হাতে বস্তা, পূর্ব বর্ধমান থেকে এসে বাড়ি, দোকানে চুরি মহিলা গ্যাংয়ের
বর্তমান | ২০ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: এ যেন শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ সিরিজের ‘অদ্বিতীয়া’ গল্পেরই বাস্তব ছবি। রোমর্হষক সেই কাহিনিতে কলকাতা শহরে একদল রুপান্তরকামী পুরুষের মহিলা সেজে মেয়েলি গলায় বাড়ি বাড়ি চুরি, ছিনতাই খুনের কথা বলা হয়েছিল। সম্প্রতি কৃষ্ণনগর শহরে একদল মহিলা গ্যাং ঠিক ব্যোমকেশের ঢংয়েই হাতে বস্তা নিয়ে পাড়ায়, পাড়ায় ঘুরে ফাঁকা বাড়ি, স্কুল, দোকানে ঢুকে পড়ছে। এরপর সুযোগ বুঝে চলছে হাতসাফাই। চুরির কৌশলে এই মহিলারা এতই দক্ষ যে এতদিন সন্দেহের আতশকাচের নীচে তারা আসেনি। তবে কৃষ্ণনগর কোতোয়ালি থানার পুলিসের তৎপরতায় ওই চক্রেরই এক সদস্যা ধরা পড়ে। তারপরই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা গিয়েছে, এই মহিলা গ্যাংটির আমদানি হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের সমুদ্রগড় থেকে। এই চক্রের সদস্যারা দিনের বেলায় শহরের বিভিন্ন প্রান্তে চুরির ঘটনা ঘটাচ্ছে এবং রাতে ফিরে যাচ্ছে নিজেদের এলাকায়। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার ডিএসপি শিল্পী পাল বলেন, ইতিমধ্যেই ওই মহিলা গ্যাংয়ের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত তাদের খোঁজ চলছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৯ মে সকালে কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের কলাভবন থেকে একটি স্ট্যান্ড ফ্যান চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে রেহেনা বিবি নামে এক মহিলা। রেহেনার বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের সমুদ্রগড়ে। ধৃতকে চার দিনের পুলিসি হাজতে নেওয়া হয়। ধৃতের থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি স্ট্যান্ড ফ্যান। পুলিসি জেরায় রেহেনা জানিয়েছে, সে ও তার দলের কয়েকজন মহিলা মিলে কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল থেকে ফ্যান চুরি করেছিল। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের হলঘরে থাকা ১৯টি স্ট্যান্ড ফ্যানের মধ্যে ৯টি উধাও হয়ে যায়।
এই ঘটনার সূত্র ধরে কৃষ্ণনগর কোতোয়ালি থানার পুলিস পূর্ব বর্ধমানের সমুদ্রগড়ে পৌঁছায়। তদন্তে উঠে আসে, সমুদ্রগড়ের এক বস্তি এলাকা থেকেই পরিচালিত হচ্ছে পুরো মহিলা চোরদের এই চক্রটি। প্রতিদিন ভোরে সমুদ্রগড় স্টেশন থেকে শতাধিক মহিলা একসঙ্গে ট্রেনে চেপে বিভিন্ন রেল স্টেশনে নামছে। তাদের মধ্যে অনেকেই নবদ্বীপ ধাম হয়ে কৃষ্ণনগর শহরে এসে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ফাঁকা বাড়ি, স্কুল কিংবা দোকানে ঢুকে হাতসাফাই চালাচ্ছে। এরপর চুরি করা সামগ্রীগুলি কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছে।
এদিকে এই ঘটনার পর কৃষ্ণনগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে পুলিশ। কোনও অচেনা ও সন্দেহজনক মহিলাকে এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখলে বাসিন্দাদের স্থানীয় থানায় জানাতে বলা হয়েছে।