• ECL-কে জমি, তিন দশক পরে ২৫ লক্ষ ক্ষতিপূরণের রায় কোর্টের
    এই সময় | ২১ জুন ২০২৫
  • এই সময়, আসানসোল: প্রায় সাড়ে তিন দশকের দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর রানিগঞ্জে ইসিএল-কে খনির জন্যে জমি দেওয়া পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৫ লক্ষ টাকা ছ’সপ্তাহের মধ্যে দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।

    জমিমালিক বাদল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাপ্য আদায়ে মামলা করেছিলেন। কিন্তু জীবিত অবস্থায় কোনও সুরাহা পাননি। তাঁর লড়াইটা টেনে নিয়ে গিয়েছেন বিধবা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাদলের একমাত্র ছেলে জয়।

    শেষ পর্যন্ত জয় ছিনিয়ে আনতে পেরেছেন তাঁরা। তাঁদের ক্ষতিপূরণের দাবিকে মান্যতা দিয়েছে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং ঋতব্রতকুমার মিত্রর ডিভিশন বেঞ্চ।

    সেই আশির দশকের গোড়ায় খনির জন্যে ইসিএল-এর জমি অধিগ্রহণ নীতি মেনে বাদলবাবু তাঁর দু’একর জমি দিয়েছিলেন ল্যান্ড লুজার্স স্কিমে। ওই স্কিম অনুযায়ী তাঁর প্রাপ্য ছিল হয় চাকরি অথবা ২০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা।

    কিন্তু ইসিএল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ১৯৭৯-এর ইসিএল ল্যান্ড লুজার্স স্কিম অনুযায়ী সুবিধা দেননি বলে অভিযোগ। অনেক চিঠিচাপাটির পরে ১৯৯২ সালে হাইকোর্টে মামলা করেন বাদল।

    কিন্তু তিন বছর পরে তিনি মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন ইসিএল তাঁকে নিয়ম অনুযায়ী কয়লা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায়। তবে ইসিএল কর্তৃপক্ষ কথা রাখেননি। ফলে ১৯৯৮ সালে ফের মামলা করেন বাদল। মামলা চলতে চলতেই মারা যান।

    তাঁর অবর্তমানে ২০০৮ সালে মামলাটি খারিজ হয়ে যায় আবেদনকারীর তরফে শুনানিতে কোনও আইনজীবী না–থাকায়। এই অবস্থায় লড়াইটা শুরু করেন মমতা। নতুন করে মামলা দায়ের করেন।

    কিন্তু হাইকোর্টের সিঙ্গল এবং ডিভিশন বেঞ্চ এত পরে নতুন করে এমন মামলা গ্রহণ করেনি। স্পেশাল লিভ পিটিশন দায়ের হয় সুপ্রিম কোর্টে। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট আপিল খারিজ করলেও জানায়, ২০০৮ সালে খারিজ হওয়া বাদলবাবুর পুরোনো মামলাটি নতুন করে শুনানির জন্যে হাইকোর্টে আবেদন করা যাবে।

    এই সূত্রেই পুরোনো মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। বাদলবাবুর জায়গায় মামলাকারী হিসেবে স্বীকৃতি পান মমতা ও জয়। ২০১৪ সালে হাইকোর্ট ইসিএলকে মমতাদের আবেদন বিবেচনা করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়।

    কিন্তু ২০১৪-র ৯ অক্টোবর ইসিএল আবেদন অগ্রাহ্য করে জা‍নায়, ল্যান্ড লুজার্স স্কিমে কোনও সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা অনেক আগেই বন্ধ হয়েছে। পরিবারের উত্তরাধিকারী হিসেবে অন্য এক জন কাজও পেয়েছেন।

    ফলে ওই পরিবারের আর কোনও কিছু প্রাপ্য নেই। হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ বিষয়টি সেখানেই নিষ্পত্তি করে দিলেও মানতে পারেননি মমতারা। ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেন। ইসিএলের জেনারেল ম্যানেজারের ১৯৯৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বরের একটি চিঠি আদালতের নজরে আসে। যেখানে বাদল বন্দ্যোপাধ্যায়কে ল্যান্ড লুজার বলেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।

    ফলে ইসিএলের দায় এড়ানোর যাবতীয় যুক্তি খারিজ হয়ে যায় ডিভিশন বেঞ্চে। জমির বদলে চাকরি বা কয়লা দেওয়ার নিয়ম বাতিল হয়ে গিয়েছে মেনে ইসিএলকে ২৫ লক্ষ টাকা এককালীন ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। ৬ সপ্তাহের মধ্যে ওই টাকা মিটিয়ে নির্দেশ কার্যকরী করতে বলেছে হাইকোর্ট।

  • Link to this news (এই সময়)