ভাতা বন্ধ করতে কারা কোর্টে গেল, চিহ্নিত করুন! তৃণমূলের বক্তব্যের পরেই পাল্টা বিজেপি বলল ‘রাজ্যের গালে চপেটাঘাত’
আনন্দবাজার | ২০ জুন ২০২৫
স্কুল সার্ভিস কমিশনের চাকরিহারা গ্রুপ এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের প্রতি মাসে ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য। কিন্তু শুক্রবার রাজ্যের সেই সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। তার পরেই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। তৃণমূলের বক্তব্য, ‘মানবিক’ মুখ্যমন্ত্রী চাকরিহারাদের সমস্যার কথা ভেবেই ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক জন ষড়যন্ত্র করে আদালতে যান। কারা আদালতে যাচ্ছেন, তা চিহ্নিত করারও ডাক দেয় রাজ্যের শাসকদল। বিজেপির পাল্টা বক্তব্য, হাই কোর্টের এই রায় ‘দুর্নীতিগ্রস্ত রাজ্যের গালে চপেটাঘাত’।
বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন চাকরিহারারাও। চাকরিহারা গ্রুপ সি কর্মী অমিত মণ্ডল বলেন, “আমরা কোনও দুর্নীতির মাধ্যমে চাকরি পাইনি। আমরা রাজ্য প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলাম যে, যোগ্য ৩৪৯৪ জন গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীকেই যেন ভাতা দেওয়া হয়। যোগ্য এবং অযোগ্য যেন গুলিয়ে না-ফেলা হয়। কিন্তু সরকার আমাদের আর্জি শোনেনি। যোগ্য-অযোগ্য সব কর্মীকে ভাতা দেওয়ার কারণেই এই সিদ্ধান্তে আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়ল।” নিয়ম মেনে যোগ্য গ্রুপ সি এবং ডি কর্মীদের সরকারি চাকরিতে পুনর্বহাল করারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।
২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেলে থাকা প্রায় ২৬ হাজার জনের চাকরি বাতিল করার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এই ২৬ হাজার জনের মধ্যে রয়েছেন গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীরাও। গত মে মাসে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে, চাকরিহারা গ্রুপ সি কর্মীদের প্রতি মাসে ২৫ হাজার এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের ২০ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে। শুক্রবার বিচারপতি অমৃতা সিংহ জানান, ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বা আদালত যতদিন না পরবর্তী নির্দেশ দিচ্ছে, ততদিন ভাতা দিতে পারবে না রাজ্য।
হাই কোর্টের রায়ের পরেই তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “২৬ হাজার জনের চাকরি চলে যাওয়ার পরে অনেকে পৈশাচিক আনন্দ করেছিলেন। আচমকা চাকরি হারিয়ে যাঁরা পথে বসেছিলেন, তাঁদের আর্থিক সুরাহা দিতে মানবিক মুখ্যমন্ত্রী অন্তর্বর্তিকালীন ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। সেটা নিয়েও আপত্তি করে আদালতে যাওয়া হল।” একই সঙ্গে কুণালের সংযোজন, “সরকারের মানবিক সিদ্ধান্ত আটকাতেও কারা কোর্টে গেলেন, তাঁদের চিহ্নিত করুন।” কুণাল জানিয়েছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করা হবে কি না, তা রাজ্য স্থির করবে।
ভাতায় কোর্টের স্থগিতাদেশ প্রসঙ্গে বিজেপির পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষ বলেন, “মানবিকতা এবং সহানুভূতির প্রশ্ন যেমন রয়েছে, অন্য দিকে তেমনই রয়েছে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজ্য সরকার। এই রায় রাজ্যের গালে আর এক চপেটাঘাত বলেই মনে করি।” অবশ্য শঙ্কর জানান, আদালতের রায়ের প্রতিলিপি হাতে পেলেই এই বিষয়ে সবিস্তার বলবেন।