টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন ঘাটালের বিস্তীর্ণ এলাকা। চন্দ্রকোনাতেও একই পরিস্থিতি। দু’জায়গাতেই এখন যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে নৌকা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বন্যা দুর্গত প্রায় ৩৭ হাজার মানুষ। জেলায় সব মিলিয়ে ১২২টি ওয়ার্ড ও অঞ্চল বন্যা কবলিত হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, গড়বেতা ১ ও ২ নং ব্লকের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ঘাটাল ও চন্দ্রকোনাতে একেবারে ভয়াবহ পরিস্থিতি। আতঙ্কে রয়েছেন দাসপুর এলাকার বাসিন্দারা।
বন্যা দুর্গত ১২২টি অঞ্চলের মধ্যে গড়বেতার দু’টি ব্লকের ১৪টি অঞ্চলের পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেদিনীপুর সদরের মহকুমা শাসক মধুমিতা মুখোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, দুটি ব্লক মিলিয়ে সেখানে এখন ১২টি ত্রাণ শিবির চলছে। আশ্রয় নিয়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ। সেখানে তাঁদের ত্রাণ সামগ্রীরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে ঘাটাল মহকুমার ১০৮টি ওয়ার্ড ও অঞ্চলের পরিস্থিতি খুব খারাপ। ঘাটাল ও চন্দ্রকোনার ২টি ব্লক মিলিয়ে প্রায় ৩০টি ত্রাণ শিবির চলছে। সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
ঘাটালের মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস জানিয়েছেন, চন্দ্রকোনার জল কিছুটা নামলেও, ঘাটালে এখনও জল নামেনি। পরিস্থিতির উন্নতি হতে তিন থেকে চারদিন লাগতে পারে। দাসপুরে নির্মীয়মাণ স্লুইস গেট দিয়ে বন্যার জল প্রবেশ করায় আতঙ্কিত সেখানকার বাসিন্দারা। কৃষি ও সেচ কর্মাধ্যক্ষ আশিস হুদাইত দাসপুরবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কেউ আতঙ্কিত হবেন না। জোয়ারের কারণেই জল এগিয়ে এসেছে। কিন্তু এখনও ভয় পাওয়ার মতো কিছু হয়নি।’
জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ঘাটাল, চন্দ্রকোনাতে সরকারি নৌকো ও স্পিড বোট দেওয়া হয়েছে। সেখানে সিভিল ডিফেন্স, এনডিআরএফ, এসডিআরএফ টিম রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় খাবার ও ত্রাণ বিলি করা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যকর্মীরা জল পেরিয়ে দুর্গত এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছেন। প্রায় ২৫টি মেডিক্যাল ক্যাম্প করা হয়েছে। বন্যার কারণে এখনও পর্যন্ত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।’
শনিবার দুপুরে মেদিনীপুরের বিধায়ক সুজয় হাজরা গড়বেতার সন্ধিপুর এলাকায় ত্রাণ নিয়ে পৌঁছন। এ ছাড়াও, দাসপুরের বিধায়ক মমতা ভূঁইয়া, চন্দ্রকোনার বিধায়ক অরূপ ধাড়া-সহ অনেকেই এ দিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্ত্রী-র সঙ্গে বাড়ি ফেরার সময়ে জলমগ্ন রাজ্য সড়ক পারাপার করতে গিয়ে তলিয়ে গিয়েছিলেন চন্দ্রকোনা-২ নম্বর ব্লকের বারাসত গ্রামের বাসিন্দা তুলসী রুইদাস। শনিবার সকালে মাছ ধরার জালে ওঠে বছর ৪২-র তুলসীর দেহ। অন্যদিকে এ দিন সকালে চন্দ্রকোনা ১ নম্বর ব্লকের কামারগ্যেড়া এলাকার যুবক শেখ আজাবুল আলি (২১) মাছ ধরার সময়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গিয়ে তীব্র স্রোতে তলিয়ে যান। বেশ কিছুটা দূরে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়।