বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আবহে আগামী সোমবার বিকেলে নয়াদিল্লিতে নবনিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ নবান্নে গিয়ে মমতার সঙ্গে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ করবেন। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, বৈঠকে কাছাড়িবাড়ি ভাঙচুর নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে ‘প্রকৃত তথ্য’ তুলে ধরবেন হামিদুল্লাহ। বাংলাদেশের বক্তব্য, স্থানীয় বিরোধের কারণেই ওই হামলা হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তেই স্পষ্ট যে এটি আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা। ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারের বক্তব্য, হিন্দু ঐতিহ্যের প্রতীকের বিরুদ্ধে ‘পরিকল্পিত ইসলামপন্থী আক্রমণ’ বা ‘সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড’ হিসেবে বিষয়টি ভুল ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ওই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির বা ধর্মের কোনও যোগ নেই।
প্রায় ন’বছর পরে বাংলাদেশের কোনও হাই কমিশনারকে সময় দিলেন মমতা। এর আগে, ২০১৬ সালে, তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছিলেন তৎকালীন হাই কমিশনার মোয়াজ্জেম আলী। পরে আরও দুই হাই কমিশনার (মুহাম্মদ ইমরান ও মোস্তাফিজুর রহমান) চেষ্টা করেছেন পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে, কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। ফলে ইউনূস সরকারের দূত হিসেবে হামিদুল্লাহের নবান্ন সফর গুরুত্বপূর্ণ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ির বিষয়ই শুধু নয়, এমন সময়ে তাঁর সঙ্গে মমতার দেখা হচ্ছে যখন সীমান্ত নিয়ে দ্বিপাক্ষিক স্তরে তিক্ততা তৈরি হয়েছে। যে বাংলাদেশিরা বেআইনি ভাবে ভারতে বসবাস করছেন বলে অভিযোগ, তাঁদের চিহ্নিত করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাচ্ছে বিএসএফ। আর সীমান্তের ও-পারে পা দিতেই তাঁদের আটক করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘ স্থলসীমান্তের অর্ধেকের বেশি (২২১৭ কিলোমিটার) পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে। জানা গিয়েছে সীমান্তকে কী ভাবে আরও ‘মানবিক, বন্ধুত্বপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ ও অর্থনৈতিক ভাবে সম্পন্ন’ করে তোলা যায়, তা নিয়ে কথা বলবেন বাংলাদেশের দূর। ঢাকার বক্তব্য, যাঁদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে তিন শ্রেণির মানুষ রয়েছেন। প্রথম শ্রেণি অল্পসংখ্যক রোহিঙ্গা যাঁরা ভারতে শরণার্থী হিসেবে নথিভুক্ত করিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত বাংলা ভাষাভাষী ভারতের মুসলমান সম্প্রদায়। তিন, জীবিকার কারণে যাঁরা বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে এসেছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের বক্তব্য, ধাক্কা দিয়ে সীমান্তের ও দিকে ঠেলে না দিয়ে (কারণ তাতে যে কোনও সময়ে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হতে পারে বিজিবি-র দিক থেকে), তাঁদের চিহ্নিত করে বিএসএফ এবং বিজিবি আলোচনায় বসে বা কনসুলার পর্যায়ে কথাবার্তা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। এ ভাবে ফেরত পাঠানো ‘অমানবিক’ এবং এর ফলে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী মানসিকতা বাড়ছে বলেই দাবি ঢাকার।
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে ‘বহুস্তরীয় গভীর সম্পর্ক’ রয়েছে বলে মনে করেন হাই কমিশনার। তাঁর মতে, দু’পারের মানুষই ‘স্পর্শকাতর ও তর্কপ্রবণ’, তাই কিছু তর্ক বিবাদ হতেই পারে। কিন্তু মানসিকতার মিল হলে এবং আন্তঃসীমান্ত সমস্যা নিয়ে (যেমন কিছু রোগ-ব্যাধি, নদীর মাছে মড়ক বা কৃষি সংক্রান্ত) যৌথ গবেষণার উদ্যোগ হলে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ, দু’দেশেরই লাভ। সূত্রের খবর, আসন্ন সফরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে মমতাকে চাপ দেওয়ার পরিকল্পনা হামিদুল্লাহের নেই। তিস্তার ভাষ্যে দু’পারের মানুষের ভাগ্যের চাকা আটকে যাক, আপাতত চায় না বাংলাদেশ হাই কমিশন।