শুক্রবার সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন জায়গায় দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের মহাপ্রসাদ বিলি উপলক্ষে কোথাও ঢাক বাজল, কোথাও বাজানো হল শঙ্খ। আবার নানা জায়গায় শোনা গেল উলুধ্বনিও। স্নান করে ধুতি পরে, নামাবলি গায়ে জড়িয়ে তৃণমূল নেতাদেরও ‘দুয়ারে প্রসাদ’ কর্মসূচিতে দেখা গেল। যা নিয়ে কটাক্ষ করতে শোনা গিয়েছে বিরোধী দলের নেতাদের। খোঁচা দিয়ে তাঁরা বলেছেন, একের পর এক দুর্নীতি থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে এ বার সরকারি মুখোশের আড়ালে মহাপ্রসাদ বিলি করছেন তৃণমূল নেতারা। যদিও তৃণমূলের দাবি, কোথাও তৃণমূলের নেতারা ওই কর্মসূচিতে ছিলেন না। যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁরা এলাকার প্রশাসনিক প্রধান।
ভাতারের এরুয়ার গ্রামে নিজের পাড়ার কর্মসূচিতে বাসিন্দাদের হাতে প্রসাদের বাক্স তুলে দেন বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী। প্রসাদ হাতে আব্দুল হাজিম, আলাউদ্দিন শেখরা বলেন, “আমরা এ ভাবেই থাকতে চাই। কোনও বিভেদ নেই।” খণ্ডঘোষের আরিন গ্রামেও প্রসাদ বিলির সময় তৃণমূলের নেতারা হাজির ছিলেন। গ্রামবাসীর মধ্যেও প্রসাদ নেওয়ার উৎসাহ ছিল। মহিলারা সকালেই স্নান করে প্রসাদ নিতে মন্দির চত্বরে হাজির হন। প্রসাদ বিলির সময়ে বার বার বেজে উঠেছে ঢাক। তারই ফাঁকে বিজেপি প্রভাবিত ওই গ্রামের বাসিন্দাদের অনেককে বলতে শোনা যায়, “বাড়ির কাছে জগন্নাথ মন্দির হয়েছে। বাসে করে যাতায়াতের সুযোগ বাড়ানো হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এ ভাবে সরকারি ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে প্রসাদ বিলি আসলে দলীয় প্রভাব বিস্তারের রাজনীতি।”
মেমারির দুর্গাপুর পঞ্চায়েতের শ্যামনগরে প্রসাদ বিলি হয়। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই পঞ্চায়েতের কর্তারা ফোনে প্রসাদ প্রাপকদের স্নান করে প্রসাদ নিতে বারোয়ারিতলায় আসতে বলেন। এ দিন সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, স্নান সেরে ধুতি পরে প্রসাদ বিলির জন্য হাজির হয়েছেন উপপ্রধান নিতাই ঘোষ। তাঁর কথায়, “জগন্নাথদেবের মহাপ্রসাদ বলে কথা, সে জন্যই স্নান করে নতুন বস্ত্র পরে হাজির হয়েছি।” কাটোয়ার একাধিক জায়গায় পুরুষ ও মহিলারা প্রসাদ বিলির সময়ে শঙ্খ বাজিয়েছেন। কেতুগ্রাম ২ ব্লকে ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যেও প্রসাদ নেওয়ার জন্য লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে। বাসিন্দাদের মধ্যেও উৎসাহ ছিল। দাঁইহাটে নিজের বাড়ির সামনে প্রসাদ বিলি করেছেন পুরপ্রধান প্রদীপ রায়।
বর্ধমান শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁটাপুকুরের দুর্গামন্দিরের পাশে ‘দুয়ারে প্রসাদ’ বিলি হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, কোনও প্রচার হয়নি। সে কারণে প্রসাদ নেওয়ার জন্য ভিড়ও ছিল না। একই ছবি বর্ধমানের ১ নম্বর ওয়ার্ডে কেশবগঞ্জ চটিতে। দু’টি জায়গাতেই ‘অব্যবস্থা’ দেখা যায়। প্রসাদ নিয়ে ফেরার পথে এক জনকে বলতে শোনা যায়, “সমালোচনা আটকাতে মিষ্টিমুখ করাচ্ছে সরকার!” বিজেপির নেতা অভিজিৎ তা-ও মনে করেন, “দুর্নীতিতে বিদ্ধ হয়ে গিয়েছে তৃণমূল। তা-ই দৃষ্টি ঘোরাতে সরকারি ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে মিষ্টিমুখ করাচ্ছে তৃণমূল।” জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের যদিও দাবি, “মুখ্যমন্ত্রীর ব্যবস্থাপনায় মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে প্রসাদ গ্রহণ করছেন। প্রতিটি জায়গাতেই ভিড় ছিল। মানুষের আবেগের কাছে বিরোধীদের কটাক্ষ হেরে গিয়েছে।”
দামোদরের ধারে খণ্ডঘোষের পলেমপুরের বারোয়ারিতলায় প্রসাদ বিলি হচ্ছিল। প্রসাদ নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ঘোষ পরিবারের এক সদস্যা। তাঁর টিপ্পনী, “ছ’মাস ধরে রাস্তা বেহাল। ভাঙা রাস্তায় প্রতিদিনই হোঁচট খেতে হয়। প্রসাদ নিয়ে কী আর মন ভরবে?”