লোনের অনুমোদন, চাকরির সুযোগ — এ রকম একাধিক প্ৰলোভন দেখিয়ে জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণার উদাহরণ রাজ্যে কম নেই। এ বার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককেই ঘোল খাইয়ে দিল এক দল প্রতারক। গোল্ড লোনের অনুমোদন পাইয়ে দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকার জালিয়াতিতে হাত পাকিয়েছিলেন তারকেশ্বরের কয়েকজন বাসিন্দা। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর শুক্রবার পুলিশের জালে ধরা পড়ল সেই প্রতারণা চক্রের চার সদস্য। ধৃতরা হলেন ধর্মরাজ মালিক, সঞ্জয় সাউ, সৌম্যদীপ্ত লোহার এবং শুভঙ্কর পাত্র।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৩ সালে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের তারকেশ্বর শাখা থেকে তারকেশ্বর থানায় প্রথম একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশকে জানানো হয়, একাধিক ব্যক্তি ব্যাঙ্কে নকল সোনা জমা দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার ঋণ নিয়েছেন। অভিযোগ করা হয়েছিল ওই ব্যাঙ্কের গোল্ড স্মিথ ও এক লোন এজেন্টের কারসাজিতেই এই জালিয়াতি করা হয়েছে। শুধু এই একটি ব্যাঙ্ক নয়, একাধিক ব্যাঙ্ক থেকে একই ধরনের অভিযোগ জমা পড়ে থানায়। চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ক থেকে এই ভাবে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় তিন কোটি টাকার ঋণ নেওয়া হয়েছিল।
তদন্তে নেমে একের পর এক জট খুলতে শুরু করে তারকেশ্বর থানার পুলিশ। প্রাপকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে নকল সোনা দিয়ে ঋণ নেওয়ার রহস্যভেদ করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে যাঁরা ঋণ নেবেন, তাঁদের একটি দল গঠন করা হতো। এর পরে তাঁদের সঙ্গে রফা করত এক লোন এজেন্ট ও ব্যাঙ্কের গোল্ড স্মিথ। লোন এজেন্টের কাজ ছিল নকল সোনা বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়ার আবেদন করা। গোল্ড স্মিথের কাজ ছিল নকল সোনাকে আসল সোনা হিসেবে সার্টিফিকেট দেওয়া। ঋণ মঞ্জুর হলেই নিজেদের মধ্যে হতো ভাগ বাটোয়ারা।
পুলিশ এই গোল্ড লোন জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত এক লোন এজেন্ট ও ব্যাঙ্কের গোল্ড স্মিথের পরিচয় জানতে পেরেছে।কিন্তু তাঁরা এখনও অধরা। সকলের খোঁজে জায়গায় জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নকল সোনা কোথা থেকে নিয়ে আসা হতো বা কোথায় তৈরি করা হতো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই জালিয়াতির সঙ্গে ব্যাঙ্কগুলির কোনও কর্মী জড়িত আছে কি না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।