• ধর্মীয় সম্প্রীতির নজির, দিঘার জগন্নাথধামের মহাপ্রসাদ নিতে হাজির এনারুল-আলাউদ্দিনরাও
    প্রতিদিন | ২১ জুন ২০২৫
  • সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো, বর্ধমান: সবিতা জানা থেকে শেখ এনারুল, আলাউদ্দিন মোল্লা থেকে নীলকান্ত অধিকারী। জামালপুর থেকে ভাতার, কেতুগ্রাম থেকে কালনা। দিঘার জগন্নাথ ধামের মহাপ্রসাদ নিতে পূর্ব বর্ধমান জেলায় ধর্মীয় বিভেদ মুছে মনুষ্যত্ব, সম্প্রীতির নিদর্শন দেখা মিলছে। দুয়ারে রেশনের মিধ্যমে এদিন থেকেই জেলায় মহাপ্রসাদ বিতরণ শুরু হয়েছে। চলবে ৪ জুলাই পর্যন্ত। প্রাথমিকভাবে এই জেলায় প্রায় ৭ লক্ষ পরিবার এই জগন্নাথের মহাপ্রসাদ পাবেন।

    মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই বলেছিলেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এদিন সেই উৎসবের মেজাজেই ঝিরঝিরে বৃষ্টি উপেক্ষা করে মহাপ্রসাদ দেওয়ার লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন সব ধর্মের মানুষ। আবার হিন্দু জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি মুসলিম জনপ্রতিনিধিরাও মহাপ্রসাদ বিতরণ কর্মসূচিতে সামিল হয়েছিলেন। একজন প্রতিনিধির কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীই পারেন সকলকে একসঙ্গে মেলাতে। পূর্ব বর্ধমান জেলার মানুষও এদিন বুঝিয়ে দিয়েছেন এই বাংলা সম্প্রীতির বাংলা,
    সৌভ্রাতৃত্বের বাংলা। সেখানে বিভেদ, বিভাজনের কোনও জায়গা নেই।” এদিন থেকে জেলায় মহাপ্রসাদ বিতরণ শুরু হয়েছে। রেশন ডিলাররা নিজেদের দোকান নয়, দুয়ারে রেশন কর্মসূচিতে বিভিন্ন জায়গায় শিবির করে মহাপ্রসাদ বিলি করেছেন। ওয়েস্ট বেঙ্গল এমআর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা কমিটির সম্পাদক পরেশনাথ হাজরা বলেন, “যেহেতু এর সঙ্গে ধর্মীয় ভাবাবেগ জড়িত তাই নির্দিষ্ট জায়গায় শুচিতা মেনে প্রসাদ বিলি করা হচ্ছে।”

    এদিন জামালপুরে দুয়ারে রেশনের শিবিরে মহাপ্রসাদ নিতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন সবিতা জানা, শেখ এনারুলরা। বিতরণ করছিলেন বিডিও পার্থসারথি দে, সহ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ভূতনাথ মালিক, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মেহমুদ খান। সবিতার হাতে মহাপ্রসাদ তুলে দেন ভূতনাথ। এনামুলের হাতে মহাপ্রসাদ তুলে দেন মেহমুদ খান। সবিতা বলেন, “বাড়ির দরজায় জগন্নাথ দেবের প্রসাদ পেলাম।” শেখ এনারুল বলেন, “আমরা সবাই ভালো একসঙ্গে থাকি। তাই মহাপ্রসাদ
    ভাতারের এভূয়ার গ্রামে প্রসাদ তুলে দিচ্ছেন বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী। নিলাম। খুব খুশি আমরা।” মেহমুদ বলেন, “আমাদের দেশ স্বাধীন হয়ে থেকে সম্প্রীতি অটুট। অন্য ধর্মকে সম্মান দেওয়া নিজের ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। এইভাবেই আমরা যেন সম্প্রীতি বজায় রাখতে পারি।”

    একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে ভাতারের এডুয়ার গ্রামে। লাইনে দাঁড়িয়ে নীলকান্ত অধিকারীদের সঙ্গেই জগন্নাথধামের মহাপ্রসাদ নিলেন গ্রামের আলাউদ্দিন মোল্লা, আব্দুল আলিমরাও। তাঁদের কথায়, “আমরা সবাই এক লাইনে দাঁড়িয়ে জগন্নাথধামের মহাপ্রসাদ গ্রহণ করছি-এটা সৌভ্রাতৃত্বের একটা বন্ধন। এমন পরিবেশই তো দরকার। আমরা এইভাবেই একসাথে থাকতে চাই।” এই গ্রামেই বাড়ি ভাতারের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীর। প্রসাদ বিতরণের সময় বিধায়ক সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ছিলেন।

    এদিন একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে রায়না-২, কালনা-২, কেতুগ্রাম-১ ও ২ সহ জেলার অন্যান্য ব্লকেও। এই মহাপ্রসাদ বিতরণ নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচির বিরোধিতায় একসুর সিপিএম ও কংগ্রেসের। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অপূর্ব বলেন, “প্রসাদ বিতরণ মতো বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে সরকারের উচিত মানুষের হাতে কাজ দেওয়া। ১০০ দিনের কাজের জন্য হাইকোর্টকে নির্দেশ দিতে হবে কেন? বিজেপি ও তৃণমূল উভয়েই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে। এই প্রসাদ বিতরণ তারই একটা উদাহরণ।” প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য গৌরব সমাদ্দার বলেন, “ধর্মের নামে রাজনীতি করে মানুষের কাছে পৌঁছতে চাইছে তৃণমূল। এমনকি, এই কাজ করতে গিয়ে রাজ্যের প্রশাসনকে ব্যবহার করছেন মুখ্যমন্ত্রী।”

    তবে এই কর্মসূচিতে সম্প্রীতির নজির স্বাভাবিক বলে দাবি করছ বিজেপি। বর্ধমান সাংগঠনিক জেলা বিজেপির মুখপাত্র সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সনাতন ধর্মের মানুষেরা সকল ধর্মকে সঙ্গে নিয়ে চলাতেই বিশ্বাসী। এক্ষেত্রে জগন্নাথ দেবের প্রসাদ আগ্রহ করে নেওয়ার জন্য সকল ধর্মের মানুষ লাইন দিয়েছেন এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তবে, জগন্নাথ দেবকে রেশনের দোকানে নামিয়ে এনেছেন মমতা। দেবতার প্রসাদকে রেশনের পণ্য করে তুলেছেন। ধর্মীয় সংস্কৃতির এই ধরনের অবমাননা মমতার আমলে দেখা গেল।” একইসঙ্গে এই উদ্যোগকে স্বাগতো জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “দিঘায় গিয়ে জগন্নাথ দেবের প্রসাদ সংগ্রহ করা যাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়, তাঁদের কাছে প্রসাদ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ভাল উদ্যোগ। তবে অন্য কোনও উপায়েও এই প্রসাদ বিতরণ করা যেত। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ধর্মীয় স্থান যেমন মন্দির, মঠ বা আশ্রম থেকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত ছিল।” তৃণমূলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “এখন মহাপ্রসাদ গ্রহণ করার মধ্যে সর্বধর্মের মানুষের যে আগ্রহ সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা গিয়েছে তা এই বাংলাতেই সম্ভব।” ছবি: জয়ন্ত দাস
  • Link to this news (প্রতিদিন)