• জেলেই ছক ও গ্যাং গঠন, নুহতে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিখুঁত অপারেশন
    বর্তমান | ২১ জুন ২০২৫
  • সুব্রত ধর, শিলিগুড়ি: জেলে পরিচয়! নুহতে প্রশিক্ষণ! এরপর অপারেশন! ময়নাগুড়ির এটিএম লুট কাণ্ডের তদন্তে এমন তথ্য পেয়েছে পুলিস। তাদের সন্দেহ, এভাবেই ছোট ছোট টিম তৈরি করে এটিএম লুট চালাচ্ছে হরিয়ানার ‘নুহ গ্যাং’। অপারেশনের আগে লরি চালকের বেশে এলাকায় রেইকি করছে গ্যাংয়ের সদস্যরা। এদিকে, পাঁচ মাসে রাজ্যে প্রায় ন’টি এটিএম থেকে লুট দেড় কোটির বেশি টাকা। প্রায় প্রতিটির সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট গ্যাংয়ের যোগ স্পষ্ট। এজন্য ময়নাগুড়ি কাণ্ডে ধৃতদের হেফাজতে নিতে প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিভিন্ন জেলা।

    গত শুক্রবার ময়নাগুড়িতে দু’টি এটিএম কাউন্টার থেকে ৫৪ লক্ষ টাকা লুটের ঘটনায় চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। ধৃতদের নাম নরেশ কুহেলি, আসলুফ খান, ইরফান খান ও মহম্মদ সামসের খান। প্রথম দু’জন হরিয়ানার নুহ এলাকার বাসিন্দা। তৃতীয় জন রাজস্থান ও চতুর্থ জন বিহারের। ধৃতদের জেরা করে পুলিস চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেয়েছে।

    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, একদা বিভিন্ন অপরাধে নাসিক জেলে বন্দি ছিল ধৃতরা। সেখানেই তাদের পরিচয়। সেখানেই তারা এটিএম কাউন্টার লুটের গ্যাং গঠন করে। জামিনে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে এলাকায় লরি চালকের ছদ্মবেশে রেইকি করা, চোরাই গাড়ি জোগাড়, টাইম ধরে এটিএম কাউন্টারের ভল্ট কাটা প্রভৃতির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যার উপর ভিত্তি করেই ওরা ময়নাগুড়িতে অপারেশন  চালায়। রাজ্য পুলিসের উত্তরবঙ্গের আইজি রাজেশ যাদব বলেন, ধৃতদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি, ধৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

    সংশ্লিষ্ট গ্যাংয়ের সদস্যদের মধ্যে দায়িত্বও ভাগ রয়েছে। পুলিস সূত্রের খবর, সামসের ওয়েলডিংয়ের কাজ জানে। সেজন্য সে গ্যাসকাটার দিয়ে মেশিন কাটার কাজ করে। এরবাইরে একজন স্প্রে করে কাউন্টারের সিসি ক্যামেরা কালো করে এবং সাইরেনের তার কেটে দেয়। আর দু’জন গাড়ি চালানো, রেইকি করার দায়িত্বে ছিল। তবে, ওই গ্যাংয়ের একজন এখনও অধরা। রাজ্য পুলিসের উত্তরবঙ্গের আইজি বলেন, ফেরার দুষ্কৃতীর খোঁজ চলছে।

    এদিকে, কয়েক মাসে পরপর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এটিএম লুটের ঘটনা ঘটেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে হাওড়ার সাঁকরাইলে দু’টি এটিএম থেকে ১৬ লক্ষ টাকা লুট করা হয়। এই ঘটনাতেও নুহ গ্যাংয়ের সংযোগ মেলে। ইতিমধ্যে পুলিস একজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। মার্চ মাসে রায়গঞ্জ ও ইটাহারের দু’টি এটিএম থেকে লুট করা হয় ৩৩ লক্ষ ও ১৫লক্ষ টাকা। স্থানীয় একজনকে গ্রেপ্তার করলেও ঘটনায় নুহ গ্যাং জড়িত বলেই পুলিসের কাছে খবর। মে মাসে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বালিসাই ও দেউলিহাটের জোড়া এটিএম থেকে লুট করা হয় ৪০ লক্ষ টাকা। এরপর ময়নাগুড়ির ঘটনা। সবশেষে শিলিগুড়িতে জোড়া এটিএম থেকে ১০ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা লুট।

    পুলিস সূত্রের খবর, ময়নাগুড়ির এটিএম কাণ্ডে ধৃতদের মধ্যে নরেশ ও ইরফান অন্যতম মাস্টারমাইন্ড। এরা রায়গঞ্জ ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ঘটনার সঙ্গেও জড়িত। রাজ্য পুলিসের উত্তরবঙ্গের আইজি বলেন, রায়গঞ্জের ঘটনায় ওই দু’জনকে শ্যোন অ্যারেস্ট করা হবে। এর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)