সস্তায় নির্মাণ সামগ্রী দেওয়ার নামে প্রতারণা চক্রের মূল পান্ডা গ্রেপ্তার
বর্তমান | ২০ জুন ২০২৫
সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ব্যবসায়ীদের সস্তায় নির্মাণ সামগ্রী দেওয়ার নামে প্রতারণা চক্রের মূল পান্ডাকে গ্রেপ্তার করল সোনামুখী থানার পুলিস। ধৃতের নাম শিবু মুখোপাধ্যায় ওরফে রায়বাবু। তাঁর বাড়ি নিমতা থানা এলাকায়। বুধবার রাতে সেখান থেকেই পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করে। পুলিস জানিয়েছে, ধৃত শিবু ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসার আড়ালে গোটা দক্ষিণবঙ্গে নির্মাণ সামগ্রী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা করছিল। ছ’মাস আগে তার দুই শাগরেদকে ধরা সম্ভব হলেও চক্রের পান্ডা শিবুর নাগাল পাওয়া যায়নি। দু’-দুবার কাছাকাছি গেলেও সে পুলিসের হাত ফসকে বেরিয়ে যায়। এবারও সে পালানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, পুলিস আটঘাট বেঁধে তাকে কার্যত তাড়া করে পাকড়াও করে। বৃহস্পতিবার বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতকে ১৪দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, নিমতা থানা এলাকার বাসিন্দা শিবু নিজেকে হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে ২০২৪সালের ডিসেম্বর মাসে বাঁকুড়ার বাসিন্দা অনিমেষ রায়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে। শিবু তার ব্যবসার জন্য বাঁকুড়ায় মোটা মাইনের টোপ দিয়ে এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে অনিমেষকে নিযুক্ত করে। এরপর ওই প্রতারক বাঁকুড়ার বিভিন্ন এলাকার পাথর ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে। কম দামে বীরভূমের উন্নত মানের পাথর দেওয়ার কথা বলে। সেই রকমই সোনামুখীর এক ব্যবসায়ীকে সস্তায় ২লরি পাথর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সেই মতো বীরভূমের এক ব্যবসায়ীকে পাথরের অর্ডার দেয়। মাল ডেলিভারির সময় লরি চালকের হাতে টাকা দিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। বীরভূমের ব্যবসায়ী পাথর যথারীতি সোনামুখীতে পাঠিয়ে দেন। শিবুর নির্দেশে অনিমেষ সোনামুখীতে আসে। লরি পৌঁছনোর মূহূর্তেই অনিমেষ সোনামুখীর ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৯৪হাজার নিয়ে চম্পট দেয়। সে সমস্ত টাকা কলকাতায় দক্ষিণেশ্বরে গিয়ে শিবুর হাতে তুলে দেয়।
কিন্তু, লরির চালক পাথর নামানোর পর টাকা চাইলে সোনামুখীর ওই ব্যবসায়ী জানান, তাদের ম্যানেজার এসে টাকা নিয়ে চলে গিয়েছে। তাতে ধন্দে পড়েন বীরভূমের ওই পাথর ব্যবসায়ী। প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরে তিনি সোনামুখী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিস ঘটনার তদন্তে নেমে অনিমেষকে বাঁকুড়া থেকে গ্রেপ্তার করে। তাকে জেরা করে নিমতা থানা এলাকারই বাসিন্দা সুনীল হাজরা নামে চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তার মাধ্যমে চক্রের মাথা শিবুর খোঁজ পায় পুলিস। কিন্তু, ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করায় পুলিস এতদিন তার নাগাল পাচ্ছিল না। অবশেষে আটঘাট বেঁধে টানা তিনদিন ধরে শিবুর বাড়ির আশেপাশে নজর রাখে। বুধবার সন্ধ্যায় সে বাড়িতে আসার পরই পুলিস সেখানে হানা দেয়। শিবু পালানোর চেষ্টা করলেও তাকে কার্যত তাড়া করে ধরে ফেলে।
পুলিস জানিয়েছে, শিবু দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় বেকার যুবকদের মোটা মাইনের এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ করে প্রতারণা চক্রটি চালাচ্ছিল। মূলত নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসায়ীদেরই তার মূল টার্গেট ছিল। সস্তায় পাথর, রড, সিমেন্ট দেওয়ার নাম করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছিল। অবশেষে তার কারবারে যবনিকা পড়ল।