চাকরি হারিয়ে প্রতারণার ছক কষেছিলেন গরফা থেকে ধৃত প্রাক্তন হোমগার্ড
বর্তমান | ২০ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: চাকরি করতেন রাজ্য পুলিসের হোমগার্ড পদে। কয়েকবছর আগে মেডিক্যাল করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় এক আসামী পালায়। সেই নিয়ে কর্তব্যে গাফিলতির কারণে চলে গিয়েছে পুলিসের চাকরি। কিন্তু, এরপর রাতারাতি ‘পুলিস সুপার’ সেজে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন কীর্তিমান। কিন্তু, শেষরক্ষা হল না। লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে প্রতারণার দায়ে আমডাঙা থানার পুলিসের হাতে গ্রেপ্তার প্রাক্তন ওই পুলিসকর্মী।
পুলিস জানিয়েছে, ধৃতের নাম সুস্মিত সেন (৩৫)। বুধবার গভীর রাতে কলকাতার গরফা থানা এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। ভাড়ার ওই ফ্ল্যাট থেকে প্রচুর জাল নথি, নগদ সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা, একাধিক দামি ফোন, ল্যাপটপ ও জাল আধার ও ভোটার কার্ড উদ্ধার করেছে পুলিস। বৃহস্পতিবার ধৃতকে বারাসত আদালতে তোলা হলে দশ দিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। তাকে জেরা করে এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে আরও কেউ যুক্ত আছেন কি না বা চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কতজনের কাছ থেকে তিনি টাকা তুলেছেন, তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, সুস্মিত সেন বারুইপুর থানার হোমগার্ড পদে চাকরি করতেন। কয়েকবছর আগে এক অভিযুক্তকে মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। মাঝপথেই অভিযুক্ত পালিয়ে যায়। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করে পুলিস। কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর চাকরি যায়। এরপর থেকেই কখনও ক্যানিং, কখনও গরফা এলাকায় বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। নিজেকে পুলিস সুপারের পরিচয় দিয়ে নীলবাতি লাগানো গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়াতেন সুস্মিত। নিজের নাম বলতেন রণজয় চট্টোপাধ্যায়! এমনকী পরতেন পুলিস সুপারের পোশাকও। এছাড়া পুলিসের স্টিকার লাগানো বাইকে করেও ঘুরে বেড়াতেন সুস্মিত।
চাকরি দেওয়ার নাম করে গরফা থেকে আমডাঙার বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জেনেছে পুলিস। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, আমডাঙার বাসিন্দা মোবারক আলির কাছ থেকে ভাড়ায় গাড়ি নিতেন সুস্মিত। কিন্তু, ভাড়ার টাকা সঠিকভাবে দিতেন না। পুলিস হওয়ায় সাহস করে মোবারক কিছু বলতে পারতেন না। এরপর মোবারককে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকেও লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন সুস্মিত। কিন্তু, দীর্ঘদিন কেটে গেলেও মেলেনি চাকরি। শেষে প্রতারিত হচ্ছেন বুঝতে পেরেই মোবারক আলি আমডাঙা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সুস্মিতের নামে।
অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিস। সুস্মিতের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে গভীর রাতে কলকাতার গরফা থানার এক ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করে।