• ‘বকাবকি মানেই নয় আত্মহত্যায় প্ররোচনা’, ছাত্রী-মৃত্যুতে অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে মুক্তি দিয়ে বলল হাই কোর্ট
    আনন্দবাজার | ২০ জুন ২০২৫
  • প্ররোচনার অভিযোগ প্রমাণিত না হলে শুধুমাত্র বকুনি দেওয়ার কারণে পড়ুয়ার আত্মহত্যার জন্য শিক্ষককে দায়ী করা যায় না। জলপাইগুড়ির এক ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় শুক্রবার এই মন্তব্য কলকাতা হাই কোর্টের। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকাকে ফৌজদারি মামলা থেকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

    হাই কোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের বিচারপতি ঘোষ জানিয়েছেন, প্রধানশিক্ষিকার বিরুদ্ধে পুলিশ যে চার্জশিট দিয়েছিল তা খারিজ করা হল। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন রাখার প্রয়োজনীয়তা নেই। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর জলপাইগুড়ির একটি স্কুলে পরীক্ষার সময় অন্য পরীক্ষার্থীকে বিরক্ত এবং নকল করার অভিযোগ ওঠে এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে। তারই পাশে বসা এক পরীক্ষার্থী সেই অভিযোগ তোলে। ওই ঘটনায় পরের দিন ছাত্রীর বাবাকে ডেকে পাঠান স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা। অভিযোগ, বাবার সামনে অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে প্রধান শিক্ষিকা অপমান করেন।

    যদিও ওই ছাত্রীটি জানিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অসত্য। সে কাউকে বিরক্ত করেনি এবং পরীক্ষায় নকল করেনি। পরিবারের দাবি, প্রধানশিক্ষিকার অপমান সহ্য করতে না পেরে ৯ ডিসেম্বর বাড়িতে আত্মহত্যা করে ১৩ বছরের ওই ছাত্রী। ওই ঘটনায় স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা এবং আরেক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পরিবার। তাদের বক্তব্য ছিল, প্রধানশিক্ষিকার অপমান তাদের কন্যা সহ্য করতে পারেনি। সহপাঠীর অভিযোগের ভিত্তিতে মাত্রাছাড়া ভাষায় বকাবকি করেন তিনি। ওই ঘটনায় তাদের কন্যা ভীষণ কষ্ট পায়, চুপচাপ হয়ে যায় এবং খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। পরে সে আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার আগে একটি চিঠিতে ছাত্রীটি অপমানের কথা জানায়। ওই ঘটনায় পুলিশ তদন্ত করে প্রধানশিক্ষিকার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়। পুলিশের ওই পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন জলপাইগুড়ির অভিযুক্ত প্রধানশিক্ষিকার আইনজীবী উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার সার্কিট বেঞ্চ ‘বেকসুর’ ঘোষণা করল অভিযুক্তকে।

    বিচারপতি ঘোষ জানান, মৃত ওই ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে আদালত সমব্যথী। তাঁদের কষ্ট আদালত বুঝতে পেরেছে। কিন্তু আদালতকে ন্যায়বিচার করতে হবে। হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, এক জন প্রধানশিক্ষিকা বা শিক্ষিকা যদি কোনও ছাত্রীর ভুলের জন্য বকুনি দেন, তবে তা তাঁদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। সেটি আত্মহত্যায় প্ররোচনা হিসেবে ধরা যায় না। আত্মহত্যার নোটে শিক্ষিকা বা প্রধানশিক্ষিকার বিরুদ্ধে সরাসরি প্ররোচনার কথা লেখা নেই। আইন অনুযায়ী, আত্মহত্যায় প্ররোচনা প্রমাণ করতে হলে ইচ্ছাকৃত বা স্পষ্ট প্ররোচনার প্রমাণ দরকার। যা এই মামলায় পাওয়া যায়নি।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)