• বিজ্ঞাপন মামলা: সিএবির কাছে ৫১ লক্ষ টাকা দাবি করেছিল বাম পুরসভা! রায় হল ২৯ বছর পর
    আনন্দবাজার | ২০ জুন ২০২৫
  • ইডেন গার্ডেন্সের ভিতরে এবং বাইরে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল (সিএবি)-এর থেকে কর চেয়েছিল কলকাতা পুরসভা। সময়টা ১৯৯৬ সাল। তখন পুরসভা ছিল বামেদের দখলে। প্রায় ২৯ বছর পরে কলকাতা হাই কোর্ট বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিল, সিএবির থেকে পুরসভা যে কর দাবি করেছিল, তা ‘বেআইনি’।

    ইডেন গার্ডেন্স ব্যবহার করে সিএবি। কিন্তু মাঠের মালিক কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। ১৯৯৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে এ দেশে ক্রিকেট বিশ্বকাপ হয়। ইডেনে মার্চে হয় বিশ্বকাপ সেমি ফাইনালের খেলা। ওই খেলার দিন মাঠের ভিতরে এবং বাইরে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় সিএবির তরফে। সেই বিজ্ঞাপনের জন্য সিএবির থেকে ৫১ লক্ষ ১৮ হাজার ৪৫০ টাকা কর চায় পুরসভা। সে সময় কলকাতার মেয়র ছিলেন প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়। তিনি প্রয়াত হয়েছেন। কর নিয়ে কলকাতা পুরসভার বক্তব্য ছিল, ১৯৮০ সালের আইনের ২০৪ ধারা অনুযায়ী এই বিজ্ঞাপন কর দাবি করার অধিকার রয়েছে তাদের।

    সে সময় পুরসভার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে গিয়েছিল সিএবি। সেই মামলায় হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ রায় দেয় ২০১৪ সালে। সেই রায়ে ধাক্কা খায় পুরসভা। তার পরে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে পুরসভা কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়। বিচারপতি অরিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং কৌশিক চন্দ্রের ডিভিশন বেঞ্চ অবশেষে রায় ঘোষণা করল।

    কেন বিজ্ঞাপন কর তারা দিতে চায় না, সেই নিয়ে আদালতে সিএবির বক্তব্য ছিল— এক, ইডেন ‘পাবলিক প্লেস’ নয়। অর্থাৎ তা এমন জায়গা নয়, যেখানে সাধারণ মানুষ অবাধে যেতে পারেন। ইডেনে প্রবেশ করতে গেলে টিকিট কাটতে হয়। পাবলিক প্লেসে বিজ্ঞাপন দিলে কর দিতে হয়। সেই নিয়ম ইডেনের ক্ষেত্রে কী করে প্রযোজ্য হয়। দুই, ইডেনের বাইরে যে বিজ্ঞাপন সিএবি দিয়েছে, তার কর দিচ্ছে তারা। কিন্তু মাঠের ভিতরের বিজ্ঞাপন নিয়ে তাদের বক্তব্য রয়েছে। তাদের দাবি, ওই বিজ্ঞাপন স্টেডিয়ামের বাইরে থেকে কেউ দেখতে পাননি। তা হলে সেগুলির জন্য কেন কর দেবে তারা। তিন, পুরসভা কর বাবদ যে ৫১ লক্ষ টাকা চাইছে, তা কী হিসেবে চাইছে? নির্দিষ্ট হিসাব তারা দেয়নি। চার, ইডেন কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পত্তি। তার উপর স্থানীয় কর বসানো যায় না।

    এই নিয়ে আদালতে পুরসভার বক্তব্য হল, টিকিট কেটে ইডেনে বহু মানুষ প্রবেশ করেন। বড় রকমের সমাগম হয় সেখানে। তাই তাকে ‘পাবলিক প্লেস’ই ধরা যেতে পারে। তা হলে যে বিজ্ঞাপন মাঠের ভিতরে, তার উপর কেন কর ধার্য করা হবে না। জনসাধারণ বিজ্ঞাপন দেখেছেন, তাই তার করও দিতে হবে। পাশাপাশি, তারা অবশ্য জানায়, যে কর তারা চেয়েছে, তার বিস্তারিত হিসাব দেওয়া হয়নি। তবে যদি চাওয়া হয়, তা দাখিল করবে তারা।

    সওয়াল-জবাব শেষে ২৯ বছর পরে আদালত বিজ্ঞাপন করের বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে দিল, যা দিয়েছিল পুরসভা। ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, পুরসভার এই দাবি আইনসঙ্গত নয়। ন্যায়বিচারের অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। পুরসভা কর দেওয়ার জন্য দু’দিন সময় দিয়েছিল সিএবিকে। তারা সিএবিকে বক্তব্য জানাতে বলে তিন দিনের মাথায় টাকা দিতে বলে। আদালত জানিয়েছে, এই আচরণ অন্যায্য। তাদের পর্যবেক্ষণ, ‘‘বিজ্ঞাপনের যে হিসাব, তা পুরসভা দেয়নি। সিএবিকে সময়ও দেয়নি। পুরসভা নিয়ম দেখাতে পারে। কিন্তু ইডেনের ভিতরে যে বিজ্ঞাপন তা পুরসভার করের আওতায় পড়ে না।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)