এই সময়: বিমানযাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে দেশের সমস্ত বিমানবন্দরের চারপাশে বিভিন্ন অবস্ট্যাকল বা বাধা সরানোর ক্ষেত্রে নতুন একটি ড্রাফ্ট রুল তৈরি করল দেশের বিমান মন্ত্রক।
১৮ জুন, বুধবার ‘এয়ারক্র্যাফ্ট ডেমোলিশন অ্যান্ড অবস্ট্রাকশন রুল ২০২৫’ নামে প্রস্তাবিত এই রুল প্রকাশ্যে এনে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, গেজেট নোটিফিকেশন হলে তবেই চালু হবে নতুন এই আইন।
ওঠানামার সময়ে বিমানকে যাতে কোনও বাধার সম্মুখীন হতে না হয়, তার জন্য বিমানবন্দরের চারপাশে নির্মাণ নিয়ে এমনিতেই বিধিনিষেধ রয়েছে। কলকাতার মতো বিমানবন্দরের ৫৬ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এলাকায় বহুতল, গাছ, টাওয়ারের উচ্চতার ক্ষেত্রে এই বিধিনিষেধ রয়েছে।
সেখানে কোনও নির্মাণ করতে হলে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) নিতে হয়।
গত ১২ জুন আমেদাবাদ থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক রওনা হয়ে বিমানবন্দরের কাছে বিজে মেজিক্যাল কলেজের হস্টেলের উপরে ভেঙে পড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনার।
বিমানের ক্রু-সহ ২৪১ জন যাত্রী মারা যান। বিমান হস্টেলে ভেঙে পড়ার কারণে মারা গিয়েছেন ডাক্তারি পড়ুয়া–সহ আরও অনেকে। তারপর থেকে দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে শুরু হয়েছে কাটাছেঁড়া। তার সঙ্গে বিমানবন্দরের গা-লাগোয়া নির্মাণ নিয়েও কথা উঠতে শুরু করেছে।
এই আবহেই নির্মাণ নিয়ে বিধিনিষেধ আরও কড়া করতে চায় কেন্দ্র। তার জন্যই এই ড্রাফ্ট রুল। কলকাতা বিমানবন্দরের দু’পাশে নির্মাণ নিয়ে নয়া নির্দেশিকা জারি করতে চলেছে রাজ্যও।
বৃহস্পতিবার বিধানসভায় রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা মধ্যমগ্রামের বিধায়ক রথীন ঘোষ জানিয়েছেন, আগে সর্বোচ্চ ৪৫ মিটার উচ্চতায় বাড়ি করতে দেওয়া হতো। এ বার সেই উচ্চতা নিয়ন্ত্রিত হবে।
এই ড্রাফ্ট রুল বাজারে ছেড়ে সাধারণ মানুষের মতামতও চাওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৮ জুনের পরে ২০ দিনের মধ্যে ওই মতামত এক্স হ্যান্ডলে বা ডিজিসিএ–র মেল–এ দিতে হবে।
আর এর পরেই এক্স-এ ছিটকে এসেছে একের পর প্রশ্ন, ‘এতদিন কি ঘুমোচ্ছিলেন?’ ‘এতগুলো মানুষের মৃত্যুর পরে কি টনক নড়ল?’ ‘সে দিনের দুর্ঘটনার সঙ্গে এই রুলের কী সম্পর্ক?’
বিমানবন্দরের চারপাশে গজিয়ে ওঠা বাধা বা অবস্ট্যাকল সরানোর ক্ষেত্রে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে আরও বেশি ক্ষমতা তুলে দেওয়ার জন্যই নতুন এই ড্রাফ্ট রুল বলে সুত্রের দাবি।
এখন বেশি উচ্চতার বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ) এবং স্থানীয় প্রশাসনের উপরে পুরোপুরি নির্ভর করতে হয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট এয়ারপোর্ট অপারেটর (বেসরকারি)-কে।
বলা হয়েছে, এ বার বিমানবন্দরের আশপাশে নির্ধারিত উচ্চতার বেশি কোনও নির্মাণের কথা জানতে পারলে সেই নির্মাণ সংস্থা বা মালিককে সরাসরি নোটিস পাঠাতে পারবেন বিমানবন্দরের অধিকর্তা।
সেই নোটিস পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ওই নির্মাণ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে হবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে। সেখানে নির্মাণের উচ্চতা, তার অবস্থান, বিস্তারিত সাইট ও বিল্ডিং প্ল্যান থাকতে হবে। ওই সময়ের মধ্যে এই তথ্য না পাওয়া গেলে, কতৃর্পক্ষ কড়া ব্যবস্থা এমনকী সেই নির্মাণ ভেঙে ফেলার জন্য সুপারিশও করতে পারবেন।
ওই ড্রাফ্ট রুল অনুযায়ী, কোনও বেআইনি নির্মাণ বা গাছ নিয়ে ডিজিসিএ যদি নিশ্চিত হয়, তা হলে তা ভেঙে বা কেটে দেওয়ার জন্য মালিককে সরাসরি নোটিস দিতে পারবে তারা। এতদিন তা স্থানীয় পুরসভা বা প্রশাসনের মাধ্যমে দিতে হতো।
ডিজিসিএ-র নোটিস পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে মালিককে ওই নির্মাণ ভেঙে বা গাছ কেটে ফেলতে হবে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে আরও ৬০ দিনের সময় দেওয়া যাবে।
বলা হয়েছে, মালিকের অনুমতিক্রমে এ বার থেকে কোনও বিল্ডিংয়ে ঢুকে ইন্সপেকশনও করতে পারবেন বিমানবন্দরের অফিসারেরা। কোনও কারণে সংশ্লিষ্ট মালিক সহযোগিতা না করলে, সেই কেস-টি ডিজিসিএ-র কাছে পাঠাতে হবে।
কোনও বেআইনি নির্মাণ ভাঙার বা গাছ কাটার নির্দেশ সংশ্লিষ্ট মালিক না মানলে কর্তৃপক্ষ জেলাশাসক বা সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসনিক প্রধানকে ওই নির্দেশ কার্যকর করার জন্য সুপারিশ করতে পারবেন।
পুরোনো আইনের মতো এ ক্ষেত্রেও আপিল বা আবেদনের সুযোগ থাকবে। নোটিস পাওয়ার পরে নিয়ম মেনে কেউ নির্মাণ ভাঙলে ২০২৪-এর ভারতীয় বায়ুযান অধিনিয়মের ২২ নম্বর ধারা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণও পাওয়া যাবে। নোটিস পাওয়ার পরেও বেআইনি নির্মাণ করলে, তার ভাঙার ক্ষতিপূরণ মিলবে না।