনএম, জিএনএম— সকলের থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জরুরি ভিত্তিতে ওই অন্তঃসত্ত্বাদের নিয়ে আসা হয়। বেশ কয়েকজন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা হচ্ছে।’

    গড়বেতা ১ ব্লক থেকে পাঁচ জনকে উদ্ধার করে গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দু’জন প্রসব করেছেন। গড়বেতা ২ ব্লক থেকে একজনকে বাঁকুড়া হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

    ঘাটাল থেকে পাঁচ জন, চন্দ্রকোণা ১ ব্লক থেকে তিন জন, ডেবরা ব্লক থেকে তিন জন এবং ঘাটাল মহকুমার বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৫ জন অন্তঃসত্ত্বাকে ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ‘মাদার্স হাব’-এ রাখা হয়েছে।

    অন্তঃসত্ত্বাদের পরিবারের লোকজন প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তরের এমন পদক্ষেপে খুশি। তাঁদের কথায়, ‘প্রশাসন এই ব্যবস্থা না করলে জলমগ্ন গ্রামে বসে আমরা যে কত বড় বিপদে পড়তাম তা ভাবলেই শিউরে উঠছি।’

    ঘাটাল, চন্দ্রকোণা, দাসপুর, ডেবরা-সহ বেশ কিছু এলাকায় নৌকোই এখন একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের আগেভাগে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়াই একমাত্র সমাধান ছিল।

    প্রশাসন ঠিক সময়ে সেই কাজটিই করেছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, প্রসূতিদের বাড়ি ফেরাতে সরকারি নৌকোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

    গত বছরের বন্যা পরিস্থিতিতেও জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের এমন উদ্যোগ সফল হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বারেও সময় নষ্ট না-করে দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তর যৌথ ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সজাগ আছে। বন্যার জল না-নামা পর্যন্ত এই তৎপরতা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

    প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জলমগ্ন এলাকায় নৌকো, ডিঙি এবং স্পিডবোটে করে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ওষুধপত্র ও জরুরি সামগ্রী। বিভিন্ন হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অ্যান্টিভেনম-সহ অন্য জরুরি ওষুধপত্র মজুত রাখা হয়েছে।

  • Link to this news (এই সময়)