• ‘কাকার জন্য হরিবোল’, শেষযাত্রায় শামিমেরা
    আনন্দবাজার | ২১ জুন ২০২৫
  • গ্রামের একমাত্র হিন্দু পরিবারের কর্তা মারা গিয়েছেন। শেষযাত্রার জন্য বাঁশের মাচা বানানো থেকে শুরু করে, কীর্তনের দলের বন্দোবস্ত করা, এমনকি, মৃতের ছেলেদের সঙ্গে ‘হরিবোল’ ধ্বনি দিয়ে দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ায় জুড়ে রইলেন ওঁরা। পড়শি শামিম শেখ, মেরাজ আলি, সাবির আলি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মালদহের বৈষ্ণবনগরের হজরত-হাজিপাড়া গ্রামে শোকগ্রস্ত পরিবারের পাশে সপরিবার হাজির থাকলেন স্থানীয় মসজিদের ইমামও।

    গ্রামেরই জুম্মা মসজিদের ইমাম মোরসালিম শেখ বলেন, ‘‘ওই পরিবারের কর্তা লক্ষ্মী রবিদাসকে (৭০) কাকা বলে ডাকতাম। মৃত্যুসংবাদ পেয়ে সকাল থেকে পরিবার-সহ ওই বাড়িতেই ছিলাম। ধর্ম ধর্মের জায়গায়। আমাদের কাছে মানবিকতাই বড়।’’

    বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় বুধবার গভীর রাতে মারা যান ওই গ্রামের চার দশকের বাসিন্দা লক্ষ্মী রবিদাস। জুতো সেলাই করে দিন চলত তাঁর। তিন ছেলে, পাঁচ মেয়ে। সবাই বিবাহিত। ছেলেরা একই বাড়িতে থাকেন। লক্ষ্মীবাবু গ্রামের তিনশো পরিবারের মধ্যে একমাত্র হিন্দু পরিবারের কর্তা। তাঁর বড় ছেলে ধনঞ্জয় বলেন, ‘‘বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে এ দিন সকাল থেকে পড়শিরাই এগিয়ে আসেন। ইমাম নিজে ছিলেন। ছোট থেকে সবাই এক সঙ্গে বড় হয়েছি। হিন্দু-মুসলমান ভেদ আমাদের মধ্যে কোনও কালেছিল না।’’

    পড়শিরা কেউ দিনমজুর, কেউ নৌকা চালান, কেউ মৎস্যজীবী। তাঁদের মধ্যে বৃদ্ধের দেহ নিয়ে শেষযাত্রায় যাওয়ার বন্দোবস্তে ব্যস্ত শামিম শেখ বলেন, ‘‘লক্ষ্মীকাকার মেয়েদের বিয়েতে গ্রামের সবাই চাঁদা দিয়েছিলেন। ওদের বিয়ের অনুষ্ঠানেও সক্রিয় ভাবে হাজির ছিলাম আমরা। কার কোন ধর্ম, কখনও মাথায় আসেনি।’’

    বেলা ১০টা নাগাদ দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে মেয়ে, পুত্রবধূদের পাশাপাশি, কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারটির ঘনিষ্ঠ সংখ্যালঘু মহিলারাও। ওঠে ‘হরিবোল’ ধ্বনি। শামিম শেখ, সাবের আলি, রুহুল আমিনরা বলেন, ‘‘কাকার জন্য হরিবোল বলায় সমস্যা নেই।’’

    গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বাসিন্দা মেরাজ আলির দাবি, ‘‘এই গ্রামে আমরা এক ছিলাম, এক আছি, এক থাকব।’’ সায় দেন ইমাম মোরসালিম শেখ। বলেন, ‘‘মানুষ হয়ে জন্মালে, মানুষের জন্য বাঁচতেই হবে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)