• তমলুক সমবায়ের ডিরেক্টর নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব
    বর্তমান | ২০ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: তমলুক টাউন কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটির ডিরেক্টর নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলের মধ্যে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শহর তৃণমূল সভাপতি চঞ্চল খাঁড়াকে জায়গা ছেড়ে দিতে বৃহস্পতিবার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন মনোজকুমার হালদার। দলীয় প্যানেলে নাম থাকার পরও যেভাবে শেষ মুহূর্তে প্যানেলে রদবদল ঘটিয়ে মনোজকে সরে যেতে হল তা নিয়ে একঝাঁক কাউন্সিলার সরব হয়েছেন। এদিন প্রেস মিট ডেকে দলের শহর সভাপতি চঞ্চল খাঁড়ার বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন তাঁরা। 

    তমলুক-ঘাটাল সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন চঞ্চল। তিনি দলের শহর সভাপতি এবং পুরসভার কাউন্সিলারও। ব্যাঙ্কের ৫০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত তমলুক টাউন কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি। ঐতিহ্যবাহী এই সমবায় সমিতির ডেলিগেট নির্বাচনেও শাসক দলের মধ্যে তীব্র ঝামেলা তৈরি হয়েছিল। শহর তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক চন্দন ঘোড়াইকে দল প্রার্থী না করায় নির্দল হিসেব প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। পাশাপাশি তিনি জয়ী হন। 

    ওই সোসাইটির মোট ১২টি ডিরেক্টর পদ। ১৬ ও ১৭ জুন ডিরেক্টর পদে মনোনয়ন ছিল। রাজ্য তৃণমূল সভাপতি সুব্রত বক্সির অনুমোদন করা ১২ জনের তালিকা তমলুকে পাঠিয়েছিলেন দলেরই সমবায় সেলের রাজ্য নেতা আশিস চক্রবর্তী। সেইমতো ১২ জন মনোনয়ন জমা করেন। যদিও প্যানেলে নাম না থাকা সত্ত্বেও শহর তৃণমূল সভাপতি চঞ্চল খাঁড়া মঙ্গলবার মনোনয়ন জমা করেন। ১৮ জুন ফের দলের রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে ১২ জন ডিরেক্টরের আরেকটি লিস্ট পাঠানো হয়। তাতে মনোজকুমার হালদারের নাম কেটে সেখানে চঞ্চল খাঁড়ার নাম ঢোকানো হয়। এই ইস্যুতে সরগরম শহর তৃণমূল কংগ্রেস। মনোনয়ন জমা হয়ে যাওয়ার পর কীভাবে লিস্ট কাটাছেঁড়া হয় তা নিয়েই প্রশ্ন। তাছাড়া, চঞ্চল একটি সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের ভাইস চেয়ারম্যান পদে থাকার পরও তার ৫০০ মিটারের মধ্যে আরেকটি সোসাইটির ডিরেক্টর করার জন্য যেভাবে একজনকে মনোনয়ন তুলতে হল, তা দৃষ্টিকটূ বলে কাউন্সিলারদের বক্তব্য।

    বৃহস্পতিবার তমলুক পুরসভার চেয়ারম্যান তথা দলের জেলা কমিটির চেয়ারপার্সন দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়ের উপস্থিতিতে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন মনোজ। তারপরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তমলুক পুরসভার চার তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলার পার্থসারথী মাইতি, দেবশ্রী মাইতি, অলোক সাঁতরা ও সুব্রত রায়। সঙ্গে ছিলেন ডিরেক্টর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো মনোজও। অলোক বলেন, ‘ডেলিগেট এবং ডিরেক্টর নির্বাচন নিয়ে যা কিছু ঝামেলা হচ্ছে এর সব দায়দায়িত্ব বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্রের। কারণ, এরআগে তাঁর অফিসে চন্দন ঘোড়াইকে ডেলিগেট নির্বাচনে প্রার্থী করা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়নি। মনোজবাবুর নাম রাজ্য থেকে পাঠানোর পরও যেভাবে বাদ দেওয়া হল এর দায়ও সৌমেনবাবুর।’

    এনিয়ে সৌমেন বলেন, ‘আমি ১০ জুন থেকে পারিবারিক অনুষ্ঠান ও তারপর বিধানসভা অধিবেশন নিয়ে ব্যস্ত। শুধুমাত্র ডেলিগেট নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার দায়িত্ব আমার ছিল। সেটা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে। এখন অলোকবাবু যে অভিযোগ তুলছেন তা ভিত্তিহীন। আমার ক্ষমতা থাকলে আগে অলোকবাবুকেই পদ থেকে সরিয়ে দিতাম।’

    মনোজ বলেন, ‘রাজ্যের পাঠানো তালিকায় আমার নাম থাকায় আমি মনোনয়ন জমা করেছিলাম। বুধবার আমাকে জানানো হয়, মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে হবে। দলের শৃঙ্খলা মেনে আমি মনোনয়ন তুলে নিয়েছি। আমি ওই সোসাইটির ডিরেক্টর ছিলাম। পাশাপাশি তমলুক শহরে সমবায় সেলের প্রাক্তন সভাপতি। দলের নির্দেশ মেনেই সরে দাঁড়িয়েছি।’
  • Link to this news (বর্তমান)