সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের (গ্রুপ সি এবং ডি) জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে মাসিক ভাতা দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন, তাতে শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্ট অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এই নির্দেশকে হাতিয়ার করে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে জেনে-বুঝে বেআইনি কাজ করার অভিযোগে এক সুরে সরব হয়েছেন বিরোধী নেতৃত্ব। পক্ষান্তরে, ভাতার বিরুদ্ধে আদালতে মামলাকারী এবং বিরোধীদের ‘বাংলা-বিরোধী’ আখ্যা দিয়ে তাঁদের চিহ্নিত করার দাবিতে ফের সরব হয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।
আদালতের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূল জমানার গোড়ার দিকে সারদা কেলেঙ্কারির প্রেক্ষিতে একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমকে মমতার ‘সাহায্যে’র কথা মনে করিয়ে দিয়ে শুভেন্দু বলেছেন, “এগুলো অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা। উনি এমন অনৈতিক কাজ করেই থাকেন। করদাতাদের টাকা, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে ধার করা টাকা, রাজ্য সরকারের বন্ড বিক্রির অর্থ এই ভাবে খরচ করা যায় না। আর ভাতা দিতে হলে তা ২০১৬-য় গ্রুপ সি, ডি-র পরীক্ষায় যাঁরা অ্যাডমিট কার্ড পেয়েছিলেন, তাঁদের সবাইকেই দেওয়া উচিত।” তবে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) সংক্রান্ত আদালতের নির্দেশের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শুভেন্দু বলেছেন, “মমতা আদালতের এই নির্দেশও মানবেন কি না, তা জানি না!”
এই প্রেক্ষিতে ফের যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা আলাদা করার দাবি তুলেছে সিপিএম। সেই সঙ্গেই দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, “উনি (মমতা) জানতেন, ভাতা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে মামলা হলে, তা আটকে যাবে। আসলে উনি লোক দেখিয়ে বলতে চান, ‘চেষ্টা করেছিলাম। হল না, আমার দোষ নয়।’ আসলে উনি চাকরি চোরেদের পাশে থেকেছেন।” পুরো বিষয়টিকে ‘প্রতারণা’ হিসেবে দেখছেন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী। তাঁর বক্তব্য, “জেনে-শুনে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এই বেআইনি কাজগুলো করছেন। বাংলার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। উনি অভাবকে ভিক্ষা দিয়ে কিনতে চাইছেন! বাংলার মানুষের কাছে আপনার ভাতা আর ভাত নয়। মর্যাদার সঙ্গে তাঁরা উপার্জন করতে চান।”
এই পরিস্থিতিতে বাংলা-বিরোধিতার তত্ত্বে শাণ দিয়েছে তৃণমূল। দলের বক্তব্য, ‘বাংলা-বিরোধী ব্রিগেড কলকাতা হাই কোর্টে গিয়ে (ভাতা) বাতিল করিয়ে এনেছে। এরা জনতাকে সাহায্য করে না এবং অন্য কাউকে সাহায্যও করতে দেবে না।’ সরব হয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষও। তাঁর বক্তব্য, “আমরা আদালতকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু কারা আদালতে গিয়ে কী নির্দেশ নিয়ে আসছেন, সেটা দেখুন! বিপদে কারা পাশে থাকেন, আর কারা চাকরি খেতে চেয়ে বিরোধী রাজনীতি করেন, সেটাকে চিনে রাখাটা জরুরি।” প্রসঙ্গত, চাকরিহারাদের একাংশকে ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছিলেন শিক্ষক এবং চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ।