প্রকৃতির কাছে শুধু মানুষই নয়, বিজ্ঞানও বড় অসহায়। শুক্রবার এই কথাটাই বারবার মনে করছেন আইআইটি (IIT) খড়্গপুরের গবেষকেরা। গালুডির ছাড়া জলে শুকনো সুবর্ণরেখাও এখন ভয়াল রূপ ধারণ করেছে। বন্যার ভ্রুকুটি দেখছে কেশিয়াড়ি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা। এরই মধ্যে IIT খড়্গপুরের গবেষকদের তৈরি বিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল্যবান সরঞ্জাম-সহ ভাসমান ঘরও ভেসে গেল সুবর্ণরেখার বিপুল জলস্রোতে। এর ফলে বাণিজ্যিক ভাবে বিদ্যুৎ তৈরির প্রক্রিয়াতে শুধু বাধা-ই সৃষ্টি হয়নি, সেই সঙ্গে অন্তত দু-আড়াই লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানালেন গবেষকরা।
IIT খড়্গপুরের ওশান ইঞ্জিনিয়ারিং এবং নেভাল আর্কিটেকচার বিভাগের গবেষক তথা এই প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা ওঙ্কার বেঙ্কটাইয়াল্লা। IIT খড়্গপুরের আর এক গবেষক তথা সহকর্মী সৈকত নন্দীকে সঙ্গে নিয়ে নদীর জলস্রোতকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন ওঙ্কার। কিন্তু বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কেশিয়াড়ির আমলাসাই এলাকায় নদীর বুকে থাকা তাঁদের ভাসমান প্রকল্প ভেসে দাঁতনের রাউতরাপুরে পৌঁছয়। শুক্রবার সকালে ওই এলাকার বাসিন্দারা দেখতে পান, একটি সবুজ রঙের ঘর নদীতে ভাসছে। এর পর দুপুরের দিকে বাসিন্দারা জানতে পারেন, IIT-র গবেষকদের বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভাসমান ঘর ও নানা সরঞ্জাম এখানে ভেসে এসেছে।
IIT-র গবেষকরা স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে দাঁতন থানা এলাকার রাউতরাপুরে পৌঁছে বিকেলে তা উদ্ধার করেন। পুরো সিস্টেম বিকল হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন ওঙ্কার । তিনি ‘এই সময় অনলাইন’-কে বলেন, ‘শুধু যে আর্থিক ক্ষতি হলো তাই নয়। বাণিজ্যিক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া আরও মাসখানেক পিছিয়ে গেল। হঠাৎ করেই জল ছাড়ার ফলে নদীতে যে তীব্র জলস্রোতের সৃষ্টি হয়েছে, তাতেই আমাদের সমস্ত জিনিসপত্র ভেসে যায়।’ তিনি জানিয়েছেন, গত তিন মাসে বাণিজ্যিক ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে তাঁরা অনেকটাই এগিয়েছিলেন। আপাতত তা অনেকটাই পিছিয়ে গেল বলে দাবি গবেষকদের। সৈকত বলেন, ‘আমাদের মূল্যবান দুটি এনার্জি হারভেস্টিং মেশিন জলস্রোতে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখনও সেগুলি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পুরো সিস্টেমটাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আবার সব নতুন করে তৈরি করতে হবে।’
কেশিয়াড়ির বিডিও হিতাংশু হালদার বলেন, ‘গবেষকদের বিদ্যুৎ তৈরির প্রকল্প ভেসে যাওয়ার খবর পেয়েছি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।’ সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, সুবর্ণরেখা নদীর তীরবর্তী এলাকার সার্বিক পরিস্থিতির দিকে তাঁরা নজর রেখেছেন। মাইকিংও চলছে। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলেই দুর্গতদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হবে।