সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: নৈহাটির বাসিন্দা! হাওড়ায় কর্মরত! বোলপুরে উদ্ধার মৃতদেহ! যুবকের মৃত্যু ঘিরে দানাবাঁধছে রহস্য! অপহরণ করে খুন উঠছে সেই প্রশ্ন। প্রাথমিক অনুমান খুন করে দেহ বোলপুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। দেহ শনাক্তের জন্য মৃতের পরিবার নৈহাটি থেকে বোলপুরে রওনা দিয়েছেন।
শুক্রবার সকালে বোলপুরের শিবতলায় এক যুবকের মুখ বাঁধা দেহ উদ্ধার হয়। বোলপুর পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, তাঁকে খুন করে এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। খোঁজখবর শুরু হতে জানা যায় যুবকের নাম অনিমেষ মিত্র। বয়স ৪৫ বছর। যুবক নৈহাটির ৬নম্বর বিজয়নগর এলাকার বাসিন্দা। হাওড়ার একটি বিস্কুট কারখানায় কর্মরত ছিলেন। অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত কাজ করতেন। বৃহস্পতিবার কাজেও যান। কিন্তু তারপর থেকেই নিঁখোজ হয়ে যান তিনি। নৈহাটির বিধায়ক সনৎ দের দ্বারস্থ হয় অনিমেষের পরিবার। খবর দেওয়া হয় হওড়া থানায়। তদন্তে নামে পুলিশ।
তদন্তে প্রাথমিকভাবে উঠে আসে অনিমেষ প্রতি দুই-তিন দিন অন্তর ব্যাঙ্কে টাকা জমা করতে যেতেন। সাধারণত দুপুর আইড়টে- তিনটে নাগাদ বেরতেন। বিকেলের মধ্যে ফিরতেন। বৃহস্পতিবারও তিনি সেই কাজে বেরন। তাঁর কাছে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ছিল বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু বিকেলের পর থেকে তার কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। কোম্পানির ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়েনি। এদিকে বাড়িতেও ফিরে যাননি যুবক।
পুলিশ জানতে পারে, শেষবার হাওড়া কাজিপাড়ায় একটি বাইকে উঠতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।সেই তথ্য ধরেই তদন্ত করছিল পুলিশ। ঘটনায় একজনকে আটক করে হাওড়া পুলিশ। ওই বিস্কুট কারাখানার এক কর্মী জানান, “অনিমেষদা কিছু দিন অন্তর ব্যাঙ্কে টাকা জমা করতে যেতেন। বৃহস্পতিবারও সেই কাজে বেরন। তারপর থেকে কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। ওর ফোনও সুইচ অফ। ওকে শেষবার একটা বাইকে দেখা গিয়েছিল। শুনেছি বিষয়টা নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে।”
এই অবস্থায় বোলপুর পুলিশ থেকে একটি অজ্ঞাতপরিচিত যুবকের দেহ উদ্ধারের খবর আসে। খবর দেওয়া হয় অনিমেষের পরিবারকে। হাওড়া পুলিশের দল পরিবারকে নিয়ে বোলপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। সেখানে দেহ শনাক্ত করা হবে।
অনিমেষ বিগত পাঁচ বছর ধরে হাওড়ার একটি নামী কেক প্রস্তুতকারী সংস্থায় কাজ করতেন। তাঁর মূলত কাজ ছিল হাওড়া থানা সংলগ্ন কোম্পানির গোডাউন থেকে কালেকশনের টাকা সংগ্রহ করে হাওড়া ময়দান সংলগ্ন একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে জমা করা। বৃহস্পতিবারও সে কালেকশনের কমবেশি ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে ব্যাঙ্কে জমা করার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। প্রশ্ন উঠছে টাকার জন্য তাঁকে অপহরণ করে খুন করা হল? তিনি যে টাকা নিয়ে ব্যাঙ্কে যাচ্ছেন তা আগে থেকে জানত অপহরণকারীরা। দুষ্কৃতীরা কি অনিমেষের পূর্ব পরিচিত? উঠেছে একাধিক প্রশ্ন। গোটা ঘটনার তদন্তে নেমেছে হাওড়া থানার পুলিশ।
অনিমেষের কাকতো ভাই তুষার মিত্র জানান, “বিকেলের পর থেকে দাদার ফোন বন্ধ পাচ্ছিলাম। দুশ্চিন্তা বাড়লে বিধায়ককে জানাই, তারপর উনি নৈহাটি থানায় আমাদেরকে যোগাযোগ করিয়ে দেন। রাত আনুমানিক আটটা নাগাদ কোম্পানির তরফে আমাদেরকে নিখোঁজের খবর জানানো হয়। এরপর এদিন মর্মান্তিক খবরটি জানতে পারি। কেন এমনটা ঘটল জানি না।” বিধায়ক সনৎ দে জানিয়েছেন, “পরিবারটি আমার প্রতিবেশী। অনিমেষ ছেলেটি খুবই ভদ্র, শান্ত প্রকৃতির। তার এমন দুঃসংবাদ পাব আশা করিনি। আমরা পরিবারের পাশে আছি, নিয়মিত যোগাযোগে রয়েছি।”