বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই গাড়ি নিয়ে রওনা দেন বরের বন্ধুরা
বর্তমান | ২১ জুন ২০২৫
সংবাদদাতা,পুরুলিয়া: বিয়ের আচার অনুষ্ঠানের মাঝেই বরের সঙ্গে সেলফি তোলেন সকলেই। একে অপরের মধ্যে সামান্য কুশল বিনিময়ও হয়। খাওয়া-দাওয়া আগেই হয়ে গিয়েছিল। ফলে, বিয়ে শেষ হওয়ার আগেই আচমকা নিজেদের গাড়ি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছিলেন বরের বন্ধুরা। পথেই বলরামপুরে ঘটে যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। লরির ধাক্কায় দুমড়ে মুচড়ে যায় তাঁদের গাড়িটি। মারা যান চালক সহ ন’জন বরযাত্রী।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়খন্ডের গৌরাঙ্গকচা গ্রামের বাসিন্দা নবকুঞ্জ মাহাত। তাঁর বিয়ে ঠিক হয় বরাবাজারের আদাবনা গ্রামে। ছোটবেলাতেই নবকুঞ্জের মা মারা যান। সেই ঘটনার পর থেকেই প্রায় ২০ বছরেরও বেশি সময় মামাবাড়ি তিলাইটাঁড় গ্রামেই কাটিয়েছেন নবকুঞ্জ। পরে মামাবাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে থাকা শুরু করলেও প্রায় দু’দশক কাটানো মামাবাড়ির গ্রামের সঙ্গে আলাদা একটা টান ছিল তাঁর। মামাবাড়ির গ্রামে বন্ধুরও অভাব ছিল না। বৃহস্পতিবার ছিল নবকুঞ্জের বিয়ের দিন। তাই মামাবাড়ির গ্রাম থেকেই গাড়ি করে সোজা কনের বাড়িতে এসে পৌঁছন দুই ভাই অজয়-বিজয় সহ ন’জন। বর আসার আগেই কনের বাড়িতে খাওয়া দাওয়াও করে নেন তাঁরা। আর দেরি না করে বাড়ির পথে রওনা দেন। বাড়িতে ঢোকার ঠিক ২০ কিমি আগেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তাঁদের গাড়িটি।
নবকুঞ্জ বলছিলেন, ‘রাতভর বৃষ্টি হচ্ছিল। কনের বাড়িতে পৌঁছতেই আমাদের প্রায় ভোর চারটে বেজে যায়। বিয়ের প্রস্তুতি সবে শুরু হয়েছিল। তারমধ্যেই অজয়-বিজয় সহ মামাবাড়ি থেকে আসা কয়েকজন এসে সেলফিও তোলেন। তাঁদের সঙ্গে ছবি তোলা হলেও ভিড়ের চাপে তেমন কথা হয়নি। তারপর ওরা কখন যে কনের বাড়ি ছেড়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে, খেয়াল করতে পারিনি। আমি বিয়ের আচার অনুষ্ঠানেই ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কেউ সরাসরি আমাকে দুর্ঘটনার কথা বলেননি। তবে ভিড়ের মধ্যেই কানাঘুষো শুনতে পাচ্ছিলাম। বিয়ের নিয়ম পেরোতেই গোটা বিষয়টি জানতে পারলাম।’ তিনি আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘মা মারা যাওয়ার পর মামাবাড়িতেই দু’দশকেরও বেশি সময় কাটিয়েছি। ওরা শখ করে বিয়েতে এল। আর এভাবে তাঁদের নিথর দেহ গ্রামে ফিরে যাবে, কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না। শুক্রবার দুপুরে নব বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে নিজের গ্রামে আসি। বৌভাতের সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। আত্মীয়রা ফিরে যাওয়া শুরু করেছেন।’
শুক্রবার সকালে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মেয়েকে বিদায় জানানোর আগেই ঘটনাস্থল বলরামপুর ছুটে যান পাত্রীর বাবা তপন মাহাত। বরাবাজার থানার আদাবনা গ্রামের বাসিন্দা তপনবাবু বলেন, ‘তিন মেয়ে। তারমধ্যে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় মেয়ের বিয়ে ছিল। বরযাত্রী ভোরবেলা বাড়িতে আসে। তাই বিয়ের আচার অনুষ্ঠানে দেরি হয়। সকালবেলা বিয়ের আচার অনুষ্ঠান চলার সময়ই দুর্ঘটনার খবর পাই। মেয়েকে বিদায় জানানোর সময় আর ঘরে থাকতে পারিনি। বলরামপুর গিয়ে দেখি একের পর এক দেহ পড়ে রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী মেয়ের শ্বশুরবাড়ি গিয়ে মেয়েকে নিয়ে আসব। তবে কনেযাত্রীর সব গাড়ি বাতিল করে দিয়েছি। ওরা আমার বাড়িতে থেকে ফেরার পথেই এতবড় ঘটনা ঘটল। তারপর আর বাড়িতে বসে থাকতে পারিনি। মেয়েকে ছেড়েই ঘটনাস্থলে ছুটেছিলাম। কিন্তু ততক্ষনে সব শেষ।’
বরযাত্রীদের গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে রাস্তার পাশে উল্টে গিয়েছে ট্রেলারটি। নিজস্ব চিত্র