মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লন্ডন সফরে অক্সফোর্ডের কলেজে তাঁর বক্তৃতা চলাকালীন আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন চিকিৎসক রজতশুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বাড়িতে যাওয়ার সময়ে ভবানীপুরে ওই চিকিৎসক-সহ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে আটক করল পুলিশ। শহরেরই অন্য দিকে মেটিয়াবুরুজ, মহেশতলা-সহ সংলগ্ন এলাকায় শান্তি ও সম্প্রীতি মিছিল থেকে গেলে বাম নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে লালবাজারে নিয়ে গেল পুলিশ। দু’জায়গায় একই দিনে পুলিশের এমন ধরপাকড় নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। রাতে অবশ্য সকলেই মুক্তি পেয়েছেন।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত শুক্রবার দুপুরে কালীঘাটে রজতশুভ্রের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথেই পুলিশের গাড়ি রেখে তাঁর পথ আটকানো হয়। গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে যেতে গেলে সুকান্ত, অনুপম ভট্টাচার্য, তমোঘ্ন ঘোষ-সহ বিজেপির কয়েক জন কর্মী-সমর্থককে আটক করে পুলিশ। তাঁর বাড়িতে আসার পথে বিজেপির রাজ্য সভাপতি পুলিশের কাছে বাধা পেয়েছেন খবর পেয়ে সুকান্তের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন ওই চিকিৎসক। অভিযোগ ওঠে, কলার ধরে, মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকেও। সুকান্ত-সহ সবাইকে মুক্তি দেওয়ার দাবিতে লালবাজারের বাইরে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির কর্মীরা। কাশীপুর-বেলগাছিয়া, চৌরঙ্গি, জোড়াসাঁকো, পোদ্দার কোর্টে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরে সবাইকেই ছেড়ে দেওয়া হয়।
সন্তোষপুর বটতলা রেললাইন মোড় থেকে এ দিন শান্তি মিছিলের ডাক দিয়েছিল বামেরা। অভিযোগ, মিছিলের আগেই পুলিশ ধরপাকড় শুরু করে। রাস্তা থেকে টেনে-হিঁচড়ে পুলিশ ভ্যানে তোলা হয় সিপিএম, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন, আরএসপি-সহ বিভিন্ন দল এবং সংগঠনের নেতৃত্বকে। লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয় কল্লোল মজুমদার, কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ বসু, বাসুদেব বসু, অতনু চক্রবর্তী-সহ ১১ জনকে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাম দলের নেতৃত্ব এই ঘটনায় সরব হয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন যেখানে যথেচ্ছ বিক্ষোভ করছেন, বিজেপি নেতারা মহেশতলা-সহ নানা জায়গায় গিয়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কথা বলছেন অথচ শান্তি মিছিল করতে গেলে পুলিশ গ্রেফতার করছে! রাজ্য সরকারের ‘স্বৈরাচারী মনোভাবে’র প্রতিবাদ করে বিভিন্ন সংগঠনের প্রশ্ন, গণতান্ত্রিক অধিকারের উপরে পুলিশ দিয়ে হামলা কেন? ধৃত বাম নেতারা অবশ্য রাতে ছাড়া পেয়েছেন। আর বামেদের এই গ্রেফতার প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের মন্তব্য, ‘‘সব জায়গায় যায় কেন?’
রাতে লালবাজার থেকে বেরিয়ে রাজ্য প্রশাসনকে নিশানা করেছেন সুকান্তও। তিনি বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করতে গিয়ে আমাদের হেনস্থা করা হয়েছে। আবার বিদেশের মাটিতে প্রতিনিধিত্ব করা বাংলার কৃতী চিকিৎসককে কলার ধরে জেলে ঢোকানো হল! বোঝাই যাচ্ছে কারা বাংলা-বাঙালি বিরোধী। বাংলার মানুষ হিসাব বুঝে নেবেন।” চিকিৎসক রজতশুভ্রও বলেছেন, “ভাবতে পারিনি, আমার সঙ্গে দেশের কোনও মন্ত্রী দেখা করতে আসবেন বলে, তাঁকে গ্রেফতার করা হবে। আমাকে চোর, পকেটমারের মতো তুলে নিয়ে যাওয়া হবে!” যদিও তৃণমূল নেতা কুণাল বলেন, ‘‘লন্ডনে মুখ্যমন্ত্রী বক্তৃতা শুরু করতেই যে ভাবে বাধা দিয়েছিলেন, তাতে এখানেও কোনও কীর্তি করতে পারেন বলে হয়তো পুলিশের কাছে খবর ছিল। আর এখন তো ফাঁস হয়ে গেল ভদ্রলোক বিজেপির এজেন্ট! বিজেপির নির্দেশেই বিশৃঙ্খলা করে বেড়ান।’’
সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। দুর্গাপুরে তিনি বলেছেন, “আমাদের রাজ্য সভাপতি-সহ নেতৃত্বকে গ্রেফতার অত্যন্ত নিন্দনীয়। যিনি লন্ডনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিটিংবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন, তাঁর বাড়িতে আমন্ত্রণ পেয়ে দেখা করতে গিয়েছিলেন সুকান্ত। কালীঘাট পিসি-ভাইপোর পৈতৃক সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে! তাই ওখানে কাউকে যেতে দেবে না ভেবেছে।”