• নির্বাচনে লড়বেন না, তবু ভারতীয় ফুটবলের দায়িত্ব নিতে তৈরি, ভাইচুং বললেন, ‘অসত‍্য বলা কল‍্যাণের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া উচিত’
    আনন্দবাজার | ২১ জুন ২০২৫
  • ভারতীয় ফুটবলের পরিস্থিতি এবং সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের বিভিন্ন কাজকর্মের বিরুদ্ধে তিনি বার বারই সরব হয়েছেন। শুক্রবার কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠকে আরও এক বার দেশের ফুটবলের দৈন্যদশা নিয়ে সরব হলেন ভাইচুং ভুটিয়া। জানিয়ে দিলেন, নিজে থেকে তিনি নির্বাচনে লড়বেন না। তবে সবাই চাইলে ভারতীয় ফুটবলের দায়িত্ব নিতে আপত্তি নেই তাঁর। পাশাপাশি ফেডারেশনকে ‘সার্কাস’ বলে তোপ দাগলেন তিনি। নাম না করে ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ চৌবে এবং বাকি কর্মকর্তাদের ‘জোকার’ও বলেছেন। সৌদি আরবে গিয়ে কল্যাণ কী করেছেন, তা নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন ভাইচুং। তার পরেই বিবৃতি জারি করে ভাইচুংয়ের দাবিকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ফেডারেশন সভাপতি কল্যাণ। একসঙ্গে কাজ করার প্রস্তাবও দিয়েছেন।

    এ দিন ভাইচুং বলেন, “সরকারের সঙ্গে অনেক পার্থক্য আছে। তাই আমার মনে হয় না সভাপতি পদের জন্য নির্বাচনে লড়ব। তবে ফুটবলের স্বার্থে কেউ যদি এগিয়ে আসেন তা হলে আমি সব সময় তাঁর পাশে থাকব। আমাকেই সভাপতি হতে হবে তার কোনও মানে নেই। অবসরের পর থেকে আমি এমনিতেই ভারতীয় ফুটবলের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমার ক্লাব ইউনাইটেড সিকিম থেকেই ভারতীয় ফুটবলের অধিনায়ক সন্দেশ জিঙ্ঘন উঠে এসেছে। যদি সবাই চায় আমি সভাপতি হতে রাজি। কিন্তু নির্বাচনে লড়ব না।”

    তবে ভাইচুংয়ের বক্তব্যে স্পষ্ট নয় যে ‘সবাই’ বলতে তিনি কাদের বুঝিয়েছেন। কারণ ভারতে সব ক্রীড়া সংস্থাতেই প্রধান হিসাবে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা কেন্দ্রের শাসকদলের সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে যুক্ত বা তাদের ‘পছন্দের’। ভাইচুং কোনও ভাবে শাসকদলের সমর্থন চান কি না, তা স্পষ্ট করেননি। অরাজনৈতিক লোকের পক্ষে ফুটবল সংস্থার প্রধান পদে বসা সম্ভব কি না, এই প্রশ্নের কোনও উত্তর তিনি দেননি।

    ভাইচুংয়ের বক্তব্যের বেশির ভাগটা জুড়েই ছিল ফেডারেশন এবং বিশেষ করে কল্যাণের প্রতি বিষোদ্গার। তিনি বলেন, “ফেডারেশনের গত তিন বছরের কাজকর্ম সম্পর্কে যত কম বলা যায় ততই ভাল। ওদের কাজকর্মে স্বচ্ছতা নেই। বহু বার বলেছি কার্যকরী সমিতির বৈঠক বা বার্ষিক সাধারণ সভা সরাসরি সম্প্রচার করা উচিত। সুপ্রিম কোর্টও লাইভ স্ট্রিমিং করে। আমাদের অসুবিধা কোথায়। কেউ কথাই শোনেনি। আপনাদের কী লুকোনোর আছে বুঝি না।”

    তাঁর সংযোজন, “কল্যাণের অধীনে বহু বার ফেডারেশনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। দুর্নীতি, স্বজনপোষণ হয়েছে। যাঁরা ভারতীয় ফুটবলের খোঁজ রাখেন তাঁরা জানেন ফেডারেশন সার্কাসে পরিণত হয়েছে। অবশ্য সেখানে যদি জোকারদের কর্তা করে বসানো হয় তা হলে সার্কাস তো হবেই।”

    ভাইচুংয়ের সাংবাদিক বৈঠক শেষ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে ফেডারেশনের তরফে সরকারি ভাবে বিবৃতি দিয়ে বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন কল্যাণ। তিনি বলেছেন, “আমাদের মতো গণতান্ত্রিক দেশে প্রত্যেকের স্বাধীন ভাবে কথার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। তবে ২০২২-এর সেপ্টেম্বরে নির্বাচনে হারের পর ভাইচুং ধারাবাহিক ভাবে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করে চলেছেন এবং ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। এতে শুধু ফেডারেশনের জনপ্রিয়তাই নষ্ট হচ্ছে না, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতীয় ফুটবলের বদনাম হচ্ছে।”

