একটানা প্রায় ৭২ ঘণ্টা ধরে নিম্ন চাপের বৃষ্টি হল দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোতে। আর এতে জনজীবনে দুর্ভোগ দেখা দিলেও কৃষি প্রধান পূর্ব বর্ধমানে বেশ কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন চাষিরা। বৃষ্টির এই জল অনেকটাই কাজে দেবে আমন বা খরিফের ধান চাষে। ইতিমধ্যে জলকে কাজে লাগিয়ে প্রাক চাষের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে জেলার বিভিন্ন ব্লকে। কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরাও এই জল কাজে লাগবে বলে জানিয়েছেন।
এমনিতেই দীর্ঘ দিন ভারি বৃষ্টি না হওয়া এবং তার সঙ্গে অত্যাধিক গরমে মাঠঘাট ফুটিফাটা অবস্থায় ছিল। এই অবস্থায় চাষিরা আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন কবে বৃষ্টি হবে। তারপরই সোমবার রাত থেকে শুরু হয় বৃষ্টি। স্বস্তি নেমে আসে চাষিদের মনে। ইতিমধ্যে রায়না, খন্ডঘোষ, জামালপুর, মেমারি, কালনা, কাটোয়া, শহর বর্ধমানের লাগোয়া গ্রামগুলোতে আউশ ও আমন ধানের বীজতলা তৈরির কাজে নেমে পড়েছেন স্থানীয় চাষিরা। একদিকে যেমন এই বাড়তি জল আমন ও আউশ মৌসুমে কাজে লাগবে একই সঙ্গে পাট চাষে বেশ কিছুটা সুবিধা পাবেন চাষিরা। এখনো পূর্ব বর্ধমানের কালনা, কাটোয়া মহকুমা জুড়ে পাট চাষের সঙ্গে যুক্ত আছেন বহু কৃষক পরিবার। জলের অভাবে পাট চাষে অনেক সময় সমস্যা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে আগাম কিছুটা স্বস্তি পেলেন চাষিরা।
আষাঢ় মাসের শুরুতে আউশ এবং আমন ধান চাষের প্রাক প্রস্তুতি শুরু হয় এ জেলায়। কিন্তু এবার একটানা রোদ গরমে চাষের জমি এতটাই শুকিয়ে ছিল যে সেভাবে কাজ শুরু করতে পারেননি চাষিরা। নিম্ন চাপের বৃষ্টির হাত ধরে বর্ষা নামায় জোর কদমে বীজতলা তৈরির কাজে নেমে পড়েছেন অনেকেই। যে সব এলাকায় জমি থেকে জল কিছুটা নেমেছে সেখানে জমিতে চাষ দেবার কাজও চলছে। খন্ডঘোষের বাদুলিয়া গ্রামের বর্ধিষ্ণু চাষি তথা এলাকার জনপ্রতিনিধি অপার্থিব ইসলাম জানান, তাঁর এলাকায় সকলেই প্রায় চাষে নেমে পড়েছেন। তিনি বলেন, আষাঢ় মাস চলে এলেও বৃষ্টি না হওয়ায় সকলেরই চিন্তা ছিল। এই বৃষ্টিতে চাষিদের সুবিধাই হলো। শুরু হয়েছে গোবিন্দভোগ, স্বর্ণ সহ অতি লাভজনক ধানের বীজতলা তৈরির কাজ। রায়ান গ্রামের এক চাষি বিশ্বেশ্বর চৌধুরী জানান, শুকনো অবস্থায় ধুলো বীজ ছড়ানোর তোড়জোড় চলছিল। তার মাঝেই বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বীজতলা তৈরির কাজে নামা হয়েছে।
জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত দুদিনে মন্তেশ্বর, পূর্বস্থলী, ভাতার, মেমারি, কেতুগ্রাম, গলসি, কালনা, আউশগ্রাম সহ জেলার সবকটি ব্লকেই পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়েছে। জেলা কৃষি দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর অমর মন্ডল জানিয়েছেন এই বৃষ্টির ফলে আমনের বীজতলা তৈরি ছাড়াও পাট এবং অন্যান্য আনাজের চাষে সহায়তা হবে। মাটি নরম থাকায় জমিতে চাষ দেওয়া সহজ হবে। এর পাশাপাশি পাট চাষের পর পচানোর সময় কাজে লাগবে জল।