• গৌতম বড় পর্দায় ফিরছেন দশ বছর পর
    এই সময় | ২১ জুন ২০২৫
  • দশ বছরের অপেক্ষা। আবার বড় পর্দায় দর্শকরা দেখতে পাবেন গৌতম ঘোষের ছবি। মাঝের দিনগুলো গৌতম ঘোষ অন্য কাজ করেছেন। বানিয়েছেন ‘রাহাগীর’। যদিও সেই ছবি মুক্তি পায়নি এখনও।

    তবে এই বছরের শেষের দিকে মুক্তি পাবে বলে আশা রাখছেন পরিচালক। কী করলেন তিনি মাঝের সময়টা?

    জবাবে গৌতম বলছেন, ‘ভাবতেই পারছি না, দশ বছর পর আমার ফিল্ম রিলিজ় করছে। মাঝের সময়টা ঘুমিয়ে তো আর ছিলাম না। আমি প্রচুর কাজ করেছি। আমার করা শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ফিচার ফিল্ম ‘শঙ্খচিল’।

    তার পর আমার মনে হয় আর্ট নিয়ে কাজ করব। আমি প্রথম থেকেই ফিচার ছবির পাশাপাশি অ্যাকাডেমিক ফিল্ম, তথ্যচিত্র, বিভিন্ন মানুষদের নিয়ে কাজ করেছি। একটা সময়ে মনে হয়েছিল মিউজ়িক নিয়ে কাজ করব।

    তখন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিসমিল্লা খানের উপরে কাজ করলাম। এর পর আমি সুযোগ পাই শিল্পী, গবেষক, শিক্ষক কেজি সুব্রহ্মণ্যনকে নিয়ে কাজ করার। ইন্দিরা গান্ধী সেন্টার ফর আর্টস-এর তরফ থেকে।

    অন্যরা ছবি করতে চাইলে উনি না করে দিয়েছিলেন। আমার বেলায় রাজি হয়েছিলেন। এটা আমার কাছে বিরাট একটা প্রাপ্তি। সেই সময়ে ওঁর বয়স ছিল ৯০ বছর।’

    এর পর তিনি শিল্পী শুভাপ্রসন্নর সঙ্গে কাজ করেন। দু’জনেই প্রায় সমসাময়িক। তাঁদের ছাত্র জীবন, ষাট-সত্তর দশকের সময়টা নিয়ে একটা ছবি করেন একসঙ্গে, নাম ‘শুভা অ্যান্ড মি’।

    ‘শুভাপ্রসন্নর কাজের সূত্র ধরে আমার ওই সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে ছবিটা তৈরি করি। এতে আমাদের সব থেকে বড় পাওয়া ছিল, জার্মানিতে গিয়ে গুন্টার গ্রাসের সঙ্গে শুটিং করা। ওঁর বাড়িতে গিয়েছি।

    মনে হয় ক্যামেরার সামনে ওটাই গুন্টার গ্রাসের শেষ সাক্ষাৎকার। একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। গুন্টার গ্রাস ছবি আঁকছেন। পাশে বসে শুভা ছবি আঁকছেন — দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছিল,’ বলছেন পরিচালক।

    এর পর তিনি ডিভোশনাল আর্টের উপর পাঁচটা পর্বের একটি ছবি করেন। এই ছবিটা করতে গিয়েই শিল্পী এস ভি রেজার সাক্ষাৎ পান তিনি। শিল্পীদের এই স্পিরিট তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। এর পরই তিনি ‘রাহাগীর’ করেন। তার আগে অবশ্য কলকাতা হাইকোর্টের উপর একটি ছবি করেন গৌতম।

    তাঁর কথায়, ‘হাইকোর্টে কোনও দিন ক্যামেরা ঢোকেনি। ওই প্রথম ওখানে শুটিং হয়। ২০১৯-এ ‘রাহাগীর’-এর শুটিং শুরু করি। প্রফুল্ল রায়ের একটা গল্প পড়েছিলাম ‘বর্ষায় একদিন’।

    আমার মনে হলো এটা খুব মানবিক গল্প। কারণ এখন মানবিক দিক চলে যাচ্ছে মানুষের মধ্যে থেকে। আদিল হোসেন, তিলোত্তমা সোম আর নীরজ কবি অসাধারণ অভিনয় করেছেন ছবিটায়। এই ছবিটাও আশা করছি মুক্তি পাবে এই বছরের শেষের দিকে।

    তবে প্রযোজকরাই ভালো বলতে পারবেন। ওটা আমার বিষয় নয়। আমরা ঝাড়খণ্ডে শুটিং করেছিলাম। প্রচণ্ড বর্ষায়। ছবিটা মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ২০২০-তে। কিন্তু সেই সময়েই প্যান্ডেমিক শুরু হয়ে যায়। ফলে মুক্তিও আটকে যায় ছবিটার।’

    ‘পরিক্রমা’ মূলত পরিচালকের ইতালিয়ান প্রযোজক, লেখক বন্ধুর গল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি। তবে সেই গল্পকে একেবারে ভারতীয় রূপ দিয়েছেন গৌতম। ‘একটা ছোট্ট ভারতীয় গ্রামের, মধ্যবিত্ত কৃষকের ১২ বছরের ছেলে যে হকারের কাজ করে, লেখককে বলেছিল যে সে কাজ করে বাবার জমিটা কিনে দেবে।

    যা তার বাবাকে বিক্রি করে দিতে হয়েছিল। এই গল্পটা আমার খুব ভালো লেগেছিল। আমার মনে হলো ছেলেটি যাকে গল্প বলেছিল সে একটা চরিত্র হতে পারে। সেই চরিত্রেই অভিনয় করেন মার্কো লিওনার্দি।

    চিত্রাঙ্গদা সিং এই ছবিতে দারুণ অভিনয় করেছেন। নর্মদা নদীর তীরের প্রেক্ষাপটে পুরো ছবিটাকে নিয়ে গিয়ে তৈরি করি আমি,’ বলছেন পরিচালক।

    দশ বছর পর বড় পর্দায় ছবি মুক্তি পাচ্ছে বলে খুশি গৌতম। মার্কো লিওনার্দি মালটায় শুটিং করছেন বলে উপস্থিত থাকতে পারবেন না ছবি মুক্তির সময়ে। তবে চিত্রাঙ্গদা সিং থাকবেন। ইতালিয়ান, ইংরেজি আর হিন্দি— এই তিন ভাষায় মুক্তি পাবে ছবিটি।
  • Link to this news (এই সময়)