নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: টানা বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা-১ ও গড়বেতা-২ ব্লকে। এর ফলে সমস্যায় কয়েকশো গ্রামের মানুষ। জানা গিয়েছে, শীলাবতী নদী উপচে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা । মূলত গড়বেতা-১ ব্লকের ১২টি ও গড়বেতা-২ ব্লকের ৩টি পঞ্চায়েতে ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় বুধবার গভীর রাত থেকেই তৎপর হয় প্রশাসন। এদিন সকাল থেকেই প্লাবিত গ্রামগুলি থেকে মানুষকে উদ্ধার করে রিলিফ ক্যাম্পে রাখা হয়। প্রশাসন তাঁদের জন্য খাবার ব্যবস্থাও করেছে। এদিন প্রায় আড়াই হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়। পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ ফোন করেন জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরিকে। জেলার পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন। জেলাশাসক বলেন, পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। জেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এছাড়া কুইক রেসপন্স টিম, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী কাজ করছে। রাজ্যের তরফেও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। আধিকারিকরা স্পটে গিয়ে মানুষের দেখভাল করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার দিনভর বৃষ্টি হয়। রাত থেকেই শীলাবতী নদীতে জল বাড়তে শুরু করে। গড়বেতা-১ ও গড়বেতা-২ ব্লকের একাধিক সেতু ভেঙে যায়। বিভিন্ন গ্রামে জল ঢুকতে শুরু করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গ্রামে গ্রামে জল ঢুকে যাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ। গড়বেতা-১ ব্লকের বেনাচাপড়া, সন্ধিপুর, শ্যামনগর সহ বিভিন্ন এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি। পাশাপাশি গড়বেতা-১ ব্লকের পিয়াশাল, জোগাড়ডাঙ্গা এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলার বিদ্যুৎদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, তীব্র বজ্রপাত ও ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে জেলাজুড়ে বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছ উপড়ে পড়া বা ডালপালা ভেঙে পড়ার কারণে, হুমগড় সাব-স্টেশনের আমলাসুলি ফিডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া, গড়বেতা-১ এবং গড়বেতা-২ ব্লকের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সতর্কতামূলক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ২০টিরও বেশি ডিটিআর বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পথে নেমেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও। এদিন গড়বেতা-১ এবং গড়বেতা-২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সেবাব্রত ঘোষ ও বরেণ মণ্ডল বলেন, সকাল থেকেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মানুষের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। এদিন কোমর জলে দাঁড়িয়ে উদ্ধারকার্যে সহযোগিতা করেন মহকুমা শাসক মধুমিতা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। কেউ আতঙ্কিত হবেন না।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চন্দ্রকোণা-২ ব্লকেও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। শিলাবতী নদীর জল লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ওই ব্লকের ভগনবন্তপুর-১ এবং ভগবন্তপুর-২ গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চন্দ্রকোণা-২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ জগজিৎ সরকার বলেন, কিছু পরিবারকে নিরাপদ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বহু জায়গায় বাসিন্দারাই বাঁধে মাটি দেওয়ার কাজে নেমে পড়েন।
ঘাটালের মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস জানিয়েছে, গড়বেতা, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়া এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ার কারণেই চন্দ্রকোণায় হঠাৎ করে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে এই মুহূর্তেই আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। প্রশাসন পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে।