কালীগঞ্জে মহিলারা বিপুল হারে ভোট দেওয়ায় আশাবাদী তৃণমূল
বর্তমান | ২১ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি কৃষ্ণনগর: কালীগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে ৯০ হাজারের বেশি মহিলা ভোটার ভোট দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, মহিলা ভোট পড়েছে ৯০ হাজার ৩২৫টি। পুরুষদের ভোটদানের তুলনায় কিছুটা কম হলেও, মহিলাদের বিপুল হারে ভোট দানে আশা জাগিয়েছে ঘাসফুল শিবিরে। যার অন্যতম কারণ হল লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কালীগঞ্জ ব্লকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের উপভোক্তার সংখ্যা ৯০ হাজার ৩৯৬। তাই মহিলা ভোটের সিংহভাগটাই তৃণমূল কংগ্রেসের ঝুলিতে যেতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যদিও সামগ্রিকভাবে উপনির্বাচনে কালীগঞ্জ বিধানসভায় ভোটদানের হার চমকে দিয়েছে রাজনৈতিক মহলকেও। কারণ ভোটদানের হার ৭৩.৩৬ শতাংশ। ভোটের দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সত্ত্বেও ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে খুশি নির্বাচন কমিশনও।
গত এপ্রিল মাসে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ভোটার তালিকার সংশোধনের কাজ শুরু করা হয়। নতুন ভোটার তালিকা অনুযায়ী কালীগঞ্জ বিধানসভায় মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লক্ষ ৫২ হাজার ৬৭০জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লক্ষ ৩০ হাজার ৩৬৩জন এবং মহিলা ভোটার এক লক্ষ ২২ হাজার ৩০৩জন। ১৯ জুন কালীগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে পুরুষ ভোট পড়েছে ৯৫ হাজার ৩৯টি এবং মহিলা ভোট পড়েছে ৯০ হাজার ৩২৫টি। একটি অন্যান্য। অর্থাৎ মোট ভোট পড়েছে এক লক্ষ ৮৫ হাজার ৩৬৫টি।
তবে কালীগঞ্জ বিধানসভায় হিন্দু ভোটের দিকে নজর রয়েছে সব রাজনৈতিক দলের। নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর থেকেই বুথভিত্তিক ভোট পড়ার হিসেব নিকেশ শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল, বাম-কংগ্রেস ও বিজেপি। কারণ কালীগঞ্জ বিধানসভায় প্রায় ৬০ শতাংশের কাছাকাছি মুসলিম ভোট রয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনেও যার সিংহভাগই গিয়েছিল ঘাসফুল শিবিরের ঝুলিতে। অন্যদিকে হিন্দু ভোটের বড় অংশ যায় বিজেপির ঝুলিতে। যার জেরে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৬৪ হাজার ভোট পায় কালীগঞ্জ বিধানসভা থেকে।
এই উপনির্বাচনে বিজেপি সচেষ্ট ছিল হিন্দু ভোট ধরে রাখতে। যার জন্য নির্বাচনের দিন হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পঞ্চায়েত গুলিতেই বিজেপি নিজেদের এজেন্ট দিতে মরিয়া ছিল। তেমনই তৃণমূলও মরিয়া হয়েছিল এই মিথ ভাঙতে। সে জন্যে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পঞ্চায়েত গুলিতে ব্যাপক প্রচার চালায় ঘাসফুল শিবির। যদিও ভোটের ফলাফল বেরলেই তার পরিষ্কার হবে।
তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী আলিফ আহমেদ বলেন, মহিলা ভোট পোল ভালো হয়েছে। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। ভোট বাক্সেও তাঁর প্রভাব পড়বে বলে আমরা আশাবাদী।
সিপিএম নেতা দেবাশিস আচার্য বলেন, তৃণমূল ও বিজেপি একই মুদ্রার দুই পিঠ। তাই তারা মেরুকরণের রাজনীতি করতেই ব্যস্ত। আমরা মানুষের রুটি রুজির দাবি নিয়ে ভোটে প্রচার করেছি। মানুষের মধ্যে তাতে ভালো সাড়াও পেয়েছি। উপ নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট ভালো ফল করবে বলে আমরা আশাবাদী। কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার বিজেপির মুখপাত্র সন্দীপ মজুমদার বলেন, আমরা ভোটের ফলাফল নিয়ে আশাবাদী। বিভিন্ন বুথে আমাদের ভালো পোল হয়েছে। ভোটের ফলাফল বেরলেই তা স্পষ্ট হবে। অবশ্য নির্বাচনের দিন সামগ্রিকভাবে কমিশনের কাছে মোট ১৪টি অভিযোগ জমা পড়েছিল। যার মধ্যে সিংহভাগটাই ছিল বাম-কংগ্রেস জোটের। তবে শুক্রবার স্ক্রুটিনিতে তৃণমূল ও বিজেপির তরফ থেকে কোনও অভিযোগ জানানো হয়নি। তবে নির্ধারিত সময় সন্ধ্যে সাড়ে ৬টার পরিবর্তে কেন বিভিন্ন বুথে ৬টা মধ্যেই ভোট প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে তা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছে বাম-কংগ্রেস জোট।