চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। শুক্রবার বিচারপতি অমৃতা সিনহা জানিয়েছেন, ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বা আদালত যতদিন না পরবর্তী নির্দেশ দিচ্ছে, ততদিন চাকরিহারা গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের ভাতা দিতে পারবে না রাজ্য। আদালতের নির্দেশ, চার সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যকে হলফনামা জমা দিতে হবে। তার ১৫ দিনের মধ্যে পাল্টা হলফনামা দেবেন মামলাকারীরা।
গত এপ্রিল মাসে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেওয়ার পর গ্রুপ সি কর্মীদের মাসে ২৫ হাজার টাকা এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে হাইকোর্টে একাধিক মামলা দায়ের হয়। এর আগে শুনানিতে মামলাকারীদের আইনজীবী আদালতে জানান, চাকরিহারা গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপন্থী।
সেই শুনানিতে বিচারপতি অমৃতা সিনহা বলেন, ‘টাকার পরিমাণ ২৫ হাজার এবং ২০ হাজার হল কেন? কীসের ভিত্তিতে এই অঙ্ক নির্ধারণ করা হয়েছে?’ বিচারপতি সিনহা রাজ্যের কাছে জানতে চান, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে কোনও রকম আলোচনা বা স্ক্রুটিনি ছাড়াই কেন তড়িঘড়ি এই ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? পাল্টা মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তোলেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত।
১৩ জুন মামলার শুনানি শেষ হলেও রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন বিচারপতি। শুক্রবার বিচারপতি অমৃতা সিনহা তাঁর নির্দেশে জানিয়েছেন, আপাতত আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তের উপর স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পর আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, ‘এভাবে কাউকে টাকা দেওয়া যায় না। গোটা সিদ্ধান্তটাই বেআইনি। বিচারপতি অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য সরকারকে হলফনামা দিতে হবে।’
আদালতের এই রায়ের পর নাম না করে বিরোধীদের আক্রমণ করে তৃণমূল। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যে সমস্ত গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীরা চাকরি হারিয়েছিলেন, মানবিকতার খাতিরে তাঁদের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন ভাতার ব্যবস্থা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেটা আটকাতে কারা কোর্টে গিয়েছেন, তাঁদের চিহ্নিত করুন। কারা পাশে থাকে, আর কারা চাকরি খাব, অন্তর্বর্তীকালীন ভাতা পেতে দেব না, বিপদে পাশে থাকব না, লোককে কষ্ট দিয়ে চোখের জল ফেলে তাই নিয়ে বিরোধী রাজনীতি করব, তা বুঝতে শিখুন। এদেরকে চিনে রাখতে হবে।’
প্রসঙ্গত, এসএসসির ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের বেতন দিতে বলেছে দেশের শীর্ষ আদালত। যদিও চাকরিহারা গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের ক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনা নেই। কারণ শীর্ষ আদালত এই বিষয়ে কোনও নির্দেশ দেয়নি। এই অবস্থায় তাঁদের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ঘোষণা করেছিলেন, গ্রুপ সি কর্মীরা মাসিক ২৫ টাকা ও গ্রুপ ডি কর্মীরা মাসিক ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন।
গত ১৫ মে ওই ভাতা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। নবান্ন জানিয়েছিল, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল লাইভলিহুড অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি ইন্টেরিম স্কিম, ২০২৫’ প্রকল্পের অধীনে ওই ভাতা দেওয়া হবে। তা কার্যকর করা হবে গত এপ্রিল মাস থেকে। এরপর গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে একাধিক মামলা হয়।