• কয়েক ঘণ্টার প্লাবনে ভেঙেছে পথঘাট, ভরসা শুধু নৌকো
    এই সময় | ২১ জুন ২০২৫
  • সমীর মণ্ডল, গড়বেতা

    টানা দু’দিন বৃষ্টির পরে শিলাবতীর বাঁধ উপচে জল ঢুকে পড়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা ১ এবং গড়বেতা ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায়। বুধবার রাত থেকে জল ঢুকতে শুরু করে। অনেকেই ঘুম থেকে উঠে দেখেন, ঘরের মেঝেতে জল থইথই করছে।

    বৃহস্পতিবার জলমগ্ন হয়ে পড়ে আরও কিছু গ্রাম। ঘরছাড়া হতে হয় বহু মানুষকে। কোনওক্রমে দরকারি জিনিসপত্র নিয়ে তাঁরা আশ্রয় নেন স্কুল, পঞ্চায়েত ভবন কিংবা ত্রাণ শিবিরে।

    রাস্তা ভেঙে বেশ কিছু এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কয়তা, গাংড়া, বেনাচাপড়া, ব্রাহ্মণগ্রাম, সন্ধিপুর, বড়মুড়া গ্রামের কাঁচা-পাকা রাস্তা জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে।

    বেনাচাপড়ার সঙ্গে সংযোগকারী কজ়ওয়ে ভেঙে যাওয়ায় পুরো গ্রাম কার্যত বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা সাধন রায় বলেন, ‘লোকজন যাতায়াত করতে পারছেন না। অসুস্থদের হাসপাতালে নিয়ে যাব কী ভাবে?’

    বেশ কিছু এলাকায় পণ্যবাহী গাড়ি তো দূরের কথা, বাইক বা সাইকেলও চালানো যাচ্ছে না। বেনাচাপড়ার সমরেশ মাজির কথায়, ‘চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে হবে। কিন্তু গাড়ি চলছে না। অস্থায়ী নৌকায় যাতায়াত করতে হচ্ছে।’

    প্রবল জলের স্রোতে গ্রামের একাধিক মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে। বিশেষ করে গড়বেতা ১ ব্লকের কয়তা ও গাংড়া, গড়বেতা ২ ব্লকের আগরবাঁধ ও বেনাচাপড়ায় মাটির ঘর ভেঙে গিয়ে মানুষ খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় নিয়েছেন।

    গাংড়ার পদ্মা দোলই কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘রাতে ঘরে জল ঢুকে যায়। দেওয়াল ফাটতে থাকে। বাচ্চাদের নিয়ে কোনও রকমে বেরিয়ে পড়ি। এখন কী হবে, জানি না।’

    এলাকা জলভাসি হওয়ায় পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অনেক নলকূপ জলের তলায় চলে গিয়েছে। সন্ধিপুরের বৃদ্ধা প্রতিমা দাস বলেন, ‘নলকূপ সব জলের তলায়। পিএইচই-এর জল এসেছে। কিন্তু পরিমাণে খুব কম।’

    গড়বেতা ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীনবন্ধু দে জানান, প্রাথমিক হিসেবে ১৮০ হেক্টরেরও বেশি আনাজ চাষ নষ্ট হয়েছে। ধান চাষেরও ক্ষতি হয়েছে। আগরবাঁধের কৃষক নিরঞ্জন পাত্র বলেন, ‘বছরভর যে ফসলের দিকে তাকিয়েছিলাম, সব শেষ। সরকার ক্ষতিপূরণ না দিলে কী করে চলবে?’

    শুক্রবার গড়বেতা ১ ব্লকের ব্রাহ্মণগ্রাম এবং গড়বেতা ২ ব্লকের আগরবাঁধ গ্রামে যান সেচ দপ্তরের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। সঙ্গে ছিলেন আর এক মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো-সহ জেলা ও রাজ্য প্রশাসনের একাধিক কর্তা।

    গড়বেতায় এ দিন নতুন করে কোনও এলাকা জলমগ্ন হয়নি। তবে ত্রাণ না-পেয়ে লোকজন ক্ষুব্ধ। বেনাচাপড়া এলাকার কয়তা, গাংড়া গ্রামের বাসিন্দারা জল, ত্রিপল, খাবার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন প্রশাসনের লোকজনদের কাছে।

    ত্রাণ না- পাওয়ায় অভিযোগ রয়েছে গড়বেতা ২ ব্লকের বেশ কিছু এলাকাতেও। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘ত্রাণের কোনও সমস্যা নেই। সর্বত্রই জল, ত্রিপল, ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।’

    গ্রামবাসীদের দাবি, দ্রুত ত্রাণ বিতরণ নিশ্চিত করা হোক। পানীয় জলের সুষ্ঠু ব্যবস্থা, ভেঙে যাওয়া রাস্তাঘাট মেরামত এবং ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক। তাঁরা বলছেন, ‘মুখে আশ্বাস নয়, কাজ চাই। নদী বাঁধগুলো মেরামত না-হলে আবার এই দুর্দশা হবে।’

    প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বৃষ্টি পুরোপুরি থামলে মেরামতির কাজ শুরু হবে। আপাতত জোর দেওয়া হচ্ছে ত্রাণ ও স্বাস্থ্য পরিষেবার উপরে।

    মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার আশ্বাস, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরা রিপোর্ট দিচ্ছেন। ত্রাণ বিলিতে কোনও ত্রুটি হচ্ছে না। প্লাবিত এলাকায় দল পাঠানো হয়েছে। যদি কোথাও ত্রাণ না-পৌঁছয়, অবিলম্বে জানান। আমরা ব্যবস্থা নেব।

  • Link to this news (এই সময়)