• নাবালিকাকে ঠকিয়ে প্রেমের সম্পর্ক, জালে ভিন্ রাজ্যের তরুণ
    এই সময় | ২১ জুন ২০২৫
  • এই সময়, শিলিগুড়ি: এক নাবালিকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক। তার জেরে ঘনিষ্ঠ বন্ধু জেল খেটেছে আগেই। এ বার জালে ভিন্ রাজ্যের এক তরুণ।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় এক কিশোরীকে ব্ল্যাকমেল করার অভিযোগে শুক্রবার সন্ধেয় দিল্লি থেকে আসা তরুণকে গ্রেপ্তার করে শিলিগুড়ি সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। ধৃতের নাম আফ্রিদি খান, বয়স বছর পঁচিশেক।

    সাইবার ক্রাইম থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, নাবালিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় আফ্রিদির ফাঁদে পড়েছিল। সেখান থেকে বের হতে গিয়ে নিজের বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে এ দিন প্রধান অভিযুক্ত, দিল্লির সেই তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

    ঘটনার সূত্রপাত প্রায় দুই বছর আগে। এনজেপি থানা এলাকার মেয়েটি তখন নাবালিকা। বয়স ১৬ বছর। সেই সময়ে দিল্লির আফ্রিদির সঙ্গে ইনস্টাগ্রামে পরিচয় হয় মেয়েটির। ক্রমশ সম্পর্ক গভীর হতে শুরু করে। সোশ্যাল মিডিয়ার ভাষায় যাকে বলে লং-ডিসট্যান্স রিলেশনশিপ।

    সম্পর্ক গভীর হতেই দু’জনের মধ্যে ভিডিয়ো কলে কথাবার্তা এবং ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি আদানপ্রদান হতে থাকে। অভিযোগ, মেয়েটির কাছে আফ্রিদি আরও খোলামেলা, ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিয়ো চাইতে থাকে। দিতে না চাইলে আগে দেওয়া সমস্ত ছবি ও ভিডিয়ো ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেল করতে থাকেন আফ্রিদি।

    নাবালিকা ঘাবড়ে গিয়ে বিষয়টি নিজের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে জানায়। একই পাড়ার বাসিন্দা সে, বয়সে কিছুটা বড়। আফ্রিদিকে ছবি পাঠানোর জন্য সেই বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয় কিশোরী। তাদের একান্ত মুহূর্তের ভিডিয়ো রেকর্ড করে দিল্লির তরুণকে পাঠাতে থাকে।

    এই সূত্রে বন্ধুর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে মেয়েটি। তখনও সে নাবালিকা। বছরখানেক আফ্রিদির সঙ্গে এ ধরনের সম্পর্ক চলার পরে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি কিশোরী তাঁকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। আফ্রিদির সঙ্গে সংসার করার জন্য শিলিগুড়ি ছাড়ে। সে দিল্লি যাওয়ার পরেই নাবালিকার পরিবার পুরো বিষয়টি জানতে পারে।

    শিলিগুড়ি সাইবার ক্রাইম থানায় গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মামলা দায়ের করে পরিবার। তদন্ত নেমে পুলিশ পুরো ঘটনা জানতে পারে। নাবালিকার বন্ধুকে পকসো আইনে গ্রেপ্তার করে। মাস তিনেক জেল খাটতে হয় তাকে।

    পুলিশ নাবালিকার খোঁজ শুরু করে। তখন দিল্লিতে আফ্রিদির সঙ্গে ছিল সে। কিন্তু ঠিক বনিবনা হচ্ছিল না। কিছুদিন দিল্লিতে থেকে পরিবেশ-পরিস্থিতি পছন্দ না হওয়ায় সে শিলিগুড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়।

    রাজধানীতে যাওয়ার আড়াই মাস পরে কিশোরী একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায় শিলিগুড়ি ফিরে আসে। আফ্রিদির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়।

    নাবালিকার পরিবারের দাবি, হঠাৎ দিল্লি ছেড়ে চলে যাওয়ায় তার খোঁজ শুরু করেন আফ্রিদি। কয়েকদিন আগে তিনি ফের নাবালিকার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। আবারও ফিরে আসে পুরোনো চিত্রনাট্য। ইতিমধ্যে কিশোরী সাবালিকা হয়ে গিয়েছে।

    এখন তাঁর বয়স ১৮ বছর চার মাস। সদ্য তরুণী আফ্রিদিকে ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনা করেন। অভিযোগ, যোগাযোগ ফের তৈরি হতে আফ্রিদি আবার শুরু করেন ব্ল্যাকমেল। ফের তরুণীর একান্ত মুহূর্তের ভিডিও সংগ্রহ করেন তিনি।

    তাঁর সঙ্গে দেখা করতে শিলিগুড়ি আসার ইচ্ছেপ্রকাশ করেন। এই প্রস্তাবে তরুণী রাজি হয়ে যান। পরিকল্পনা অনুযায়ী শুক্রবার দিল্লি থেকে শিলিগুড়িতে এসে পৌঁছন। সেই সময়ে পুলিশ পাকড়াও করে তাঁকে।

    গত সেপ্টেম্বরে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেও প্রায় ন’মাস কেটে গেলেও সাইবার ক্রাইম থানা আফ্রিদির নাগাল পায়নি। সূত্রের খবর, সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্ট-সহ অন্যান্য তথ্য পুলিশকে দেওয়া হয়েছিল।

    শেষমেশ তরুণীর বুদ্ধিতে জালে পড়েলেন ভিন্ রাজ্যের তরুণ। শনিবার ধৃতকে শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে পেশ করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। নাবালিকা থাকাকালীন পরিবার অভিযোগ দায়ের করায় আফ্রিদির বিরুদ্ধেও মামলা হবে পকসো আইনে।

  • Link to this news (এই সময়)