সুমন ঘোষ, ডেবরা
ফুল মার্কেট তৈরি করা হলো। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই ফুল মার্কেটের ভার্চুয়াল উদ্বোধনও করেন। কিন্তু দেখতে দেখতে চার বছর পার। এখনও চালু হলো না ডেবরা ফুল মার্কেট।
ডেবরার রঘুনাথপুরে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে নির্মিত ফুলের মার্কেট এবং স্টোর রুম পড়ে রয়েছে। যা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, এটি একটি ভুল পরিকল্পনার ফসল। ফলে এটি কখনও বাস্তবায়িত হবে কিনা সন্দেহ। অকারণে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করল সরকার।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা ব্লকের কিছু এলাকায় ফুল চাষ হয়। ডেবরার এক প্রান্তে দাসপুর ও অন্য প্রান্তে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়া। যেখানে ফুল চাষ বেশি হয়। ডেবরার ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীরা অন্য জায়গা থেকে ফুল নিয়ে এসে যাতে ব্যবসা করতে পারেন, সে জন্য ডেবরায় ফুলের মার্কেট তৈরি করার পরিকল্পনা নেয় সরকার।
ফুলের স্থায়ী দোকান, শেড ও গুদাম ঘর তৈরির জন্য ২০২০ সালে প্রায় ৬১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিস এবং হর্টিকালচর ডিপার্টমেন্ট। তা দিয়ে সারাদিন ব্যবসার জন্য ১১টি স্থায়ী দোকান ঘর তৈরি হয়।
এ ছাড়া তৈরি করা হয় তিনটি শেড। যেখানে শতাধিক খুচরো বিক্রেতারা সকাল, সন্ধে ফুল বিক্রি করতে পারবেন। অবিক্রিত ফুল রেখে যাওয়ার জন্য তৈরি করা হয় গুদাম ঘরও।
২০২০ সালের ৬ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ফুলের মার্কেট এবং স্টোর রুমের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন। কিন্তু এখনও সেই ফুলের বাজার চালু হয়নি।
ডেবরা, বালিচকে রাস্তার ধারে ফুল বিক্রি করেন বিক্রেতারা। গরমে রোদে কষ্ট হয়। বর্ষায় ভিজতে হয়। নেই শৌচাগারের সুবিধেও। তবু কেন নতুন ফুল বাজারে যাচ্ছেন না?
ফুল বিক্রেতা সুজয় পাল বলেন, ‘পথ চলতি মানুষের ভিড় থাকায় ফুল বিক্রি হয়ে যায়। তাই কষ্ট হলেও এখানেই বসি। নতুন ফুল মার্কেট অনেকটা ভিতরে। সেখানে কী কেউ ফুল কিনতে যাবে? তাই আমরাও যায়নি।’
একই মত ফুল বিক্রেতা শ্যামলি জানার। ডেবরা পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা তথা রতন দে বলেন, ‘যাতায়াতের জন্য বড় রাস্তা নেই। গাড়ি ঢুকবে না। অত দূরে মানুষ ফুলও কিনতে যাবে না। ফুল বাজারের পরিকল্পনাটাই ভুল।’
ডেবরা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি প্রদীপ কর বলেন, ‘রেলের জন্য এতদিন ফুলের বাজার চালু করা যায়নি। ফুল বাজারে যাওয়ার জন্য রাস্তা নির্মাণে বাধা দিয়েছিল রেল। রেলের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শেষে রাস্তা নির্মাণ করা গিয়েছে। শীঘ্রই ফুলের বাজার চালু করা হবে।’
কিন্তু বাজার থেকে দূরে গিয়ে মানুষ কী ফুল কিনবে? এর উত্তরে প্রদীপ বলেন, ‘বিক্রি না হওয়া ফুল রাখার জন্য গুদাম রয়েছে। শৌচাগার রয়েছে। বিক্রেতা ও ক্রেতা সকলেই সুন্দর পরিবেশ পাবেন। তা ছাড়া সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত ফুল কেনাবেচার সুযোগ থাকবে। বাজার চালু হলে নিশ্চয় মানুষ আসবেন।’
যদি সত্যিই বাজার না জমে ওঠে, তা হলে কী ৬১ লক্ষ টাকার সরকারি প্রকল্প এ ভাবেই পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকবে? প্রশ্নটা কিন্তু থেকে যাচ্ছে।