নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: কথায় আছে, রাখে হরি মারে কে? ভারী বর্ষায় ফুলেফেঁপে উঠেছে কংসাবতী। বৃষ্টিতে নদীতে মাছও বেড়েছে। তাই শুক্রবার ভোরে জাল নিয়ে নদীতে গিয়েছিলেন ডেবরা ব্লকের গোলগ্রাম পঞ্চায়েতের নন্দবাড়ির স্বপন মণি। একটি বাঁশের মাচায় চড়ে নদীতে জাল ফেলার সময় জলের তোড়ে মাচাসহ ভেসে যান। কচুরিপানায় জড়িয়ে মাচা সহ পাঁশকুড়ার মাইসোরার দিকে ভেসে যাচ্ছিলেন তিনি। প্রায় ১০কিমি ভেসে যাওয়ার পর সকাল ৭টা ১০মিনিট নাগাদ পাঁশকুড়ার ফকিরবাজার বালিঘাটে বেঁধে রাখা নৌকা থেকে রশি ছুঁড়ে তাঁকে পাড়ে তোলার ব্যবস্থা করা হয়। আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ভরা কংসাবতীর স্রোতের ধকলে কাহিল ওই প্রৌঢ়কে টোটোয় চাপিয়ে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন ফকিরবাজারের মদন গেরুয়া, উত্তম সিং সহ অন্যরা।
শুক্রবার সাতসকালে কংসাবতী নদীতে জলের স্রোতে স্বপনবাবুকে ভেসে যেতে দেখে নদীপাড়ে হইচই পড়ে যায়। মাইসোরার বেশ কয়েকজন যুবক নদীবাঁধ বরাবর রাস্তায় বাইক ছুটিয়ে এগোতে থাকেন। সেইসঙ্গে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘একজন ভেসে যাচ্ছেন, কেউ বাঁচানোর চেষ্টা করুন।’ নদীর পাড়ে তখন লোকজনের ভিড় জমতে শুরু করেছে। মাইসোরা পঞ্চায়েতের ফকিরবাজারে একটি বালিঘাটে নৌকা বাঁধা ছিল। সেই নৌকায় চড়ে কয়েকজন কংসাবতীতে ভেসে আসা স্বপনবাবুকে লক্ষ্য করে লম্বা রশি ছুঁড়ে দেন। স্বপনবাবু সেটি ধরে ফেলতেই নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামবাসীরা আনন্দে চিৎকার করে ওঠেন। ওই রশি ধরে কোনওভাবে নদীর ধারে পৌঁছন স্বপনবাবু। তারপর নলবনে লাফ দিয়ে পাড়ে উঠে আসেন। জল, বাতাসা খাইয়ে কিছুটা বিশ্রামের পর তাঁকে টোটোয় চাপিয়ে বাড়ির উদ্দেশে পাঠানো হয়।গোলগ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, উনি মাছ ধরার জন্য জাল নিয়ে ভোর ৪টা ৪৫মিনিট নাগাদ কংসাবতী নদীতে গিয়েছিলেন। বাঁশের মাচায় চেপে জাল ফেলার সময় আচমকা স্রোতে ওই মাচা সহ ভেসে যান। মাচার চারপাশে কচুরিপানা আটকে গিয়েছিল। ভাসতে ভাসতে প্রায় ১০কিমি দূরে ফকিরবাজার এলাকায় পৌঁছনোর পর তাঁকে উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে অনেকে নদীবাঁধ বরাবর মোটরবাইক নিয়ে তাঁর পিছু নিয়েছিলেন।
উদ্ধারে হাত লাগানো মদনবাবু ও উত্তমবাবু বলেন, সাতসকালে মানুষের চিৎকার শুনে আমরা নদীপাড়ে আসি। তখন একজনকে ভরা নদীর স্রোতে কচুরিপানার সঙ্গে ভেসে যেতে দেখি। আমরা চটজলদি নৌকায় গিয়ে মোটা দড়ি ছুঁড়ে দিই। ওই ব্যক্তি দড়ি ধরে স্রোত প্রতিহত করে পাড়ের দিকে এগোতে থাকেন। তারপর তাঁকে পাড়ে টেনে তোলা হয়।
বৃহস্পতিবার থেকেই কংসাবতী নদীর জল বাড়তে শুরু করেছে। শুক্রবার সকাল ১১টা নাগাদ পাঁশকুড়ায় ডোমঘাটে জলের তোড়ে সাঁকো ভেসে গিয়েছে। এর ফলে সাঁকোর বাঁশ এবং কচুরিপানা হরিনারায়ণচকে কংক্রিটের সেতুতে ধাক্কা মারে। সেখানে জলের গতি আটকে যাচ্ছিল। তাই সেচদপ্তরের তরফে ওই ভাঙাচোরা বাঁশ ও কচুরিপানা নদী থেকে তোলার ব্যবস্থা হয়। এরপর বেলা ১২টায় চৈতন্যপুর-১ পঞ্চায়েতের মাগুরি-জগন্নাথচকে কংসাবতীর সাঁকো ভাঙে। বেলা গড়াতেই পাঁশকুড়ার ঘোলমাগুরিতেও সাঁকো ভেঙে পড়ে। পর পর সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় নদীর দুই পাড়ের মধ্যে যোগাযোগে সমস্যা হচ্ছে। স্কুল, পোস্ট অফিস, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাতায়াতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। পাঁশকুড়ার গড় পুরুষোত্তমপুরে চলছে বাঁধ মেরামতির কাজ।-নিজস্ব চিত্র