ভিন রাজ্যে বাংলায় কথা বললেই জুটত মারধর, ১০০ দিনের কাজ শুরু হতে চলায় খুশি পরিযায়ী শ্রমিকরা
বর্তমান | ২০ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে বাংলার শ্রমিকদের পড়তে হচ্ছে বিপদের মুখে। বাংলা ভাষা শুনলেই বাংলাদেশি ভেবে মুর্শিদাবাদবাসীকে পুশ করা হচ্ছে সীমান্তের ওপারে। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে এখন বাইরে যাওয়াই আতঙ্কের হয়ে উঠেছে জেলাবাসীর কাছে। শুরু হবে ১০০ দিনের কাজ। নিজের রাজ্যে এমনকী নিজের জেলায় এবার কাজ করতে পারবেন জেনে খুশি জেলার শ্রমিকরা। ফলে ভিনরাজ্যে গিয়ে আর হেনস্তা বা নিগৃহীত হতে হবে না মুর্শিদাবাদের শ্রমিকদের। হাইকোর্টের নির্দেশের পর জেলার বহু পরিযায়ী শ্রমিকের মুখে চওড়া হাসি। সকলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন।
তিন বছর ধরে বন্ধ থাকা ‘মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট অ্যাক্ট’-এ ১০০ দিনের কাজ রাজ্যে চালু করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। ১ আগস্ট থেকে এই প্রকল্প চালু করতে হবে। বুধবার নির্দেশ জারি হওয়ার পর খুশি মুর্শিদাবাদ জেলার প্রান্তিক শ্রমিকরা। মুর্শিদাবাদ জেলার বহু শ্রমিক চেন্নাই, কেরল থেকে শুরু করে দিল্লি, মহারাষ্ট্র সহ বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে যান। ১০০ দিনের কাজ না থাকায় গত তিন বছরে লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক জেলা ছেড়েছেন। বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে তারা কাজ করে এই বাংলায় অর্থ পাঠিয়েছে এতদিন। তবে ১ আগস্ট থেকে ১০০ দিনের কাজ মিলবে বলেই এখন চওড়া হাসি শ্রমিকদের মুখে।
মুর্শিদাবাদ জেলার ভগবানগোলা, লালগোলা, জলঙ্গি, রানিনগর, সাগরপাড়া, বেলডাঙা, সামশেরগঞ্জ, সূতিসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বিভিন্ন রাজ্যে কর্মরত। শ্রমিকরা জানাচ্ছেন, ১০০ দিনের কাজ মিললে জেলায় থেকে আমাদের রুজি রোজগার বাড়বে।
রাজ্যে গত তিন বছর ধরে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে, যা নিয়ে সবথেকে বেশি সরব বাংলার শাসকদল তৃণমূল। কিন্তু এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা কেন্দ্রীয় সরকার আটকে দিয়েছে। অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রের দেওয়া ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে বিস্তর দুর্নীতি হয়েছে। প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বঞ্চিত করে ওই টাকা অন্যদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। এই যুক্তিতেই এ রাজ্যে ১০০ দিনের কাজের বরাদ্দ টাকা আটকে রেখেছিল কেন্দ্র। আদালতে এই মামলা বিচারাধীন। আদালত জানিয়েছে, দুর্নীতি রুখতে রাজ্য সরকারকে যে কোনও শর্ত দিতে পারবে কেন্দ্র। তবে ১০০ দিনের কাজ আবার শুরু করতে হবে। সমগ্র প্রকল্পটিকে বন্ধ করে রাখা যাবে না। এই খবর জানাজানি হতেই খুশি শ্রমিকেরা।
ভগবানগোলার বাসিন্দা স্বপন শেখ বলেন, আমরা ভীষণভাবে আনন্দিত। গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের জেলার বাইরে গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আগে নিয়মিত ১০০ দিনের কাজ করতাম। হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে, তাতে আমাদের এবং আমাদের পরিবারের খুব সুবিধা হবে। নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতাম ভিন রাজ্যে। কর্মক্ষেত্রে গিয়ে আমাদের প্রতি অত্যাচার করা হত। সেটা আর হবে না। বিজেপি শাসিত রাজ্যে গেলে আমাদের বাংলাদেশি বলে অত্যাচার করা হতো। আমাদের আটকে রেখে পুলিসের হাতে তুলে দিয়ে নির্যাতন করত ওরা।
মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা তথা পরিযায়ী শ্রমিক মহম্মদ জামালউদ্দিন বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন করছে। যার ফলে কেন্দ্র সরকার একপেশে নীতি নিয়ে সুবিধা করে উঠতে পারেনি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে কলুষিত করার বরাবর চেষ্টা করে চলেছে কেন্দ্র সরকার। বাংলাকে বঞ্চিত করেছে বারবার। আদালতের এই রায়ের মাধ্যমে আমরা নিজের এলাকায় কাজ পাব।
পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক শারাফ আবেদিন বলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা ভেবে মহামান্য আদালত যে রায় দিয়েছেন, তাকে স্বাগত জানাই। ১ আগস্ট থেকে আশা করি কাজ শুরু হবে। বাংলায় কথা বলার জন্য বিজেপি শাসিত রাজ্যে আমাদের জেলার শ্রমিকদের বাংলাদেশি তকমা দেওয়া হচ্ছে এবং নির্মম অত্যাচার করা হচ্ছে। ১০০ দিনের কাজ শুরু হলে জেলার শ্রমিকরা নিজেদের এলাকায় কাজ করতে পারবে। তাতে শ্রমিকদের বিপদ অনেক কমবে।