• ঝাড়গ্রামে হাতির হানায় মৃত্যু যুবকের, জখম ২
    বর্তমান | ২১ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: ঝাড়গ্রামে হাতির হামলায় মৃত্যুমিছিল অব্যাহত। বৃহস্পতিবার রাতে নয়াগ্ৰামের বড়ামারা গ্ৰামে হাতির হানায় ফের একজনের মৃত্যু হল। মৃত যুবকের নাম বাকে হাঁসদা। তাছাড়া শুক্রবার সকালে সাঁকরাইল ব্লকের মৌ ভাণ্ডার গ্ৰামে শেফালী ও দিপালী মাহাত নামে দুজন হাতির আক্রমণে জখম হয়েছেন। গ্রামে গ্রামে হাতির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। গ্ৰামবাসীরা তাঁদের প্রাণ বাঁচাতে আকুতি জানাচ্ছেন প্রশাসনের কাছে। 

    খড়্গপুর বনবিভাগের ডিএফও মণীশ যাদব বলেন, ওড়িশা থেকে বড় একটি হাতির দল ঢুকে পড়ছে। নয়াগ্ৰামের বড়ামারা গ্ৰামে হাতির হানায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। সাঁকরাইল ব্লকের মৌ ভাণ্ডার গ্ৰামে হাতির আক্রমণে একজন গুরুতর জখম হয়েছেন, আর একজনের জখম অল্প। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। চেষ্টা চলছে হাতির দলটিকে সরিয়ে দেওয়ার। 

    খড়্গপুর রেঞ্জে ৭০টি হাতির একটি দল ঘুরে বেড়াচ্ছে। জমিতে ফসল না থাকায় দলটি খাবারের সন্ধানে নয়গ্ৰাম ও সাঁকরাইল ব্লকের গ্ৰামগুলোতে বাড়িঘর ভাঙচুর করছে। সুবর্ণরেখা নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার ওড়িশা থেকে বড় একটি হাতির দল কেশররেখা রেঞ্জের জঙ্গলে ঢোকে। সেই দলে ২৫ থেকে ৩০টি হাতি ছিল। বড়ামারা গ্ৰামের পাশেই জঙ্গলটির অবস্থান। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা হাতি দেখতে যান। তখনই একটি হাতির তাড়া খেয়ে বাকে হাঁসদা পড়ে যান। হাতিটি তাঁকে শুঁড়ে তুলে আছাড় মারে। বাকেকে গুরুতর জখম অবস্থায় নয়াগ্ৰাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। বাকের খুড়তুতো ভাই নিমাই হাঁসদা বলেন, বিকেলে ঘটনাটি ঘটে। দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাঁচানো যায়নি। নয়াগ্ৰাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রুপা বেরা বলেন, ব্লকের বেশ কিছু এলাকায় হাতি ঢুকে প্রতিদিন বাড়িঘর ভাঙচুর করছে। মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। হাতি পাল আটকানো না গেলে আরও মানুষের মৃত্যু হবে। বনবিভাগ দ্রুত পদক্ষেপ করুক। সাঁকরাইলের মৌ ভাণ্ডার গ্ৰামে একটি হাতি শুঁড়ে করে শেফালি মাহাত নামে এক বৃদ্ধার হাত ভেঙে দিয়েছে। বৃদ্ধার পুত্রবধূ দীপালি মাহাত সামান্য জখম হয়েছেন। দুপুরে হাতিটি গ্ৰাম পঞ্চায়েতের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পুলিসের গাড়ি ভাঙচুর করে গ্ৰামগুলোতে তাণ্ডব চালায়। বিকেলে এলাকার একটি গোয়ালঘরে থাকা গোরুর পেটে দাঁত ঢুকিয়ে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয়। আঁধারি গ্ৰাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রণব দুহারী বলেন, দলছুট হাতিটি গতকাল রাতে এলাকায় ঢুকেছিল। এদিন সকাল থেকে এলাকাজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত। হাতিটিকে এখনও সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। গ্ৰামবাসীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। জঙ্গলমহল স্বরাজ মোর্চার সভাপতি অশোক মাহাত বলেন, কয়েকদিন আগেই হাতির হানা রোখার দাবিতে গণ কনভেনশন হয়েছে। একাধিক দাবিদাওয়া তুলে ধরা হয়েছে। বনবিভাগ ও হাতি উপদ্রুত গ্ৰামের বাসিন্দাদের নিয়ে যৌথভাবে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। সেই উদ্যোগের বাস্তবায়ন না হলে জঙ্গলমহলে হাতির সমস্যা মিটবে না।
  • Link to this news (বর্তমান)