• ঝাড়খণ্ডের বর্ষণে জারি কমলা সতর্কতা, আজ ভারী বৃষ্টি বঙ্গে?
    এই সময় | ২২ জুন ২০২৫
  • এই সময়: শনিবার দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির দাপট অনেকটা কমলেও জলভাসি পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি। কারণ, ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টির দাপট বাড়ায় জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়িয়েছে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)।

    পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে জাতীয় সড়ক এমনিতেই জলের তলায় চলে গিয়েছিল শুক্রবার। শনিবার এই এলাকাগুলিতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এরই মধ্যে শুক্রবার বিকেলে ঝাড়গ্রামের লালগড় থানার বলরামপুর এলাকায় ক্ষুদিরাম পাতর (৫৫) নামে এক ব্যক্তি কংসাবতী নদীতে তলিয়ে যান।

    তিনি সাঁতার কেটে নদী পার হচ্ছিলেন। শনিবার রাত পর্যন্ত তাঁর খোঁজ মেলেনি। বৃহস্পতিবারও জলে তলিয়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের।

    শনিবার রাতে তেনুঘাট জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ কমিয়েছে ডিভিসি। যদিও, আজ রবিবার থেকে দক্ষিণবঙ্গে ফের বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে সতর্কবার্তা জারি করেছে হাওয়া অফিস।

    সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গে বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর।

    শুক্রবার রাত থেকে ৭০ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া শুরু করেছিল ডিভিসি। শনিবার সকাল ৭টা থেকে ৭০,৪৭৫ কিউসেক হারে জল ছাড়া হয় দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে। বিকেলে জল ছাড়ার পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৭,৮০০ কিউসেক।

    মাইথন জলাধার থেকেও ৭০ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়। ঝাড়খণ্ডের গালুডি জলাধার থেকে শুক্রবার এক দফায় ২ লক্ষ ৬৯ হাজার ২৫৬ কিউসেক জল ছাড়া হয়। এমনিতেই পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের অবস্থা বৃহস্পতিবার থেকেই খারাপ ছিল। শুক্রবার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়।

    ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বিহারের উপরে এই মুহূর্তে রয়েছে নিম্নচাপ। তার ফলে ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, ডিভিসি বেশি জল ছাড়তে শুরু করেছে। তার জন্য ডিভিসি-র তরফ থেকে কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

    প্রবল বর্ষণের জেরে জল বাড়ছে দামোদর-বরাকরে। ফলে নিম্ন দামোদর ও মুণ্ডেশ্বরীতে জলস্তর আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তা হলে প্লাবন পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা রয়েছে হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমানের একাধিক জায়গায়।

    এমনিতেই এলাকা জলমগ্ন। তার উপরে পশ্চিম মেদিনীপুরের কাঁসাই নদীর জলস্তর হু-হু করে বাড়ছে। জলের তোড়ে একাধিক অস্থায়ী সাঁকো ভেসে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বেশ কিছু এলাকায়।

    শিলাবতী ও কেঠিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে হঠাৎ করে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে গড়বেতা-১ ও ২, চন্দ্রকোণা-১ ও ২, ঘাটাল, দাসপুর ও ডেবরা ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা। এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তর একযোগে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

    সন্তানসম্ভবা মহিলাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রায় দু’হাজার মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গড়বেতা, দাসপুর ও চন্দ্রকোণায় আনাজ চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৬০০ হেক্টর জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে।

    লাগাতার বৃষ্টির ফলে হুগলির আরামবাগ-বদনগঞ্জ, গোঘাটের সাতবেড়িয়া অঞ্চল পুরোপুরি জলমগ্ন। কামারপুকুর ও জয়রামবাটির মধ্যবর্তী হলদি পোলের উপর দিয়েও জল বইছে।

    টানা বৃষ্টির কারণে জলের তলায় চলে গিয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকার আনাজের খেত। যার ফলে মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের। পরিস্থিতির মোকাবিলায় ইতিমধ্যে প্রশাসনের তরফে খোলা হয়েছে একাধিক ত্রাণ শিবির।

  • Link to this news (এই সময়)