• জরায়ু ছিঁড়ে মায়ের পেটে ভাসা সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখালেন চিকিৎসকরা
    বর্তমান | ২১ জুন ২০২৫
  • সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের পর এবার মিরাকেল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। জরায়ু ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা সন্তান জীবিত অবস্থায় জন্ম নিল। এবার মায়ের কোলে করে ঘরে ফেরার পালা। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা জানান, জরায়ু ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে শিশু মায়ের উদরে ভাসতে থাকে এবং মায়ের সঙ্গে শিশুর যোগাযোগ ছিন্ন হয়। এর পরিণতি, সঙ্গে সঙ্গে সন্তানের মৃত্যু। কিন্তু উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে সাম্প্রতিক এমন একটি ঘটনায় সবাইকে অবাক করে জীবিত অবস্থায় শিশু জন্ম নিয়েছে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজেও এমন মিরাকল ঘটেছে। সেক্ষেত্রেও মা ও নবজাতক সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরেছে। 

    ১৪ জুন সকালে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পেটে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে আসেন আশিঘরের বাসিন্দা দীপালী বর্মন রায়।  তিনি ৩৭ সপ্তাহের গর্ভবতী ছিলেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর  চিকিৎসকরা দ্রুত সিজারের সিদ্ধান্ত নেন। সেদিন বেলা ১২-৪৫ মিনিটে সিজার শুরু হয়।  প্রসূতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ সন্দীপ সেনগুপ্তর নেতৃত্বে ডাঃ তানিয়া দে, ডাঃ দেবলীনা ঘোষ ও ডাঃ দেবপ্রসাদ মণ্ডল ছিলেন। অ্যানাস্থেটিস্ট ছিলেন ডাঃ অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায় ও ডাঃ ঋচিক পাল।   

    শুক্রবার সন্দীপবাবু বলেন, অ্যাবডোমেন ওপেন করতেই দেখি জরায়ু ছিঁড়ে সন্তান  মায়ের পেটে ভাসছে এবং জীবিত রয়েছে। দীপালিদেবীর পেটে দেড় লিটার রক্ত জমে রয়েছে। আমরা দ্রুততার সঙ্গে শিশুকে পেটের থেকে বের করে আনি। পাশাপাশি জমে থাকা রক্তও বের করি। ক্ষতিগ্রস্ত ইউটেরাস বাদ দেওয়া হয়। দীপালিদেবীকে পাঁচ ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়। তাঁর অবস্থা কিছুটা সঙ্কটজনক থাকায় এইচডিইউতে রাখা হয়। তারপর তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। আড়াই কেজি ওজনের সদ্যোজাত কন্যাসন্তানেরও চিকিৎসা চলে শিশু বিভাগে। দু’জনেই এখন পুরোপুরি সুস্থ। শনিবার মা ও শিশুকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হবে। এই ঘটনা প্রসঙ্গে এখানকার চিকিৎসকরা বলেন, সাধারণত আগের সন্তান সিজারিয়ান পদ্ধতিতে হয়ে থাকলে পরবর্তী প্রেগনেন্সিতে জরায়ুর তলদেশ ছিঁড়ে গিয়ে শিশু বেরিয়ে আসে। আবার অনেক ক্ষেত্রে প্রথম ইস্যুতেও ৩১ সপ্তাহের পর এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। ছ’বছর আগে দীপালিদেবীর  সিজারিয়ান পদ্ধতিতে পুত্রসন্তান হয়েছে। দু’বছর আগে একটি কন্যাসন্তান হয়েছিল। তবে কিছুদিন পরেই শিশুটির মৃত্যু হয়। আগে সিজার হওয়ার কারণে দীপালিদেবীর ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটতে পারে। এদিন সদ্য মা দীপালিদেবী হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বলেন, পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছিল। বাড়ির লোক এখানে এনে ভর্তি করে। আমি এবং আমার সন্তান যে ভয়ঙ্কর ঝুঁকির মধ্যে চলে গিয়েছিল, বুঝতেই পারিনি। পরে যখনই শুনলাম, তারপর থেকে ঈশ্বরকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
  • Link to this news (বর্তমান)