দিব্যেন্দু সরকার, আরামবাগ
দ্বারকেশ্বরের জল উপচে ঢুকে পড়েছে আরামবাগ শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁধপাড়া এলাকায়। বিপদের সম্মুখীন একাধিক পরিবার।
বাড়ির ভিতরেও জল ঢুকে যায়। এর ফলে, পানীয় জলের নলকূপ ও নলবাহিত পানীয় জলের কলগুলিও উপচে পড়া জলে ডুবে যায়। এই পরিস্থিতিতে মানুষজন বাড়ি ছেড়ে দ্বারকেশ্বরের বাঁধের উপরে ত্রিপল খাটিয়ে, তাঁবু করে অস্থায়ী ভাবে আশ্রয় নিয়েছেন।
যদিও বানভাসি মানুষজনের দাবি, তাঁদের ত্রাণের আশ্বাস দিয়েছে আরামবাগ পুরসভা। কিন্তু দু’দিন পার হয়ে গেলেও কিছুই পাননি তাঁরা। এখানকার বাঁধপাড়ার ৩০–৮০টি পরিবার বাঁধে ত্রিপল খাটিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। কাজকর্ম নেই।
তাই বেঁচে থাকার রসদটুকুও জোগাড় করতে পারছেন না তাঁরা। পুরসভার কাছে তাঁদের আবেদন, এই ক’টা দিন যাতে তাঁদের খাবার জোগান দেওয়া হয়, তা হলে পরিত্রাণ পাবেন তাঁরা। পুরসভার চেয়ারম্যান সমীর ভাণ্ডারী অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন বলেই জানান তাঁরা।
বৃষ্টি আর না হওয়ায়, শনিবার এলাকা থেকে জল কিছুটা হলেও নেমেছে। এর ফলে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছেন তাঁরা। কেউ কেউ বাঁধ থেকে নিজেদের ঘরে ফিরেছেন। জল বের করে ঘর গোছানোর কাজেই তাঁরা ব্যস্ত।
তবে আর বৃষ্টি না হলে, আগামী দু’এক দিনের মধ্যেই অবস্থার উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দ্বারকেশ্বরের জলও অনেকটা কমেছে। তবে কানায় কানায় বইছে জল। শনিবার এই ছবি দেখা গিয়েছে।
ডিভিসি থেকে প্রায় ৭৬ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়েছে। তাতে কিন্তু মুণ্ডেশ্বরী ও দামোদরের জল বাড়ার আশঙ্কা থাকছে। খানাকুলের বেশ কিছু অংশেও বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। আবার সেই জল দামোদর হয়ে আমতা, উদয়নারায়ণপুরে যাবে। সে ক্ষেত্রে সেখানেও বিপদের আশঙ্কা।
হাওড়া বা হুগলির বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সরকারি পর্যায়ে রীতিমতো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার আরামবাগে এসেছিলেন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব মণীশ জৈন। তিনি সরকারি ভাবে বৈঠক করেন।
এ দিন খানাকুলের মাড়োখানায় যান তিনি। শনিবার ফের আরামবাগে আসেন রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না। সঙ্গে ছিলেন জেলাশাসক মুক্তা আর্য, আরামবাগ এসডিও, এসডিপিও, বিধায়ক করবী মান্না, অসীমা পাত্র, রামেন্দু সিংহরায়-সহ সভাধিপতি কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা, জেলা পরিষদের কো মেন্টর শেখ হায়দর আলি, একাধিক কর্মাধ্যক্ষ–সহ অন্যান্য আধিকারিক।
এ দিনও প্রায় ঘণ্টা তিনেক বৈঠক করেন তাঁরা। বৈঠকে বলা হয়, যে কোনও প্রয়োজনে সবাই মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। এখানে কোনও দলাদলি নেই। নিছক মানুষের পাশে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আজ, রবিবার ফের আসছেন রাজ্যের পুর ও নগরেন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনিও খানাকুল, গোঘাট ও আরামবাগে যাবেন। গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন।
এ দিন বেচারাম মান্না, অসীমা পাত্ররা বলেন, ‘আমরা মানুষের জন্য এসেছি। রাজনীতি করতে আসিনি। দলমত নির্বিশেষে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান। আমরা সচেষ্ট আছি। এর পরে আমাদের নেতা, মন্ত্রী, মেয়র ফিরহাদ হাকিম আসছেন রবিবার। উনিও রিপোর্ট দেবেন নবান্নে। বন্যা পরিস্থিতি সামলাতে প্রস্তুত আমাদের সরকার।’