• পাক-যোগে ব্রাত্য তুরস্কও, কোপ হেঁসেলের পোস্তয়
    এই সময় | ২১ জুন ২০২৫
  • এই সময়, কলকাতা ও আসানসোল: তালিবানি শাসনের আঁচ পড়েছিল। এ বার ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর আঁচও পড়ল বাঙালির হেঁশেলে। দক্ষিণবঙ্গ ও রাঢ়বঙ্গের অন্যতম ডেলিকেসি পোস্তর চাষ এ দেশে নিয়ন্ত্রিত। তাই চাহিদার সিংহভাগই আমদানি করতে হয়। হালফিলে পোস্ত আমদানি করা হতো তুরস্ক থেকে।

    কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের টানাপড়েনে পড়শি দেশের পাশে দাঁড়িয়েছে তুরস্ক। প্রতিবাদে ভারত তাদের সঙ্গে আপাতত সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত করেছে। তাতেই টান পড়েছে পোস্তর ভাঁড়ারে। এতে ফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। এক ধাক্কায় দাম বেড়ে গিয়েছে সাদা দানার। সেটা একটু-আধটু নয়-কেজি প্রতি প্রায় ৪০০ টাকা!

    অতএব বিউলির ডালের চিরকালীন দোসরকে ঘরে আনতে হাত পুড়ছে আম-গেরস্তের। কলকাতার পাইকারি বাজারের সঙ্গে বাংলার প্রায় সব জেলাতেই এর প্রভাব পড়েছে। তবে সরকারি সূত্রের খবর, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আফগানদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে।

    যার ফলে সে দেশ থেকে অচিরেই পোস্ত আমদানি হতে পারে। তাতে দাম ফের নাগালে আসবে বলে মত ব্যবসায়ীদের। যে হেতু আফিমের মূল সোর্স হলো পোস্ত, তাই এ দেশে সরকারি অনুমতিতে হাতেগোনা কিছু চাষি তা চাষের অনুমতি পান। আফগানিস্তান বা তুরস্কে পোস্ত চাষ বৈধ। ওষুধ ব্যবসায় প্রয়োজনীয় আফিমের জোগানদারও তারা।

    পোস্ত ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, তুরস্ক থেকে উন্নতমানের পোস্ত বিপুল পরিমাণে আমদানি করা হতো। যার বড় চাহিদা ছিল বাংলায়। এ ছাড়াও দেশের যে সমস্ত অঞ্চলে বাঙালির বাস একটু বেশি, সেখানেও পোস্ত বিক্রি ভালোই। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির খাদ্যাভাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পোস্ত।

    নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকারের তৈরি টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেন, ‘পাইকারি বাজারে পোস্তর টান পড়েছে। তার প্রভাব খোলা বাজারেও পড়ছে।

    নামী কোম্পানির প্যাকেটবন্দি যে পোস্ত সদ্য বাজারে আসছে, তার দামও কেজি প্রতি ৪০০ টাকা বেড়েছে। তবে আফগানিস্তান থেকে পোস্ত আমদানি শুরু হলে দাম নাগালে আসতে পারে।’

    পশ্চিম বর্ধমানের ব্যবসায়ী ফুলচাঁদ জৈন বলেন, ‘আমরা সবচেয়ে দামি পোস্ত কিনতাম রানিগঞ্জ থেকে, যা তুরস্ক থেকে আসত। সেই সময়ে কেজিতে দাম পড়ত ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকায়। এখন তার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯০০ থেকে ২০০০ টাকা।’

    ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, এর ফলে বাজারে নিম্নমানের পোস্তের রমরমা এবং দাম, দুই-ই বাড়বে। হোটেলেও পোস্তর পদের দাম বেড়েছে। দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, দুই মেদিনীপুরের হোটেলগুলিতে পোস্তর বড়ার চাহিদা বেশি।

    পশ্চিম বর্ধমানের রূপনারায়ণপুরের এক নামী হোটেলের মালিক মানিক খাঁড়া বলছেন, ‘১৪০০ টাকা কেজিতে যে পোস্ত গত দু'দিন আগেও কিনতাম, তা এখন কিনতে হচ্ছে ১৮০০ টাকা কেজিতে। ফলে পোস্তর বড়ার দামও পাঁচ টাকা করে বাড়াতে হয়েছে।’

    জামুড়িয়ার এক হোটেলের মালিকের বক্তব্য, ‘১০০ গ্রাম পোস্তয় পাঁচটা করে বড়া তৈরি করা যায়। আগে ৩০ টাকা পিস নিতাম, এখন ৩৭ টাকা নিই।’

    টানা পড়েছে গৃহস্থের হেঁসেলেও আসানসোলের মহিশীলা কলোনির বধূ অসীমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘আচমকা পোস্তর দাম কেজিতে ৪০০ টাকা বাড়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ দিকে বাড়িতে রোজই সবার পাতে পোস্তর কোনও না কোনও পদ চাই-ই!’

    শিল্পাঞ্চলের অন্যতম জনপ্রিয় কেটারার চিন্ময় মিশ্র বলেন, ‘নিরামিষ খাবারের ক্ষেত্রে সব অনুষ্ঠান বাড়িতেই পোস্তর একটি পদ থাকে। আগে যে দামে কাজ ধরেছি, এখন আর তা বাড়াতে পারছি না। ফলে লোকসান হচ্ছে।’

  • Link to this news (এই সময়)