    তবে ভাইচুংকে সাংবাদিক বৈঠকে থামানো যায়নি। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “২০২৭ সালের এশিয়ান কাপ আয়োজন করার জন্য সৌদি আরবের পাশাপাশি শুধু আমরাই ছিলাম। ক্ষমতায় আসার পরেই কল্যাণ সৌদি আরবে গেল। সেখানে টেবিলের তলায় কী আলোচনা হয়েছিল জানি না। হঠাৎই আয়োজনের দাবি থেকে নাম তুলে নিল ভারত। তার জায়গায় সন্তোষ ট্রফির নকআউট আয়োজন করা হল সৌদি আরবে। সৌদিতে গিয়ে ও কী করেছে জানি না। আমার মতে, এটা নিয়ে নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করা উচিত।”

    ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক ভাইচুং প্রশ্ন তুলেছেন, তৃণমূল স্তরের ফুটবলের উন্নতি বা ফুটবলারদের দৈনিক ভাতার টাকা যেখানে দেওয়ার ক্ষমতা নেই ফেডারেশনের, সেখানে কেন হংকং ম্যাচ জিতলে ৪২ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল? প্রতিটি ম্যাচ জিতলেই কি টাকা দেওয়া হত? কল্যাণের বিরুদ্ধে ফেডারেশনের অর্থ ব্যবহার করে জুতো, বিলাসবহুল গাড়ি কেনা এবং ঘন ঘন বিমানযাত্রার অভিযোগ করেছেন ভাইচুং। নিজে প্রাক্তন খেলোয়াড় হয়েও কল্যাণ ফুটবলারদের ভোটদানের ক্ষমতা দেওয়ার বিরোধী ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। ভাইচুং বলেছেন, খেলার সময়েও রাজনীতি করত ও।”

    পাশাপাশি ভাইচুংয়ের অভিযোগ, “আমরা একই প্রজন্মের খেলোয়াড়। ভারতের হয়ে আমি ১৬ বছর খেলেছি। ১২ বার অধিনায়কত্ব করেছি। ২০১১ সালে অবসর নিয়েছি। আমার অধীনে একটা ম্যাচেও মনে করতে পারছি না যেখানে কল্যাণ ভারতের হয়ে খেলেছে। সংবাদমাধ্যম এবং সরকারের কাছে বলেছে যে ও নাকি ভারতের হয়ে খেলেছে। জুনিয়র, সাব-জুনিয়রে খেলতে পারে। একটা-দুটো প্রতিযোগিতায় তৃতীয় গোলকিপার হিসাবে দলে ছিল। আমার চোখে দেখা একটা ম্যাচেও খেলেনি। সম্পূর্ণ অসত্য কথা ছড়িয়ে বেড়ায়। সভাপতি হওয়ার যোগ্যই নয়।” তাঁর অনুরোধ, “সরকার এবং আমাদের মতো ফুটবল সমর্থকেরা যাঁরা ভেবেছিলাম কল্যাণ এলে ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি হবে তাঁরা এখন বুঝতে পারছেন, বিরাট বড় ভুল হয়ে গিয়েছে।

    এ দিন ভাইচুং কথা বলেছেন ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি নিয়েও। তৃণমূল স্তরের ফুটবলের উন্নতিতে জোর দিয়েছেন তিনি। বয়সভিত্তিক ফুটবলের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নিজের যোগ্যতায় খেলার কথা বলেছেন। তুলে ধরেছেন কী ভাবে তাঁর তৈরি করা ‘ভাইচুং ভুটিয়া ফুটবল স্কুল’ গোটা দেশে প্রায় ছ’হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে কাজ করে চলেছে এবং সেখান থেকে প্রচুর ফুটবলার উঠে এসেছে।

    কল্যাণ বিবৃতিতে জানিয়েছেন, আগামী ২ জুলাই ফেডারেশনের কর্মসমিতির বৈঠক রয়েছে। তার জন্য ভাইচুংকে ১১ জুন আমন্ত্রণ জানানোও হয়েছে। সেখানেই তাঁর যাবতীয় পরিকল্পনা তুলে ধরার অনুরোধ করেছেন কল্যাণ। ভাইচুংয়ের সঙ্গে ‘একসঙ্গে’ কাজ করার প্রস্তাবও দিয়েছেন, যাতে ভারতীয় ফুটবল ‘নতুন উচ্চতায়’ ওঠে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)