• DYFI-এর ২০তম সম্মেলন ও নেতৃত্ব বদলের আবহে প্রশ্নের মুখে আলিমুদ্দিনের নৈতিকতা...
    আজকাল | ২২ জুন ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বহরমপুরের রবীন্দ্রসদনে আজ থেকে শুরু হল ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন (DYFI)–এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ২০তম সম্মেলন। অথচ সম্মেলনের আগেই সংগঠনের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব নিয়ে তৈরি হয়েছে জোর বিতর্ক। প্রথা মেনে এই সম্মেলন থেকেই সরে দাঁড়াচ্ছেন DYFI-র রাজ্য সম্পাদক ও সিপিএম-এর সবচেয়ে পরিচিত যুব মুখ মীনাক্ষী মুখার্জি। কিন্তু বিদায়ী নেত্রীর উত্তরসূরি নির্বাচন ঘিরেই ঘনীভূত হচ্ছে প্রশ্ন এবং ক্ষোভ, বিশেষত সংগঠনের অভ্যন্তরীন নারী কর্মীদের একাংশের মধ্যে।

    ‘ক্যাপ্টেন’ মীনাক্ষীর উত্তরসূরি কে?

    ভোট ব্যাঙ্কে প্রায় শূন্য হলেও রাজপথে লড়াই ও বক্তৃতায় একপ্রকার ‘ক্যাপ্টেন’ হিসেবেই পরিচিত মীনাক্ষী। একাধিক গণআন্দোলনে তিনি ছিলেন সিপিএমের 'আউটফেস'। তবে এবার তিনি DYFI থেকে বিদায় নেবেন। তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে নাম প্রায় চূড়ান্ত ধ্রুবজ্যোতি সাহা। বর্তমানে তিনি DYFI রাজ্য সভাপতি, পাশাপাশি মীনাক্ষীর দীর্ঘদিনের ছায়াসঙ্গী। অন্যদিকে সভাপতি পদে জায়গা করে নিতে পারেন পূর্ব বর্ধমানের অয়নাংশু সরকার, যিনি তুলনামূলকভাবে অরাজনৈতিক পরিসরে কম পরিচিত।

    এই দুই তরুণ নেতা নেতৃত্বে এলে, তা দলের স্থায়িত্বের দিক থেকে যুক্তিসঙ্গত মনে হলেও, তুলনামূলকভাবে বলিষ্ঠ, ক্যারিশম্যাটিক বা মুখপাত্রসুলভ নেতৃত্বের অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। সিপিএম যখন জাতীয় স্তরে সংগঠনের মুখ খুঁজে চলেছে, তখন এই নেতৃত্ব বদলে পার্টি কতটা জনসংযোগ বাড়াতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

    বিতর্কিত পছন্দ: অভিযুক্তকেই থার্ড পার্সন?

    কিন্তু সবচেয়ে বিস্ফোরক প্রশ্ন উঠেছে DYFI-র মুখপত্রের পরবর্তী সম্পাদকের নাম ঘিরে। সদ্য বিদায়ী পত্রিকা সম্পাদক কলতান দাশগুপ্তের উত্তরসূরি হিসেবে আলিমুদ্দিনের পছন্দ, সূত্রের খবর অনুযায়ী, সোহম মুখার্জি। কিন্তু এই নামেই দলের অন্দরমহলে উঠেছে প্রবল আপত্তি। কারণ, সম্প্রতি তাঁর নাম জড়িয়েছে যৌন হয়রানির এক গুরুতর অভিযোগে।

    আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রাবাসে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে যাঁরা সরব হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—ঠিক কোন সমীকরণে অভিযুক্ত একজনকে DYFI-র মত গণসংগঠনের ‘তৃতীয় শীর্ষ’ পদে বসাতে চায় পার্টি নেতৃত্ব? সিপিএমের বহু কর্মী ইতিমধ্যেই সোচ্চার হয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, একজন নারী নেত্রী বিদায় নেওয়ার পরপরই একজন যৌন হেনস্থার অভিযুক্তের এমন প্রোমোশন কি আদৌ বার্তা দেয় নারীবান্ধব সংগঠনের?

    উল্লেখ্য, এখনো পর্যন্ত সোহমের বিরুদ্ধে সংগঠনের তরফে কোনো তদন্ত বা প্রকাশ্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। উলটে কলকাতা জেলা DYFI-র নেতৃত্বেও তাঁকে বসানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে সিপিএমের একাংশের বক্তব্য, নারী কর্মীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার প্রশ্নে দল কি আদৌ সংবেদনশীল?

    ‘নীতির প্রশ্নে’ সিপিএম কি হার মানছে?

    DYFI বা সিপিএম বারবার নৈতিকতার কথা বলে এসেছে। নারীবান্ধব রাজনীতি, গণতান্ত্রিক সংগঠনিক রীতি এবং জনমানসের সঙ্গে সংযোগ বজায় রাখার তাগিদে তারা নিজেকে অন্যান্য দলগুলোর থেকে স্বতন্ত্র বলেই তুলে ধরতে চেয়েছে। অথচ আজ সেই সংগঠনেই নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকা নেতার প্রোমোশন হলে, আদর্শ কোথায় দাঁড়ায়?

    প্রাক্তন বা বর্তমান বহু DYFI কর্মীরাই মনে করছেন, এমন সিদ্ধান্তে সংগঠনের প্রতি মানুষের আস্থা আরও ক্ষীণ হবে। ইতিমধ্যেই যুবমহলে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে DYFI-র প্রতি আগ্রহ কমেছে। সেখানে নেতৃত্বের এই ধারা আদৌ জনমানসে সংগঠনকে ফিরিয়ে আনতে পারবে কি না, তা নিয়ে গভীর সন্দেহ রয়েছে।

    সম্মেলন শেষে কি আরও বিতর্ক?

    প্রশ্ন উঠছে, বহরমপুরের এই সম্মেলনের শেষে কি দলের অভ্যন্তরে আরও অসন্তোষ প্রকট হবে? না কি রাজনৈতিক চর্চার বদলে নেতৃত্ব নির্বাচনের বিতর্কই শিরোনাম হয়ে থাকবে? সিপিএম বারবার বলেছে, তারা নীতির প্রশ্নে আপসহীন। কিন্তু দলীয় বাস্তবতা কি সেই নীতিকে ঠেলে দিচ্ছে গলির কোণে?

    সম্মেলনের মঞ্চে যখন ‘সংগ্রাম ও আদর্শ’-এর স্লোগান উঠবে, তখন কণ্ঠের ভেতরেই প্রশ্ন থাকবে—এই আদর্শ কি সত্যিই অটুট আছে, না কি রাজনৈতিক সুবিধাবাদে তা শুধুই এক শূন্য উচ্চারণ?
  • Link to this news (আজকাল)