অবশেষে ঘরের ছেলের ঘরে ফেরার আশা উজ্জ্বল। মুর্হূমুহু উড়ে আসা মিসাইল, সাইরেন, বাঙ্কারের আতঙ্কের দিন পিছনে ফেলে এ বার দেশে ফেরার পালা ইজ়রায়েলে গবেষণার কাজে গিয়ে আটকে পড়া মেদিনীপুরের অনিরুদ্ধ বেরার। এই সময় অনলাইনকে তিনি জানিয়েছেন, দেশে ফেরার জন্য অপারেশন সিন্ধুতে নাম নথিভুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এ বার শুধু তারিখ ঘোষণা হলেই উড়ানে চড়ার পালা।
ইজ়রায়েলের তেল আভিভ শহরে রয়েছেন অনাবাসী ভারতীয় গবেষক অনিরুদ্ধ বেরা। সেই শহরকে নিশানা করেই মাঝে মাঝে উড়ে আসছে ইরানি মিসাইল। সেখান থেকে শুক্রবার রাত্রি সাড়ে ১১টা নাগাদ এই সময় অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘খুব তাড়াতাড়ি দেশে ফিরছি। ভারতীয় দূতাবাসের তরফে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় (তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়) কর্তৃপক্ষকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। এখানেও ‘অপারেশন সিন্ধু’ অভিযান শুরু হবে। সে জন্য নাম নথিভুক্ত করতে হবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে আমি নিজের নাম নথিভুক্ত করেছি।’ বছর ২৭-র অনিরুদ্ধ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের ভাউদি গ্রামের বাসিন্দা। ২০২২ সালের নভেম্বর মাস থেকে তিনি তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যান্সার বায়োফিজিক্স নিয়ে গবেষণা করছেন।
অনিরুদ্ধ বাবা-মা'র একমাত্র সন্তান। তাঁর বাবা, পেশায় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অসীম বেরা শুক্রবার রাতেই জানিয়েছেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে ছেলের সাথে মিনিট চারেক কথা হয়েছে। ও জানিয়েছে, অপারেশন সিন্ধুতে দেশে ফিরে আসার জন্য নাম নথিভুক্ত করেছে।’ তিনি এও জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ইজ়রায়েল থেকে নিজেদের দেশে ফিরে গিয়েছেন অনিরুদ্ধ’র জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড প্রভৃতি দেশের সহপাঠীরা।
অনিরুদ্ধর মা রাখি বেরা বলেন, ‘আগামী ৮ জুলাই ছেলের জন্মদিন। আশা করছি, তার আগেই ও বাড়ি ফিরবে। ঈশ্বরের কাছেও সেই প্রার্থনাই করছি।’ শুক্রবার রাতে অনিরুদ্ধও জানিয়েছেন, ‘আশা করছি রবিবার বা সোমবার থেকে এখানে অপারেশন সিন্ধু অভিযান শুরু হবে। ভারতীয় দূতাবাস সূত্রে এটুকুই জানতে পারছি। তবে, আমাকে এখনও দিনক্ষণ জানানো হয়নি।’ গত বছর (২০২৪) পুজোর সময় শেষবার বাড়ি এসেছিলেন অনিরুদ্ধ। ৮ নভেম্বর মেদিনীপুর থেকে ইজ়রায়েল পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক ইজ়রায়েল-ইরান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইজ়রায়েলের তেল আভিভ শহরে আটকে থাকা ছেলে অনিরুদ্ধ'র জন্য উৎকণ্ঠিত বাবা-মা। তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অনিরুদ্ধ সেন্ট্রাল তেল আভিভের একটি আবাসনে ভাড়া থাকেন। গত শুক্রবার (১৩ জুন) থেকেই সেখানে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সারা দিনে ৩-৪ বার করে বাঙ্কারে প্রবেশ করতে হচ্ছে বলে জানান অনিরুদ্ধ। প্রতিমুহূর্তেই উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা সঙ্গী।
সাইরেন বাজলেই ছুটতে হচ্ছে বাঙ্কারের দিকে। তাই এ বার যেন দেশে ফিরলেই শান্তি! এমনটাই মনে করছেন অনিরুদ্ধ। যদিও তিনি জানিয়েছেন, এখনও তাঁর গবেষণা শেষ হতে অন্তত দু’বছর বাকি।
তবে, পরিস্থিতি আবার স্থিতিশীল হলেই ছেলেকে পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন বাবা-মা। উল্লেখ্য, উচ্চ মাধ্যমিকের পর প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে অনিরুদ্ধ ভর্তি হন ভুবনেশ্বরের NISER-এ। জীবন বিজ্ঞানের উপর ৫ বছরের ইন্টিগ্রেটেড কোর্স করেন অনিরুদ্ধ। তারপর তিনি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে গবেষণার জন্য পাড়ি দেন ইজ়রায়েলে। সেখানকার বিখ্যাত তেল আভিভ ইউনিভার্সিটি-তে ক্যান্সার বায়োফিজিক্স-এর উপর গবেষণা করেছেন অনিরুদ্ধ।