কালভার্ট পার হতে গিয়ে ভেসে গেলেন বৃদ্ধ, মেঘভাঙা বৃষ্টিতে জল থইথই পুরুলিয়া শহর
বর্তমান | ২০ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া, সংবাদদাতা, মানবাজার: মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত পুরুলিয়ার জনজীবন। বিশেষ করে পুরুলিয়া শহরের বেশকিছু এলাকার অবস্থা একেবারে শোচনীয়। বৃষ্টির জেরে বুধবার পুরুলিয়া শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধুডাঙা এলাকা ভেসে যায়। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ওই এলাকার অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। শতাধিক বাসিন্দাকে ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুরুলিয়ার বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকা এদিন বিদ্যুৎহীন ছিল। বরাবাজারে সাইকেল নিয়ে পারাপারের সময় জলের তোড়ে এক বৃদ্ধ ভেসে যায়। তাঁর খোঁজে পুলিস তল্লাশি চালাচ্ছে।
মঙ্গলবার সকাল ৭টা ২৪ ঘণ্টায় পুরুলিয়া জেলায় গড় ৯১.৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ১৪৩.২মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এমন বৃষ্টিপাত সাম্প্রতিক সময়ে শেষ কবে হয়েছিল, তা মনে করতে পারছেন না এলাকার বাসিন্দারা। এদিন বাঘমুণ্ডিতে সর্বোচ্চ ২৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বলরামপুরে ২২৩ মিলিমিটার, পুঞ্চায় ১৯৬.৪ মিলিমিটার, পুরুলিয়া ১৫৩.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির জেরে পুরুলিয়া শহরের নিকাশি অবস্থা বেআব্রু হয়ে পড়ে। দু’দিন ধরে বৃষ্টির জেরে পুরুলিয়ার হুচুকপাড়া, নিমটাঁড়, সূর্যসেনপল্লি, অম্বরীশপল্লি, রামপদ কলোনি, কার্তিকডি, ডুমুরতলা, পুলিস কলোনি সহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। বাড়িতে জল ঢুকে যায়। ওইসব এলাকা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জলমগ্ন ছিল।
এদিন পুরুলিয়া শহরের সাধুডাঙা এলাকা পরিদর্শনে আসেন পুরুলিয়ার মহকুমা শাসক উৎপল ঘোষ, রেলের আদ্রা শাখার পদস্থ আধিকারিকরা। ছিলেন চেয়ারম্যান নব্যেন্দু মাহালিও। তাঁর ক্ষোভ, রেলের অপরিকল্পিত লাইন পাতার কারণেই এই পরিস্থিতি। নিকাশি নালা দিয়ে যে পরিমাণ জল বের হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না। এক বছর আগেই রেলকে আমি চিঠি দিয়েছিলাম। তখন যদি রেলের আধিকারিকরা পদক্ষেপ করত তাহলে এই অবস্থা হতো না। রেলের আধিকারিকরা জানান, বিষয়টির দ্রুত সমাধান করা হবে। বুধবার রাতে সাধুডাঙা এলাকার শতাধিক বাসিন্দাকে সাধুডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি বেসরকারি লজে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পুরসভার তরফে সেখানেই দুর্গতদের থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়। বৃহস্পতিবার দু’-একটি বাড়ি ধসে যাওয়ার খবর মিলেছে। তবে হতাহত কেউ হয়নি বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মানবাজারের একাধিক কজওয়ের উপর জল বইতে শুরু করে। এদিন মানবাজার-২ ব্লকের টোটকো নদীর জল বৃদ্ধি পায়। তার জেরে জয়পুর কজওয়ের উপর দিয়ে জল বইতে শুরু করে। নদীর জল আঁকরো-রঘুনাথপুর রাস্তায় থাকা কজওয়ের উপর দিয়ে বইলে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এদিন বোরোর বড় মামড়ো গ্রামে বিদ্যুতের দাবিতে পথ অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, বৃষ্টির মধ্যে গ্রামে দু’দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। পরে পুলিস ও বিদ্যুৎ দপ্তরের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে।
বান্দোয়ান থেকে গালুডি যাওয়ার রাস্তায় একটি কজওয়ের উপর জল বইতে শুরু করে। ঝুঁকি নিয়ে অনেককে পারাপার করতে দেখা যায়। মানবাজার- বরাবাজার রাজ্য সড়কের উপর বাল্লার ঘাটে কজওয়ের উপর নেংসাই নদীর জল বইতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার সকালে ফাগুডি গ্রামের এক বৃদ্ধ সাইকেল নিয়ে ওই কজওয়ে পেরতে গিয়ে জলের তোড়ে ভেসে যান। খবর পেয়ে বরাবাজার থানার পুলিস ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। ওই রাস্তায় গাড়ি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। বৃদ্ধের খোঁজে ডাকা হয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। তারা নদীতে তল্লাশি শুরু করে। কিন্তু, বিকেল পর্যন্ত ওই বৃদ্ধের কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। -নিজস্ব চিত্র