নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: ত্রাণ শিবিরেই ঢুকল জল! গত তিনদিন ধরে জলের তলায় পুরুলিয়া শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধুডাঙা এলাকা। সাধুডাঙার নিচু এলাকাগুলিতে একতলা সমান জল জমে গিয়েছে। সাধুডাঙার প্রায় শতাধিক বাসিন্দাকে সাধুডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি বেসরকারি অতিথিশালায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যদিও শুক্রবার ভোরে দেখা যায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেই ত্রাণ শিবিরেই কোমর সমান জল! খোদ চেয়ারম্যানের ওয়ার্ডেই এই পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা যায় বাসিন্দাদের। তবে, দিনরাত দুর্গতদের সঙ্গে থেকে সেই ক্ষোভ অনেকটাই মেটাতে পেরেছেন চেয়ারম্যান।
শুক্রবার দুপুরে চেয়ারম্যান নবেন্দু মাহালি বলেন, আমি উদ্ধারকার্য থেকে শুরু করে ত্রাণ-সবকিছুই তদারকি করছি। গোটা শহরের জল সাধুডাঙা দিয়ে বের হয়। কিন্তু রেল অপরিকল্পিতভাবে লাইন পাততে গিয়ে নিকাশি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে যে পরিমাণ জল বের হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না। আমরা রেলকে বছরখানেক আগেই চিঠি দিয়ে এই ব্যাপারে অবগত করেছিলাম। রেল তখন যদি কর্ণপাত করত, তাহলে বাসিন্দাদের এই দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হতো না। সমস্যার সমাধানে বৃহস্পতিবার আমরা রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। রেলের তরফে জল নিকাশি ব্যবস্থার জন্য চেষ্টাও করা হয়েছিল। যদিও সেই সমস্যার সমাধান তারা করতে পারেনি। ফলে এদিন সকালে আগের তুলনায় জল আরও বেড়ে যায়। কোমর সমান জল জমে যায় ত্রাণ শিবিরেও। সেখান থেকে দুর্গতদের রেল ওভারব্রিজের নীচে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁদের খাওয়া দাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছে পুরসভার তরফে।
দূর্গতদের অন্যতম আরতি মাহাত বলেন, এক কাপড়ে বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল। সাধুডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানেও জল ঢুকে যাওয়ায় রেল ওভারব্রিজের নীচে রয়েছি। অঞ্জনা মাহাত বলেন, থাকার শোয়ার বড় সমস্যা হয়ে গিয়েছে আমাদের। বাড়ি অর্ধেক ডুবে গিয়েছে। তিনদিন ধরে ঘরছাড়া রয়েছি। তবে চেয়ারম্যান তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। তবে, শুক্রবার দিনভর সেভাবে বৃষ্টি না হওয়ায় জল নামতে শুরু করেছে বিভিন্ন এলাকা থেকে। আগের তুলনায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৩.২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে পুরুলিয়ায়। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রের খবর, ১৯৫১-র পর থেকে জুনে পুরুলিয়া মাত্র একবারই ২৪ ঘণ্টায় এর চেয়ে বেশি বৃষ্টি পেয়েছে। ১৯৯৬–এর ২৩ জুন পুরুলিয়ায় ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ১৪৭.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৯২.৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে পুরুলিয়ায়।