নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্রাম: ঝাড়গ্রামে হাতির লক্ষ্য এখন খাবার রাখার জায়গা। আইসিডিএস কেন্দ্র, স্কুল, মুদিখানার দোকানে ঢুকে ভাঙচুর চালাচ্ছে হাতির দল। শুক্রবার রাতে সাপধরা গ্ৰাম পঞ্চায়েত এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গোডাউনের দরজা ভেঙে পাঁচটি হাতি চার বস্তা চাল খায়। হাতির ভয়ে স্কুলের পড়াশোনা শিকেয় উঠেছে। অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমাম বলেন, বর্ষার সময় পুকুরিয়া এলাকায় প্রতি বছর হাতির পাল ঢোকে। এই বছরও এসেছে। বনবিভাগের দু’টি টিম মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। ঝাড়গ্রামের সাপধরা গ্ৰাম পঞ্চায়েতের ঢোলকাঠ গ্ৰামের ছোট্ট স্কুল প্রণবানন্দ বিদ্যামন্দির। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক স্কুলটিতে ১২২ জন পড়ুয়া পড়াশোনা করে। সাতজন শিক্ষক আছে। সপ্তাহ খানেক ধরে স্কুল সংলগ্ন জঙ্গল ও আম, কাঁঠাল ও কাজু বাগানে কয়েকটা দলছুট হাতি ঘুরে বেড়াচ্ছে। জঙ্গল ও ফলের বাগান পেরিয়ে ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুলে আসতে হয়। বৃহস্পতিবার রাতে হাতির দলটি স্কুলে ঢুকে গোডাউনে ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। গতকাল রাতেও গোডাউনের লোহার দরজা ভেঙে স্কুলের মিড ডে মিলের চাল খেয়ে গিয়েছে। পড়ুয়াদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকে দু’-একটি ক্লাসের পরেই ছেলেমেয়েদের বাড়ি নিয়ে চলে যাচ্ছেন। বিকেলে স্কুল থেকে নিরাপদে কীভাবে বাড়ি ফিরবেন, তা নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষিকারা আতঙ্কিত বোধ করছেন। কয়েকদিন আগেই ভোররাতে শালিনীর বিকাশ ভারতী শিশু বিকাশ আবাসিক কেন্দ্রের রান্নাঘরের স্টোর রুমে ভাঙচুর চালায়। বড়সড় বিপদ থেকে আবাসিকের ক্ষুদেরা রক্ষা পায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ শীট বলেন, জঙ্গল এলাকার মধ্যে স্কুলটি রয়েছে। স্কুলের পিছনে বড় বড় ফলের বাগান রয়েছে। বৃহস্পতিবার কয়েক হাতি স্কলে ঢুকছিল। স্কুলের গোডাউনে মিড ডে মিলের চালের বস্তা ছিল। পাঁচটি হাতি দরজা ভেঙে বস্তার চাল খেয়ে গিয়েছে। শান্ত হাতিগুলো এখন আক্রামণাত্মক হয়ে উঠেছে। স্কুলে পড়ুয়াদের আসার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। দুই তিনটি ক্লাস হওয়ার পরেই বাবা ও মায়েরা এসে ছেলেমেয়েদের নিয়ে চলে যাচ্ছে। স্কুলের পঠন পাঠন ব্যাহত হচ্ছে। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে হাতির ভয়ে পড়ুয়ারা আর স্কুলেই আসতে চাইবে না। অভিভাবকরাও জানাচ্ছেন, ঝুঁকি নিয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাবেন না। ঝাড়গ্ৰাম রেঞ্জের এক বনআধিকারিক বলেন, বর্ষায় হাতির পালের মুভমেন্টে বদল হবে। নিচু জমি এলাকা ছেড়ে ঢালু জমি ও পাহাড়ী এলাকার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করবে। বনবিভাগের কর্মীদের এইসব এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্কভাবে চলাফেরা করতে হবে।