• মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ড মিলে একটাই! প্রস্তাব কেন্দ্রের
    বর্তমান | ২০ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার দশম শ্রেণির পরীক্ষা তুলে দেওয়ার পক্ষে। তবে যতদিন তা না হচ্ছে, ততদিন মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের পর্ষদ ও সংসদ সংযুক্তিকরণের প্রস্তাব দিচ্ছে তারা। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সহ সাতটি রাজ্যের কাছে সেই প্রস্তাব গিয়েছে। কেন্দ্রের যুক্তি, এই রাজ্যগুলিতে সরকারি বোর্ডের পরীক্ষায় ফেলের বহর বাড়ছে। সেই কারণে দশম এবং দ্বাদশের সিলেবাসে সামঞ্জস্য আনতে একটিমাত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকা প্রয়োজন। যদিও এই যুক্তির সঙ্গে সহমত নন পর্ষদ-সংসদ কর্তা থেকে শিক্ষামন্ত্রী প্রত্যেকেই।

    কেন্দ্রীয় শিক্ষাসচিব সঞ্জয় কুমার সম্প্রতি জানিয়েছেন, এই সাতটি রাজ্যে অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। তাই সংস্থাগুলির সংযুক্তিকরণের প্রস্তাব গিয়েছে। যদিও, রাজ্য শিক্ষাদপ্তরের এক শীর্ষ আধিকারিক এখনও সেই প্রস্তাব হাতে পাননি বলেই জানিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা, কেন্দ্রের এই প্রস্তাবের কার্যকারণ নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। যদি ফেলের বহর বৃদ্ধিই এর কারণ হয়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গ এই তালিকায় আসে না। কারণ কী মাধ্যমিক, কী উচ্চ মাধ্যমিক—দু’টি পরীক্ষাতেই পাশের হারে রেকর্ড হচ্ছে প্রতি বছর। কেন্দ্রীয় স্কুল বোর্ড সিবিএসই যদি মাপকাঠি হয়, তাহলে দ্বাদশের পাশের হারে তাদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে এ রাজ্যের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। পশ্চিমবঙ্গে সিবিএসই-র দ্বাদশে এ বছর পাশের হার ৮৯.১৬ শতাংশ। আর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন ৯০.৭৯ শতাংশ ছাত্রছাত্রী। মাধ্যমিকে পাশের হার ৮৬.৫১ শতাংশ। সেটা সিবিএসই দশমের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে রেকর্ড। তাই ফেল বেড়ে যাওয়ার যুক্তিটি এখানে কার্যকর নয় বলেই দাবি করছে শিক্ষামহল। একই সুর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কথায়। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এখনও কেন্দ্রের প্রস্তাব তাঁর কাছে আসেনি। সংবাদমাধ্যম থেকে তিনি প্রস্তাবের কথা শুনেছেন। তাতে তাঁর মনে হয়েছে, এটি পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে খাটে না। কারণ, করোনার সময়কাল বাদ দিলেও গত দেড় দশকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হার কমেনি।

    বিকাশ ভবনের এক আধিকারিক বলেন, কেন্দ্র অনেক কিছুই চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। তবে, সরকার রাজ্যের পড়ুয়াদের স্বার্থ দেখেই এ নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। যে কারণ দেখিয়ে কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাইছে, সেটি যুক্তিপূর্ণ নয়। তবে, বিজেপি শাসিত অসম ইতিমধ্যেই দু’টি বোর্ডের সংযুক্তিকরণ সেরে ফেলেছে। মাধ্যমিক বোর্ড ‘সেবা’ এবং উচ্চ মাধ্যমিক সংসদ এএইচএসইসি জুড়ে দিয়ে অসম স্টেট স্কুল এডুকেশন বোর্ড ‘অ্যাসেব’ শুরু করেছে তারা। যদিও, অসমে পাশের হার বরাবরই এ রাজ্যের থেকে কম ছিল। সেখানে কয়েক বছর আগেও মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশন পেলেও স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী কম্পিউটার, ল্যাপটপ সহ সংবর্ধনা দিতেন পরীক্ষার্থীদের। সেখানে এ রাজ্যে প্রথম ডিভিশনে উত্তীর্ণ হন লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী। দেশে ৬৬টি বোর্ড রয়েছে। সবক’টির অবস্থা সমান নয়। তাই এই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গকে রাখা নিয়ে অবাক আধিকারিকরাও।
  • Link to this news (বর্তমান)